গণিতে দুর্বল, ইংরেজিতে লেটার, কোহলির ১০ম শ্রেণির মার্কশিট ভাইরাল
Published: 18th, May 2025 GMT
বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের খবরে যখন দুঃখে ভেঙে পড়েছেন অগণিত ভক্ত, ঠিক তখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে তার স্কুলজীবনের একটি পুরনো মার্কশিট। সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে তার ২০০৪ সালের দশম শ্রেণির সিবিএসই পরীক্ষার মার্কশিট।
ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) ২০২৫ সালের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কিছুদিন আগেই। আর সেই সময়টাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফের ছড়িয়ে পড়ে কোহলির দুই দশক আগের মার্কশিট। যদিও এই মার্কশিট প্রথম আলোচনায় এসেছিল ২০২৩ সালে, আইএএস কর্মকর্তা জিতিন যাদবের একটি পোস্টের মাধ্যমে। এবার তা নতুন করে ভাইরাল হয়েছে, বিশেষ করে কোহলির টেস্ট থেকে বিদায়ের আবহে।
ভাইরাল হওয়া মার্কশিট অনুযায়ী, কোহলি দশম শ্রেণির পরীক্ষায় মোট ৬০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছিলেন ৪১৯। ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও হিন্দি বিষয়ে তার পারফরম্যান্স ছিল তুলনামূলক ভালো। ইংরেজিতে ৮৩, সমাজবিজ্ঞানে ৮১ এবং হিন্দিতে ৭৫। তবে গণিতে মাত্র ৫১, বিজ্ঞান ও টেকনোলজিতে ৫৫ এবং প্রাথমিক তথ্যপ্রযুক্তিতে ৭৪ নম্বর পেয়েছিলেন কোহলি।
Had marks been the sole factor, the entire nation wouldn't be rallying behind him now.
Passion and Dedication are the key. @imVkohli pic.twitter.com/aAmFxaghGf — Jitin Yadav (@Jitin_IAS) August 9, 2023
এই মার্কশিট শেয়ার করে আইএএস কর্মকর্তা যাদব লিখেছিলেন, ‘যদি কেবল নম্বরই জীবনের মানদণ্ড হতো, তবে আজ গোটা দেশ কোহলির পাশে দাঁড়াত না। সাফল্যের আসল চাবিকাঠি হলো প্যাশন এবং ডেডিকেশন।’
তার এই বার্তায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, ‘কোহলির সঠিক মার্কশিটের সঙ্গে ছিল নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়, এই ফর্মুলাই তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।’
আরও একজন লেখেন, ‘সফলতা কখনও কেবল গণিত কিংবা বিজ্ঞানের নম্বরে সীমাবদ্ধ নয়।’ অন্য একজন যোগ করেন, ‘নম্বর তো শুধু কাগজের কিছু সংখ্যা। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার আসল মূল্য নির্ধারণ হয় চেষ্টা, একাগ্রতা ও আত্মসমর্পণের মানসিকতা দিয়ে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র ট ক হল ক হল র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ