পাকিস্তান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবছে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির কোনো বৈঠক হয়নি বা হবে বলেও নির্ধারিত নেই। 

ভারতের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা ও উত্তেজনার মধ্যে আজ শনিবার জিও নিউজকে তিনি এ কথা বলেন।

খাজা আসিফ বলেন, ‘বিশ্বকে বলতে চাই যে (তেমন পরিস্থিতি হলে) তা কেবল অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না, আরও বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে। ভারত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তাতে আমাদের হাতে বিকল্প সীমিত হয়ে আসছে।’

এদিকে আরি টিভিকে দেওয়া খাজা আসিফের মন্তব্য তুলে ধরেছে রয়টার্স। সেখানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যেটার কথা বলছেন (পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার), সেটা তো হাতে রয়েছেই— কিন্তু চলুন আমরা সেটা নিয়ে কথা না বলি। আমরা এটাকে খুব দূরবর্তী একটা সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনা করি; বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা নিয়ে আলোচনা করাও ঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘ওই পর্যায়ে যাওয়ার আগে আমার মনে হয়, উত্তেজনা কমে আসবে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির কোনো বৈঠক হয়নি, এমন কোনো বৈঠক ডাকাও হয়নি।’

এদিকে আজ শনিবার দুপুরে কয়েকটি পাকিস্তানি ও ভারতীয় গণমাধ্যম দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তা পর্যায়ে ফোনে কথা হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানান, তারা জানামতে এমন কোনো আলাপচারিতা হয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নানা দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু আমার জানামতে ভারতের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এখনও সরাসরি কোনো কথা হয়নি। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এ ব্যাপারে আপনাদের আপডেট জানাতে পারবেন।’

ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটিতে পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ নেতারা থাকেন, তারাই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতের বিরুদ্ধে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ, যার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’।

এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডেকেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়। তবে রয়টার্স পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য চেয়েও কোনো সাড়া পায়নি।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ১৯৯৯ সালের পর হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাত এরই মধ্যে উভয় পক্ষে কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র বারবার নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, শনিবার তাদের সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ও যুক্ত হয়েছে।

একইদিন পাকিস্তান জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর গোলায় আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে অন্তত ১৩ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। শুরু থেকে এই হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায় ভারত। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে। ওই ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে দেশ দুটি। এমন উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে শুক্রবার রাত থেকে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ শুরু করেছে।

এমন অবস্থার মধ্যে আজ শনিবার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন ত র পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলে যে সংবাদগুলো আমাদের সবচেয়ে বেশি বিচলিত করে, তা হলো হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও নৃশংস সব অপরাধের খবর। সাধারণ মানুষের মনে আজ এক বড় প্রশ্ন—আইনশৃঙ্খলা কি কেবলই কিতাবি বুলি? অপরাধীরা কেন দিন দিন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের সমাজের গভীরে প্রোথিত বেশ কিছু কারণ উঠে আসে। অপরাধীদের এই ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার পেছনে কেবল একটি কারণ দায়ী নয়, বরং এটি একটি বহুমুখী সংকটের সমষ্টি।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দীর্ঘসূত্রতা

অপরাধীদের বেপরোয়া হওয়ার প্রধান কারণ হলো ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’। যখন একজন অপরাধী দেখে, গুরুতর অপরাধ করেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সহজেই বেরিয়ে আসা যায়, তখন তার সাহস বহুগুণ বেড়ে যায়। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার নজির সমাজে এতটাই প্রবল যে সাধারণ মানুষ বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে। বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকা এবং সাক্ষীর অভাবে বিচার না হওয়া অপরাধীদের জন্য একধরনের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ হিসেবে কাজ করে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও পেশিশক্তির দাপট

আমাদের সমাজব্যবস্থায় অপরাধ ও রাজনীতির এক অশুভ আঁতাত লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। যখন কোনো অপরাধী জানে যে তার মাথার ওপর ‘বড় ভাই’ বা ‘গডফাদার’-এর হাত আছে, তখন সে পুলিশ বা প্রশাসনকে তোয়াক্কা করে না। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলদারি এখন ওপেন সিক্রেট। এই ক্ষমতার দম্ভই তাদের বেপরোয়া করে তোলে।

সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়

আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, যদি না সমাজের মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত থাকে। বর্তমানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমরা এক চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং সন্তানদের ওপর নজরদারির ঘাটতি কিশোর অপরাধ বা ‘কিশোর গ্যাং কালচার’ তৈরির মূল কারণ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে, সমাজে সহনশীলতা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার

অপরাধ জগতের জ্বালানি হলো মাদক। দেশের আনাচকানাচে মাদকের সহজলভ্যতা যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই অনেকে ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি খুনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, ফলে তার পক্ষে যেকোনো নৃশংস কাজ করা সম্ভব হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা

পুলিশ বা প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় জনবলসংকট, পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। আবার রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তখন অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়।

এই অন্ধকার পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

আইনের সুশাসন: অপরাধী যে–ই হোক, তার রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় বিবেচনা না করে দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশি সংস্কার: পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে একটি জনবান্ধব ও স্বাধীন সত্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সামাজিক প্রতিরোধ: পাড়া-মহল্লায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক সময় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

কর্মসংস্থান: বেকারত্ব অপরাধের অন্যতম কারণ। যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।

আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি কোনো একক গোষ্ঠীর সমস্যা নয়, এটি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সংকট। অপরাধীরা যখন বেপরোয়া হয়, তখন সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত হয়। একটি নিরাপদ, সুন্দর ও ভীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কেবল এক অরাজকতার রাজ্য রেখে যাব। এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর।

হেনা শিকদার দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি: অপরাধীরা কেন এতটা বেপরোয়া