অ্যান্ড্রয়েডে অ্যাপ সাইডলোড করা কি এখন আর নিরাপদ, কী বলছেন ব্যবহারকারীরা
Published: 18th, May 2025 GMT
একসময় অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপ সাইডলোড ছিল একধরনের রোমাঞ্চ। ২০১২ সালে স্যামসাং গ্যালাক্সি ইয়াং ডুয়োস ফোন হাতে পাওয়ার পর এক ব্যবহারকারী নিজেই বুটলোডার আনলক করে কাস্টম রিকভারি ইনস্টল করেছিলেন। কাস্টম রম ফ্ল্যাশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অ্যাপ ও গেম সাইডলোড করা ছিল তাঁর নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু এক দশক পর ২০২৫ সালে এসে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন তাঁর হাতে আছে ওয়ানপ্লাস ১৩-এর মতো আধুনিক স্মার্টফোন। এ ফোন অ্যান্ড্রয়েডচালিত হওয়ায় সাইডলোডের সুযোগ এখনো আছে। কিন্তু সেই আগ্রহ আর নেই। উল্টো সাইডলোড এখন একধরনের ঝুঁকি বলেই মনে হচ্ছে তাঁর কাছে। এ অভিজ্ঞতা এখন অনেক পুরোনো অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরই।
অ্যান্ড্রয়েড এখন অনেক বেশি উন্নত হলেও সাইডলোড করা অ্যাপের মাধ্যমে ক্ষতিকর সফটওয়্যার যন্ত্রে প্রবেশের আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। গুগল এখন অ্যাপ সাইডলোডের ক্ষেত্রে একাধিক অনুমতির ধাপ রেখেছে। ব্যবহারকারীদের নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যেই এসব ‘গার্ডরেল’ রাখা হয়েছে। যদিও প্লে প্রোটেক্ট প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ক্ষতিকর অ্যাপ শনাক্তের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে, তবু কিছু অ্যাপ এখনো কৌশলে সেই সুরক্ষা এড়িয়ে যেতে সক্ষম।
একজন অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর মতে, ‘আগে যেখানে সাইডলোড মানে ছিল নতুন কিছু চেষ্টা করা, এখন সেটি নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।’ একসময় স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিধি সীমিত ছিল ফোনকল, বার্তা কিংবা গেম খেলার মধ্যে। এখন স্মার্টফোন একাধারে ব্যাংকিং, পরিচয় যাচাই, অফিশিয়াল কাজ, ব্যক্তিগত ফাইল সংরক্ষণ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ফলে ভুল করে ইনস্টল করা একটি অ্যাপের মাধ্যমে পুরো যন্ত্রের জন্যই হুমকি হতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত ছবি, পরিচয়পত্র বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। একজন ব্যবহারকারী বলছেন, ‘আগে সাইডলোড করতাম প্রিমিয়াম ফিচার ফ্রিতে পাওয়ার জন্য। এখন বুঝি, সামান্য সুবিধার জন্য নিজের পুরো ডিজিটাল নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক নয়।’
এ ছাড়া এখন হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের মতো অনেক জনপ্রিয় অ্যাপের নীতিমালা আগের চেয়ে কঠোর হয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্ম এখন অ্যাপের কোনো পরিবর্তিত বা অননুমোদিত সংস্করণ ব্যবহার করলেই ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারে।
ফলে ব্যক্তিগত ডেটা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘সাইডলোড করে টাকা বাঁচালেও যদি তাতে হাজার টাকার অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়, তাহলে সেই সাশ্রয় কোনো কাজেই আসে না।’ অবশ্য কিছু নির্ভরযোগ্য মাধ্যম এখনো প্লে স্টোরের বাইরেও অ্যাপ সরবরাহ করে। তবে এমন ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সব সময় অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন
‘কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে!’—জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত এক কবিতার লাইন। উদ্দেশ্য যা–ই হোক, দুজন মানুষের গোপন আলাপ জানার অদম্য আগ্রহ এখানে স্পষ্ট। গোপন কথা বা কানে কানে বলা কথা জানার যে তাড়না, সেটা মানুষের স্বভাবজাত। কিন্তু গোপন কথা তো শেষ পর্যন্ত গোপনই। দুজন মানুষ গোপনে কথা বলছেন মানে তাঁরা সচেতনভাবেই চান না, এই আলাপে অন্য কারও অংশগ্রহণ থাকুক।
এর ফলে কারও গোপন কথা থেকে দূরে থাকাই ভালো। এটাও ঠিক যে সব গোপন কথা আবার জানার সুযোগও থাকে না। যেমন ফুটবল মাঠে দুজন মানুষ যখন মুখে হাত দিয়ে কথা বলেন, তখন টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে সেটা শোনার সুযোগ থাকে না। খেলার মাঠে মুখে হাত দিয়ে বলা সেই কথা হতে পারে দুজন সতীর্থের মধ্যে, কোচ ও শিষ্যদের মধ্যে, দুই দলের খেলোয়াড়ের মধ্যে কিংবা খেলোয়াড় ও রেফারির মধ্যে।
মাঠে বলা প্রায় প্রতিটি কথাই আসলে গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এভাবেও বলা যায় যে গুরুত্বপূর্ণ বলেই এই কথাগুলো গোপন। একজন কোচ যখন শিষ্যকে রণকৌশল বুঝিয়ে দেবেন, তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, প্রতিপক্ষ সেটা শুনে যাক বা ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে বুঝে যাক। অথবা রেফারির সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে তর্কের সময় একজন খেলোয়াড় চাইবেন না, সাংবাদিকেরা তাঁর কথা শুনে মুখরোচক কোনো খবর তৈরি করুক। এক সময় অবশ্য এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। তবে এখনকার ফুটবলে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। টেলিভিশনে যদিও সেসব আলাপ এমনিতেও শোনা সম্ভব নয়।
কিন্তু কেউ না কেউ যে ঠিকই বসে থাকেন লিপ রিড বা ঠোঁট পড়বেন বলে। ঠোঁট পড়ার এই কাজ যেমন সংবাদমাধ্যমগুলো করে থাকে, একইভাবে প্রতিপক্ষ দলও অনেক সময় এই কাজ করে। আর এ কারণেই কথা বলার সময় হাতটা মুখের সামনে রাখতেই হয়। যাতে মাঠে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা মাঠের বাইরে আছেন, তাঁরাও যেন ঠোঁট পড়ে কিছু বুঝতে না পারেন।
তবে শুধু গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মাঠে কথা বলার সময় মুখে হাত রাখা হয়, তা নয়। এর পেছনে অনেক সময় ভিন্ন কারণও থাকে এবং সেটা বৈজ্ঞানিক। যেমন গ্যালারির শব্দের কারণে কথা বোঝা না গেলে মুখে হাত দিয়ে কথা বলেন খেলোয়াড়েরা। যাতে একজনের কথা ঠিকঠাক বাতাসে ভেসে অন্যজনের কাছে পৌঁছাতে পারে।
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের কোচরা কে কত টাকা বেতন পান১৫ মে ২০২৫বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে পিআর পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ফিল হল। তাঁর মতে, কথা ঠিকঠাক বুঝতে পারার জন্যই মুখে হাত রেখে আলাপ করা হয়। তিনি উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালে নাথান রেডমন্ডের সঙ্গে পেপ গার্দিওলার কথা বলার বিষয়টিও সামনে আনেন।
এক ফুটবলারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় একবার আমাকে বলেছিলেন, “আমরা মুখ ঢেকে কথা বলি তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনেক সময় যখন কাউকে কাছ থেকে কিছু বলি, তখন মুখের কাছে হাত রাখলে কণ্ঠস্বর জোরে শোনা যায়, অর্থাৎ শব্দটা বেশি স্পষ্ট হয়, যাতে তারা ঠিকভাবে শুনতে পারে।’”
ফুটবল–দুনিয়ায় লিপ রিডারদের গুরুত্ব বাড়ছে। মাঠে কিছু একটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কে কাকে কী বলেছেন, তা জানতে সবাই শুনতে চান লিপ রিডারদের ব্যাখ্যা।কোলাহলপূর্ণ মাঠে এই টোটকা কতটা কার্যকর, সেটা ব্যাখ্যা করে ফিল আরও যোগ করেন, ‘স্টেডিয়াম ও মাঠের চারপাশে প্রচণ্ড শব্দ থাকে, তাই কণ্ঠস্বর জোরে শোনানোর জন্য তাদের এই কাজ করতে হয়। একটি কোলাহলপূর্ণ স্টেডিয়ামে যখন আপনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন, তখন সেই শব্দ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে কথাগুলো অনেক অস্পষ্ট শোনায়। আর এ সময় আপনি যদি মুখের ওপর হাত রেখে সেই হাতটা যার সঙ্গে কথা বলছেন তাঁর দিকে নির্দেশ করেন, তাহলে কথা অনেক বেশি স্পষ্ট শোনা যায়।’
এটি অবশ্য মুদ্রার একটি পিঠ। অন্য পিঠে কাইল ওয়াকার বলেন ভিন্ন কথা। সাবেক ম্যানচেস্টার অধিনায়ক ওয়াকার নিজের যুক্তি তুলে ধরেন এভাবে, ‘এটা করা হয় (মুখে হাত দিয়ে কথা বলা) যেন ক্যামেরায় কিছু ধরা না পড়ে। তুমি হয়তো কাউকে গালমন্দ করছ, অথবা স্রেফ মজা-মশকরা করছ। হতে পারে আগের সপ্তাহে রাতের কোনো আয়োজনে তুমি তাকে (অন্য খেলোয়াড়কে) দেখেছ, আর এখন স্রেফ একটু ঠাট্টা-তামাশা করছ। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।’
আরও পড়ুন২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনে সৌদি আরবের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই কেন১২ ডিসেম্বর ২০২৪ঠোঁট পড়ে সব জেনে যাওয়ার বিষয়ে কাইল ওয়াকার বলেন, ‘এখন আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি, সেখানে তো ঠোঁট পড়ার লোকও আছে। দুনিয়াটা কী হয়ে যাচ্ছে বলুন তো?’ শেষের লাইনটা ওয়াকার আক্ষেপ করেই বলেছেন। এই আক্ষেপের অবশ্য কারণও আছে। ২০২৩–২৪ মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার সিটির ৩-১ গোলে জয় পাওয়ার ম্যাচে এমন একটি ঠোঁট পড়ার ঘটনায় ব্রিবতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান তিনি। সেদিন ম্যাচের একপর্যায়ে ব্রেন্টফোর্ডের ফরোয়ার্ড নিল মাউপের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ওয়াকার।
ম্যাচ শেষে প্রফেশনাল লিপ-রিডার জেরেমি ফ্রিম্যান মেইল অনলাইনকে জানান, ওয়াকার ম্যাচ চলাকালে মাউপেকে হুমকি দিয়ে বলেন যে তিনি তাঁকে ‘এক ঘুষিতে ফেলে দেবেন।’ এ ঘটনা নিয়ে সে সময় বেশ আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে অবশ্য অন্য এক প্রশ্নও সামনে এসেছে। লিপ রিডিংয়ের কারণে ফুটবল মাঠে কথোপকথনের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না এবং এই কাজ নৈতিকভাবে সঠিক কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
নানামুখী আলাপের মধ্যেও অবশ্য থেমে নেই লিপ রিডিং। ফুটবল–দুনিয়ায় লিপ রিডারদের গুরুত্বও বাড়ছে। মাঠে কিছু একটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কে কাকে কী বলেছেন, তা জানতে সবাই শুনতে চান লিপ রিডারদের ব্যাখ্যা।
অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া থেকে বা বিপদে পড়া থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফুটবলাররা, সে জন্যই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে এভাবে কথা বলা।