দেশে ফেরার পথে ভারতে গ্রেপ্তার ১৬ বাংলাদেশি
Published: 9th, May 2025 GMT
বাংলাদেশে ফেরার পথে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৬ বাংলাদেশি ও এক ভারতীয় মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সীমান্তের কাছে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ধানতলা বিওপি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় বেশ কিছু মানব পাচারকারীর সহায়তায় বাংলাদেশিরা বিভিন্ন সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। এরপর কাজের খোঁজে দীর্ঘ কয়েক মাস তারা অবস্থান করে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। সম্প্রতি ভারতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের ধরপাকড় শুরু হলে ভয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছিল তারা। এজন্য দক্ষিণ ভারত থেকে ট্রেনে করা কলকাতা আসেন তারা। সেখান থেকে বাসে আসেন নদীয়া। এরপর সীমান্ত পার হওয়ার আগে অবস্থান নেন নদীয়া জেলার ধানতলা থানার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বারানবেরিয়া নিরালা পাড়া এলাকায়। পুলিশ বিষয়টি জানতে পরে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশি ও ভারতীয় মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে গত বুধবার একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জনকে। গত এপ্রিল মাসে একদিনে এই এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রায় ৯০ জন অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিককে। সবমিলিয়ে অবৈধ বাংলাদেশি ধরপাকড় অভিযান চলাকালে বিগত তিন মাসে নদীয়া জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭০ বাংলাদেশিকে।
শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা করে পাঠানো হয় রানাঘাট বিচার বিভাগীয় আদালতে। তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে
শাহেদ/সুচরিতা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান শিক্ষককে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে গাছের মাথায়
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারাকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করে তালা ঝুলিয়েছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতার অনুসারীরা। পরে তার চেয়ারটি ঝুলিয়ে রাখেন গাছের মাথায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দৃশ্য দেখা যায় স্কুলটির সামনে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মঞ্জু মনোয়ারা সমকালকে বলেন, ‘সভাপতি করার জন্য মাইনুল ইসলাম, বকুল ও মামুনুর রশীদ নামের তিনজনের নাম ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। পরে জেলা প্রশাসকের সুপারিশে শিক্ষা বোর্ড ৩ মার্চ মামুনুর রশীদকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেয়। এরপর মাইনুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বিদ্যালয় খোলার পর ৬ মে মিটিং ছিল। সেখানে মাইনুল ইসলামের লোকজন এসে আমার ওপর চড়াও হয়। মাইনুলের ভাই জমসেদ আলী ও বাবা আতর আলীসহ কয়েকজন আমাকে টেনেহিঁচড়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। এতে আমি বেশ আঘাতও পেয়েছি। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে আমার চেয়ার প্রথমে ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর স্কুলের সামনের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে। স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা জানিয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুইটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপির স্থানীয় নেতা মামুন অর রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন।
অন্যদিকে, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাইনুল ইসলাম এই কমিটি মেনে নেননি। তিনি পৌর বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তা গাছের মাথায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর বুধবার প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. আতাউর, বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং বাগধানী গ্রামের মাইনুলের ভাই জমসেদ ও বাবা আতর আলীর নাম রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন অর রশিদ বলেন, মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।
সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, পরিচালনা কমিটির সভায় দুপক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।