শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় আটটি ব্র্যান্ডের ১৩৮৬ বোতল মদ জব্দ করেছে পুলিশ।
শনিবার (১০ মে) ভোরে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মদ জব্দ করা হয়।। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। জব্দকৃত মদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জে ডাকাতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
ঝিনাইদহে ট্রলির ধাক্কায় শিশু নিহত, মা হাসপাতালে
ঢাকা/তারিকুল/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণখেলাপিদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি
বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলা গোষ্ঠীর সমন্বয়ে যে স্বজনতোষী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তার সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছিল ব্যাংক খাত। সরকারঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দুর্নীতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যে বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছিল, তার বড় একটা অংশ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানে এই গোষ্ঠীর অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলে গেছে। ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ হওয়ার তথ্য সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য বলছে, গত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য বিকৃত করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম করে দেখাত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার নির্ধারণ করার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করায় খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। খেলাপি ঋণের সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় প্রভিশনের ঘাটতিও বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। খেলাপি ঋণের সংকটকে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অর্থনীতি থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। গত কয়েক দশকে একদিকে রাজনীতিতে ক্রমে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য বেড়েছে, অন্যদিকে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারগুলোর আমলে খেলাপি ঋণ আলোচনার একটি বড় কেন্দ্রবিন্দু থাকা সত্ত্বেও সরকারি নীতি বরং ঋণখেলাপিদের পক্ষে কাজ করেছে। বারবার ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে দেশে খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। ২০১১ সালে খেলাপি ঋণের হার কমে ৬ দশমিক ১ হয়। এর পর থেকে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, হল–মার্ক গ্রুপসহ সরকারঘনিষ্ঠ আরও অনেক গ্রুপের কেলেঙ্কারির কারণে খেলাপি ঋণের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার এসে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করার উদ্যোগ নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক, কেননা এতে ব্যাংক খাতের প্রকৃত রুগ্ণ চিত্র উঠে আসছে।
খেলাপি ঋণের সঙ্গে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সম্পর্কটা অত্যন্ত নিবিড়। বাংলাদেশের সব ব্যাংকেই কমবেশি খেলাপি গ্রাহক থাকলেও বিদেশি ব্যাংকে কম, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে বেশি। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের দায়ও অনেকখানি। এর মধ্যে চারটি ব্যাংকই হাসিনাঘনিষ্ঠ এস আলমের মালিকানাধীন এবং নামে-বেনামে এই গোষ্ঠী তাদের ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয়, যা এখন খেলাপি।
বিগত সরকার কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার পেছনে ব্যাংক লোপাট করা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর দায় কোনো অংশে কম নয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে অন্তর্বর্তী সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ে এখন পর্যন্ত জোরালো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয় নেই। অথচ প্রয়োজনীয় সংস্কার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ ছিল।
শীর্ষ ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক মইনুল ইসলামের প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপিদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাবকে আমরা যথার্থ বলে মনে করি। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই আমরা আশা করি।