আমি খেলার মধ্যে রাজনীতি আনার পক্ষে কোনো দিনই নই: মির্জা ফখরুল ইসলাম
Published: 20th, June 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার জগৎটা এখন রাজনীতির। কিন্তু আমি খেলার মধ্যে রাজনীতি আনার পক্ষে কোনো দিনই নই। আমি সব সময় মনে করেছি যে খেলাধুলা, ক্রীড়াঙ্গন এটা রাজনীতিমুক্ত হওয়া উচিত।’
আজ শুক্রবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘মির্জা রুহুল আমিন স্মৃতি’ টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৮ মে বিভিন্ন জেলার ১৬টি দলের অংশগ্রহণে এই ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়। ফাইনাল খেলায় দিনাজপুর ডেমনেটর্স ক্রিকেট দলকে ছয় উইকেটে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় পাবনা ক্রিকেটার্স দল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাঁরা যোগ্য, তাঁরা খেলবেন। আর সবচেয়ে বড় জিনিস, যাঁরা মাঠে খেলেন, তাঁদের হৃদয়টা অনেক বড় হয়, এটা প্রমাণিত। দেখা যায়, ওখানে ক্ষুদ্র দলমত এগুলো নিয়ে কোনো বিভেদ থাকে না। আমাদের সময় সেটাই ছিল। একেকজন একেক দল সমর্থন করতাম আমরা, একেকজন একেকটা মত সমর্থন করতাম। কিন্তু খেলা যখন আসত, তখন আমরা সবাই একসঙ্গে ক্রিকেটের পক্ষে থাকতাম। এ রকম অনেক স্মৃতি আছে, সেসব স্মৃতি বললে অনেক সময় লেগে যাবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটা কথা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, দেশটা আমার, এটা অন্য কারও নয়। এই দেশটাকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। গত ১৫ বছরে এই দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার। ঠাকুরগাঁওয়ের যাঁরা ক্রীড়ামোদি আছেন, তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলমত–নির্বিশেষে খেলাধুলার ব্যবস্থা করবেন, আমি এটা বিশ্বাস করি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা নতুন করে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ গেছে, অনেক ছাত্ররা জীবন দিয়েছেন; তাঁদের আত্মার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, ‘মির্জা রুহুল আমিন’ স্মৃতি টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সহসভাপতি নূর-এ-শাহাদাৎ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র র জন ত ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা