চারদিকে সবুজ মাঠ। মাঝখানে কর্মমুখর একটি গ্রাম বাহাদুরপুর। কয়েক বছর আগেও গ্রামটির অনেক পরিবারে আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। নারীদের ঘরে বসে অলস সময় কাটত। দরিদ্র পরিবারের নারীরা আয়ের পথ খুঁজে পাওয়ায় সেই চিত্র এখন অনেকখানিই বদলেছে। এই সুযোগ করে দিয়েছেন সাবিনা বেগম। সবার কাছে তিনি প্রিয় ‘সাবিনা আপা’।

কুটিরশিল্পের ১৬ ধরনের কাজে পটু সাবিনা পরিশ্রম করে শুধু নিজের ভাগ্য বদল করেননি, গ্রামের অনেক দরিদ্র নারীকে নকশার কাজ শিখিয়ে আর্থিক উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর সহায়তায় সুই–সুতা দিয়ে কাপড়ে নকশা তুলে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার অন্তত ২০০ নারী দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে। সংসারে এনেছেন সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য। প্রায় প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠে সাবিনা বেরিয়ে পড়েন। কাজ নিয়ে ছুটে চলেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফেরেন। সেখানে হাতের কাজ শেখান দরিদ্র নারীদের।

স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মহিলা সদস্য ববিতা বেগম বলেন, বাহাদুরপুর গ্রামে আগে কলহবিবাদ লেগেই ছিল। নারীরাও সব সময় ঝগড়া করতেন। এখন তাঁরা মিলেমিশে নকশা তোলার কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। এ অবদান সাবিনার। তাঁর হাত ধরে নারীরা যেভাবে আয় করার পথ খুঁজে পেয়েছেন, অন্য এলাকার নারীরাও তাঁদের দেখে অনুপ্রেরণা পাবেন।

সুই–সুতার সুনিপুণ কারুকাজ

উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরপুর গ্রাম। কাঁচা-পাকা সড়ক পেরিয়ে গ্রামে ঢোকার মুখে সবুজ ফসলের মাঠ। মাঠের ওপারের গ্রামের বাড়িগুলোর উঠানে বসে সুই–সুতা দিয়ে কাপড়ে নকশা তোলার কাজে ব্যস্ত নারীরা। গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা বেগমের উঠানে দেখা গেল, বড় বড় জমায়েত। ২০–২৫ জন নারী পাটি পেতে বসে নকশা তুলছেন। কারও হাতে শাড়ি, কারও হাতে পাঞ্জাবি, কারও হাতে লেহেঙ্গা। সাধারণ একটি কাপড় সুই–সুতার সুনিপুণ কারুকাজে হয়ে উঠছে অসাধারণ।

সাবিনা বেগমও তাঁদের কাজে সহযোগিতা করছেন। কেউ কোথাও আটকে গেলে কাছে গিয়ে শিখিয়ে দিচ্ছেন। কাজের ফাঁকে উঠানের আমগাছের তলায় বসে নারীদের ভাগ্য বদলের গল্প শোনালেন সাবিনা।

বউয়ের স্বপ্ন, শাশুড়ির সহযোগিতা

সাবিনা বেগম বেড়ে উঠেছেন ঢাকার মিরপুরে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। ২০০৪ সালে এইচএসসি পাসের পর ২০০৬ সালে পীরগঞ্জের বাহাদুরপুর গ্রামের মমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখন দুজনই বেকার। সাবিনার পরামর্শে পীরগঞ্জ বাজারে বইয়ের দোকান দেন মমিনুল। সাবিনা শুরু করেন টিউশনি; কিন্তু গ্রামে নারীদের ওপর অকারণে নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও পারিবারিক কলহ নাড়া দেয় সাবিনার চিন্তাকে। এরপর গ্রামের নারীদের সবাইকে নিয়ে কিছু একটা করার কথা ভাবেন তিনি।

বিষয়টি শুনে সাবিনার শাশুড়ি মনোয়ারা তাঁকে উৎসাহ দেন। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে সাবিনাকে নিয়ে পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামে আত্মীয় সাইফুল ইসলামের বাড়িতে যান মনোয়ারা। সেখানে নারীদের নকশার কাজ করে জীবন বদলের চিত্র দেখে সাবিনা মুগ্ধ হন।

শাশুড়ি মনোয়ারার পরামর্শে ২০১৮ সালে সাবিনা পীরগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন কার্যালয় থেকে হস্তশিল্পের পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। তিনি সেই প্রশিক্ষণ দেন শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমসহ গ্রামের পাঁচ নারীকে। শাশুড়ির গাভি আর ছাগল বিক্রির ৮৫ হাজার টাকায় বাড়ির একটি কক্ষে পুরোদমে সেলাই ও হাতের কাজ শুরু করেন সাবিনা। ধীরে ধীরে কাজের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে তাঁর বাড়িতে আসেন ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। ঢাকায় কয়েকটি কাপড়ের শোরুম আছে তাঁর। তিনি সাবিনাকে ঢাকায় নিয়ে যান। স্থানীয় এজেন্ট মনোনীত করে তাঁর হাতে তুলে দেন শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি–পিস ও কাঁথায় নকশা করার সরঞ্জাম। মান ভালো হওয়ায় বাড়তে থাকে কাজের পরিমাণ। ধীরে ধীরে তিনি গ্রামের অন্য নারীদের যুক্ত করেন এই কাজে।

২৫ জন দিয়ে শুরু

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের ২৫ জন দরিদ্র নারীকে নিয়ে সাবিনা গঠন করেন বাহাদুরপুর ব্যাপারীপাড়া কুটিরশিল্প সমিতি। তিনি সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নকশা ও কারচুপির কাজ দেন। সমিতির বাইরে থাকা গ্রামের গৃহবধূরাও তাঁর কাছে ছুটে আসেন কাজ শিখতে। সাবিনা তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে এসব গৃহবধূ দুই শতাধিকে পৌঁছেছে।

কারিগরেরা লেহেঙ্গায় নকশা করার জন্য ৬০০ টাকা, শাড়িতে ৭০০ টাকা, পাঞ্জাবি ও থ্রি–পিসে ৫০০ টাকা করে মজুরি পান। সাবিনা প্রতিটি কাজের জন্য কমিশন পান ৭০ টাকা। এই আয়ের টাকায় আবাদি জমি ও পাকা বাড়ি করেছেন। কিনেছেন মোটরসাইকেল। হাঁস-মুরগি ও গাভি পালন করছেন। গাছপালায় ঘেরা বাড়িতে দুই ছেলে-মেয়ে, স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে সুখের সংসার তাঁর।

স্বাবলম্বী অন্য নারীরাও

সাবিনা বেগমের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সুই–সুতার কাজ করে এলাকার অনেক নারী এখন স্বাবলম্বী। তাঁদের কেউ মাসে পাঁচ হাজার, আবার কেউ ৯ হাজার টাকা আয় করছেন। ধুলগাড়ী গ্রামের হাফিজা খাতুন (২৭) তাঁদের মধে৵ একজন। তিনি বলেন, ১৪ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। আগে ভূমিহীন স্বামীর আয়ে সংসার চলত না। এখন তাঁর আয়ে সংসার চলছে, স্বামীর আয় জমা থাকছে। ৯ শতক জমি কিনেছেন। খড়ের ঘরের জায়াগায় তুলেছেন টিনের ঘর। হাঁস-মুরগি, গরু–ছাগলও পালেন।

কৃষিকাজ করে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে কঠিন লড়াই করতে হতো গ্রামের মিজানুর রহমানকে। এখন তাঁর দুই মেয়ে শিল্পী খাতুন ও তামান্না আক্তার নকশার কাজ করে নিজেদের পড়ার খরচ চালিয়েও প্রতি মাসে দুই–তিন হাজার টাকা জোগান দেয় বলে জানালেন তিনি।

গ্রামের বাসিন্দা সানজিদা বেগম জানান, তিন বছর আগে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে সাবিনা তাঁকে নকশা তোলার প্রশিক্ষণ দেন। এখন মাসে তাঁর আট হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন গরিব মেয়েরা সাবিনার কাজে যুক্ত হয়ে অলস সময় কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকে পেশা হিসেবেও গ্রহণ করায় দিন দিন এর প্রসার ঘটছে।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, দরিদ্র নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সাবিনা। তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহজ শর্তে ঋণও দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্যদেরও এগিয়ে নিচ্ছেন।

শ্বশুরবাড়ির লোকজন ইতিবাচকভাবে নেওয়ার কারণে কাজ করা সহজ হয়েছে বলে মনে করেন সাবিনা বেগম। স্বামীর উৎসাহ আর শাশুড়ির সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে সাবিনা বলেন, ‘এখন আমার একটিই স্বপ্ন—নারীদের জীবনে দুঃখ মোচন করা। এ জন্য পীরগঞ্জ সদরে বড় একটি পোশাক কারখানা করব। পুরো উপজেলার নারীদের সংগঠিত করে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা দেব। তাঁরা সংসারে খরচ জোগাতে অবদান রাখবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দর দ র ন র স ব বলম ব র ক জ কর উপজ ল র প রগঞ জ মন য় র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এ সপ্তাহের রাশিফল (১৬-২২ আগস্ট)

সাফল্য লাভের জন্য কর্ম যথেষ্ট নয়। দরকার সঠিক কর্মকৌশল, সহনশীলতা এবং কিছু বিষয়ে সচেতনতা। আর তাতেই আপনি জীবনের প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তর করতে পারবেন।

পাশ্চাত্য রাশিচক্রমতে চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহগত অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন রাশির জাতক-জাতিকাদের নানা বিষয়ের শুভাশুভ পূর্বাভাস ও সতর্কতা জানাচ্ছেন জ্যোতিষশাস্ত্রী ড. চিন্ময় চৌধুরী মিথুন।

মেষ রাশি (২১ মার্চ-২০ এপ্রিল): মানসিকভাবে পজিটিভ থাকুন। আর্থিক সফলতা পাবেন। পেশাগত উন্নতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ধীরস্থির থাকুন। শারীরিক সুস্থতা নিয়ে টেনশন বাড়বে।

আরো পড়ুন:

এ সপ্তাহের রাশিফল (৯-১৫ আগস্ট)

এ সপ্তাহের রাশিফল (২-৮ আগস্ট)

বৃষ রাশি (২১ এপ্রিল-২১ মে): কাজে বিরক্তি বোধ করবেন। অকারণে অর্থ খরচ হবে। মেজাজ চড়া থাকতে পারে। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। আর্থিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ শুভ। সামাজিক কাজে ব্যস্ততা থাকবে। বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। মনের কোনো আশা পূরণ হতে পারে।

মিথুন রাশি (২২ মে-২১ জুন): গবেষণামূলক কাজে সফলতা পাবেন। অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর্থিক লেনদেনে সফলতা পাবেন। কর্মে পরিপূর্ণতা পাবেন। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সফলতা পাবেন।

কর্কট রাশি (২২ জুন-২৩ জুলাই): এ সপ্তাহটি আপনার জন্য বেশ সম্ভাবনাময়। আর্থিক দিক খুব ভালো যাবে। প্রতিদিন অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারবেন। পারিবারিক ও কর্মজীবনে সুনাম বৃদ্ধি পাবে। কর্মক্ষেত্রে পজিটিভ থাকুন।

সিংহ রাশি (২৩ জুলাই-২৩ আগস্ট): পেশাগত কাজে সফলতা পাবেন। মনের জোর ও প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়বে। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভের সম্ভাবনা আছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।

কন্যা রাশি (২৪ আগস্ট-২৩ সেপ্টেম্বর): দ্বিধাদ্বন্দ্ব বাড়বে। ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে নানামুখী চাপে থাকতে পারেন। দাম্পত্য ক্ষেত্রে মানিয়ে চলতে হবে। অপ্রত্যাশিত কারণে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

তুলা রাশি (২৪ সেপ্টেম্বর-২৩ অক্টোবর): আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পারিবারিক শান্তি বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক কাজে ব্যস্ততা বাড়বে  ব্যবসায়িক ও পেশাগত কাজে সফলতা পাবেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা  নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

বৃশ্চিক রাশি (২৪ অক্টোবর-২২ নভেম্বর): বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় আপনার জন্য শুভ নয়। আর্থিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ শুভ। কোনো বন্ধুর সহযোগিতা পেতে পারেন। উদারতার কারণে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। রোমাঞ্চ শুভ। রাজনীতি ও জনসংযোগ কাজে সফলতা পাবেন। এ সপ্তাহে নানামুখী চাপে থাকতে পারেন।

ধনু রাশি (২৩ নভেম্বর-২১ ডিসেম্বর): প্রেমে দূরত্ব বাড়বে। ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য বেশ ভালো সময়। শারীরিক বিষয় নিয়ে সমস্যা হতে পারে। নিজের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অর্থ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

মকর রাশি (২২ ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি): যেকোনো সূত্র থেকে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য আনন্দদায়ক হবে। অপ্রত্যাশিত ব্যয় বাড়তে পারে। মেজাজ চড়া থাকতে পারে। বিদেশ সংক্রান্ত যোগাযোগ শুভ। একান্ত প্রয়োজন না হলে কোনো চুক্তি করবেন না।

কুম্ভ রাশি (২১ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি): পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো যাবে। পারিবারিক ক্ষেত্রে মানিয়ে চলা কঠিন হতে পারে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য আনন্দদায়ক হবে। আর্থিক লেনদেনে সতর্ক হতে হবে। অতিরিক্ত আবেগ বা হীনমন্যতা দাম্পত্য ও পারিবারিক শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারে। গোপন শত্রুদের তৎপরতা বাড়বে।

মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ): নতুন কোনো কাজের পরিকল্পনায় সাফল্য লাভ করবেন। কর্মক্ষেত্রে নানামুখী চাপের সম্মুখীন হবেন। পারিবারিক ও বিবাহিত জীবনে ভুল বুঝাবুঝি ও মানসিক দূরত্ব দূর হতে পারে। 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ