ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে: আইন উপদেষ্টা
Published: 10th, May 2025 GMT
ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) এর ওপর একটি মতবিনিময় সভায় আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে। ‘ফরহাদ (ফরহাদ মজহার) ভাই, বারবার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের কথা বলেছেন। ট্রুথ জাস্টিস কমিশন অথবা ট্রুথ রিকনসিলিয়েশন কমিশনের খুব দরকার আছে। এটা সম্ভবত আমাদের দেশে ১৯৭২ সাল থেকে থাকলেই ভালো হতো। আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই। .
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘যে যুবক বেড়ে উঠেছে আল্লাহর ইবাদতে’
কিয়ামতের দিন সূর্য মাথার ওপর এসে ঝুলবে, এক মাইল দূরে। ঘামে ডুবে যাবে মানুষ। কারো ঘাম কোমর পর্যন্ত, কারো গলা পর্যন্ত, কারো মুখ চেপে ধরবে ঘামের লাগাম। সেদিন কোনো ছায়া থাকবে না, আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া।
আর সেই ছায়ায় স্থান পাবে সাত শ্রেণির মানুষ। তাদের মধ্যে একজন হলো সেই যুবক, যে বেড়ে উঠেছে আল্লাহর ইবাদতে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, “সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ সেদিন নিজের ছায়ায় স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।” তাদের মধ্যে একজন: “এক যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে বেড়ে উঠেছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৬০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭৩)
আদম সন্তান সবাই ভুল করে, আর ভুলকারীদের মধ্যে সেরা যারা তওবা করে।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯‘আরশের ছায়া’ মানে আল্লাহর বিশেষ কৃপা ও সম্মান। অন্য হাদিসে এসেছে, আল্লাহর পথে ভালোবাসার মানুষেরাও সেই ছায়ায় থাকবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২১৭৫)
সাত শ্রেণি মানে সীমাবদ্ধতা নয়। অন্য হাদিসে এসেছে, যে ঋণগ্রস্তকে সময় দেয় বা ঋণ মওকুফ করে, তাকেও আল্লাহ সেদিন ছায়া দেবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৭৩৮)
অর্থাৎ যে কোনো ভালো কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হলে ছায়ার অধিকারী হতে পারে।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে বয়োজ্যেষ্ঠদের যত্ন নিতেন২৯ জুলাই ২০২৫কিন্তু যুবককে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কেন?
যৌবন মানে শয়তানের খেলার মাঠ। রক্ত গরম, প্রবৃত্তির তাড়নায় উথাল-পাথাল, দুনিয়ার ঝড়ে মন দুলে যায়। বন্ধুর ডাকে, প্রেমের টানে, খেলার মাঠে, রাত জাগা আড্ডায় যুবকের পা সহজেই হড়কে যায়।
ঠিক এই বয়সেই যে আল্লাহর ইবাদতে লেগে থাকে, নামাজে দাঁড়ায়, কোরআন পড়ে, পাপ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তার ইমান যে কতটা মজবুত তা আল্লাহ ছাড়া আর কে জানে?
যে যুবক পাপ করেছে, তওবা করেছে, আবার দাঁড়িয়েছে, আবার পড়েছে, আবার উঠেছে—সে-ও এই ছায়ার অধিকারী হতে পারে। মূল কথা হলো, তার জীবনের বড় অংশ যেন ইবাদতের রঙে রঙিন হয়।মুবারকপুরী (রহ.) বলেন, “যে যুবক ইবাদতে বেড়ে উঠেছে, অর্থাৎ শৈশব থেকেই সে গুনাহের পরিবর্তে ইবাদতকে বেছে নিয়েছে—তার পুরস্কার আরশের ছায়া। কারণ সে নিজেকে সারা জীবন আল্লাহর নাফরমানি থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে।” (তুহফাতুল আহওয়াযী, ২/৩১৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯০)
এর মানে এই নয় যে, এই যুবক জীবনে একটি পাপও করেনি। না। নবী ছাড়া কেউ নিষ্পাপ নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “আদম সন্তান সবাই ভুল করে, আর ভলকারীদের মধ্যে সেরা যারা তাওবা করে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, “শপথ আল্লাহর, তোমরা যদি পাপ না করতে, আল্লাহ তোমাদের তুলে নিয়ে এমন জাতি আনতেন যারা পাপ করবে, তারপর তওবা করবে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৯৩৮)
তাই যে যুবক পাপ করেছে, তওবা করেছে, আবার দাঁড়িয়েছে, আবার পড়েছে, আবার উঠেছে—সে-ও এই ছায়ার অধিকারী হতে পারে। মূল কথা হলো, তার জীবনের বড় অংশ যেন ইবাদতের রঙে রঙিন হয়। যৌবনের উন্মত্ততার মধ্যেও যেন তার হৃদয় আল্লাহর দিকে ঝুঁকে থাকে।
আরও পড়ুননবীজী (সা.)–এর তরুণ বয়সের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫সূর্য মানুষের এত কাছে চলে আসবে যে মাত্র এক মাইল দূরে থাকবে। মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবে যাবে—কারো গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কাউকে ঘাম লাগাম পরিয়ে দেবে।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৬৮সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা ভাবুন। পঞ্চাশ হাজার বছর লম্বা দিন (সুরা মা’আরিজ, আয়াত: ৪)। কিশোর মাথার কাঁচা চুল পেকে সাদা হয়ে যাবে (সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ১৭)। সূর্য এত কাছে আসবে যে ঘামে মানুষ ডুবে যাবে।
মিকদাদ ইবন আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “সূর্য মানুষের এত কাছে চলে আসবে যে মাত্র এক মাইল দূরে থাকবে। মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবে যাবে—কারো গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কাউকে ঘাম লাগাম পরিয়ে দেবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৬৮)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন ঘাম সত্তর হাত মাটির নীচে চলে যাবে (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৩২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৮৬৫)
সেই দিন একটুখানি ছায়া পাওয়া যদি সৌভাগ্য হয়, তবে আরশের ছায়া কত বড় পুরস্কার!
তাই আজকের যুবকের জন্য এই হাদিস এক জ্বলন্ত আহ্বান। তুমি যদি যৌবনে আল্লাহকে দাও, আল্লাহ তোমাকে কিয়ামতে দিয়ে দেবেন এমন ছায়া যার নিচে রাজা-বাদশাহও দাঁড়াতে পারবে না। ফজরের আজানে ওঠা, চোখের পাহারা দেওয়া, জিহ্বাকে নিষিদ্ধ কথা থেকে বাঁচানো, হাতকে অন্যায় স্পর্শ থেকে রক্ষা করা—এসবই যৌবনের ইবাদত।
আজ যদি একটু কষ্ট হয়, কাল সেই কষ্টই শীতল ছায়া হয়ে ফিরে আসবে। যে যুবক আজ মসজিদের পথে হাঁটে, কাল সে আরশের ছায়ায় হাঁটবে। যে আজ দুনিয়ার ঝড়ে নিজেকে আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়, আল্লাহ কাল তাকে নিজের ছায়ায় তুলে নেবেন।
আল্লাহ আমাদের যৌবনকে কবুল করুন, আমাদের যৌবনকে ইবাদতের বসন্ত বানান, আর কিয়ামতের দিন আমাদের আরশের ছায়ায় স্থান দিন। আমিন।
আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫