শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় আটটি ব্র্যান্ডের ১৩৮৬ বোতল মদ জব্দ করেছে পুলিশ।
শনিবার (১০ মে) ভোরে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া রাবার বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মদ জব্দ করা হয়।। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। জব্দকৃত মদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জে ডাকাতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
ঝিনাইদহে ট্রলির ধাক্কায় শিশু নিহত, মা হাসপাতালে
ঢাকা/তারিকুল/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পরোপকারী দম্পতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী
গ্রামের শিক্ষাবিস্তারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়। সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসরে যান তিনি। জীবনের দীর্ঘ সময়ে তাঁর সঙ্গে কারও তেমন কোনো ঝগড়া হয়নি। এলাকাবাসীর বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করায় বাড়ির বাইরে থাকতেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে থাকতেন তিনি। সেই বাড়িতেই গতকাল শনিবার নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না এলাকাবাসী।
পুলিশ বলছে, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশের মাথার পেছনে ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের কপালে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে। তিনি উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে ২০১৭ সালে অবসরে যান। তাঁর বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় র্যাবে ও ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন।
যোগেশের বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাবার সঙ্গে কখনো কারও ঝগড়া হয়নি। আমরা চাকরি করি, বাইরে থাকি। এক বছর আগে বাবা গ্রামের শ্মশানে ৮ শতক জমি দান করেন। এটা কিছু লোক সাপোর্ট করেননি। আমার বাবা-মা আর কদিন বাঁচতেন? তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, গতকাল শনিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশের সঙ্গে কথা হয় যোগেশের। আজ সকালে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় বাড়িতে কাজে এসে প্রধান ফটকে ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে প্রধান ফটকের ওপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে খাবারঘরে যোগেশ চন্দ্রের ও রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী দীপক চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে কাজ করতে যোগেশ দাদুর বাড়িতে যাই। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খুলিতে ধানের কাজ করি; কিন্তু এত বেলা হয়ে গেলেও কেউ বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ডাকি। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। এরপর আশপাশের লোকজন ডেকে মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি, ঘরে কেউ নেই। পরে ডাইনিং রুমের দরজা খুলে দেখি, দাদুর লাশ আর রান্নাঘরে দিদার লাশ পড়ে আছে।’
খবর পেয়ে প্রথমে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পিবিআই ও র্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া রংপুর-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ও জামায়াতের প্রার্থী এ টি এম আজহারুল ইসলাম, তারাগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর বাড়িতে যান।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, ‘বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ ও তাঁর স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এখন নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের নিরাপত্তা চাই। যারা যোগেশ ও তাঁর স্ত্রীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর আন্দোলনে যাব।’
আরও পড়ুনরংপুরে নিজ বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার৯ ঘণ্টা আগেকুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় অত্যন্ত বিনয়ী পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তাঁরা জীবনের শেষ অধ্যায়ে পা দিয়েছেন। অথচ তাঁকে ও তাঁর সহধর্মিণীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যোগেশ চন্দ্র রায়ের মাথার পেছনে ও সুবর্ণা রায়ের কপালে কোপের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, চায়নিজ কুড়াল অথবা রামদা দিয়ে মারা হয়েছে। চায়নিজ কুড়াল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখে তাঁরা তদন্ত করছেন। খুব দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘চুরি-ডাকাতির কোনো লক্ষণ নেই। টাকাপয়সা বা গয়না তেমন ছিল না বলে পরিবার জানিয়েছে। গেটে তালা দেওয়া ছিল। পুরো বাড়ির তিন দিকে ঘর, একদিকে প্রাচীর। উত্তর দিকে প্রাচীর টপকে ঘাতকেরা ভেতরে ঢোকে। সেখানে পায়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’