আন্দোলনে অংশ না নিয়েও জুলাইযোদ্ধা তালিকায় নাম, প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
Published: 9th, May 2025 GMT
নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আওয়ামী মহিলা লীগের সাবেক এক নেত্রীর মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ করায় তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিবাগত রাতে নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মিনহাজুর রহমান (১৭) নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। সে শহরের বাসাইল এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে।
অভিযুক্ত শাহ আলম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলমের স্বামী। তিনি সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব। শাহ আলম, তার ভাই শাহেদ হোসেনসহ অন্তত ২০ জন হামলা করেন বলে অভিযোগ। তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও স্বজনেরা জানান, ৫ আগস্টের পর জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রস্তুতের সময় আন্দোলনে অংশ না নিয়েও ইভা আলম ও শাহ আলম দম্পতির কন্যা রাইসা আলমের নাম জুলাইযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ভুক্তভোগী মিনহাজসহ নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জুলাইযোদ্ধাদের তালিকায় আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকাভুক্তি ও প্রকৃত যোদ্ধাদের নাম না আসার প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করে। সম্প্রতি বিষয়টি আলোচনায় আসলে জুলাইযোদ্ধাদের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে আহত হিসেবে রাইসা আলম অনুদান পায়নি। এরপর থেকেই, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসছিল ইভা আলম ও শাহ আলম দম্পতির পরিবার।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিতে বন্ধুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজ বাড়ি ফেরার পথে শাহ আলম ও তার ভাই শাহেদ হোসেন দলবল নিয়ে মিনহাজুর রহমান শ্রাবণের ওপর হামলা করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং জুলাইযোদ্ধা সাজিদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘মিনহাজুর রহমান শ্রাবণসহ আমরা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিলেও রাইসা আলম জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। তবু, তার নাম জুলাইযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেকোনোভাবে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য আবেদন করেছি মাত্র। এরপর থেকেই আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত রাতে আমাদের সহপাঠী এবং জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা শ্রাবণকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহ আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নজরুল বলেন, ‘‘এই ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/হৃদয়/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ হ আলম আওয় ম আলম ও
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।