গায়ে লাল-সবুজের পতাকা জড়িয়ে দাঁড়ান পোডিয়ামে। একটু পর সাউন্ড বক্সে বেজে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা..’। আবেগ ছুঁয়ে যায় আব্দুর রহমান আলিফকে। তাঁর সৌজন্যে সিঙ্গাপুরের আকাশে উড়েছে বাংলাদেশের পতাকা, বেজেছে জাতীয় সংগীত। অনেক দিন পর বাংলাদেশের আরচারি থেকে মিলল সুখবর। এশিয়ান কাপ আরচারির স্টেজ টুতে সোনালি হাসি হেসেছেন ১৯ বছর বয়সী আলিফ। গতকাল বুকিত গমবাক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত পুরুষদের রিকার্ভ এককের ফাইনালে জাপানের মিয়াতা গাকুতোকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে প্রথমবার স্বর্ণপদক জিতেছেন পাবনার এ তীরন্দাজ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় আরচার হিসেবে এশিয়ান লেভেলে স্বর্ণ জিতেছেন।
এর আগে সর্বশেষ এশিয়া কাপ আরচারি স্টেজ থ্রিতে স্বর্ণ জিতেছিলেন আমেরিকায় পাড়ি জমানো রোমান সানা। ২০১৯ সালে এ মঞ্চের লেগ-৩ এ বাংলাদেশকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন রোমান।
অতীতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও পদকের মঞ্চে যেতে পারেননি আলিফ। বিশ্বকাপ, এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান আরচারির গ্রাঁ প্রিঁর মতো আসরে রিকার্ভ এককে বরাবরই হতাশ হওয়া আলিফ শুক্রবার ফাইনালে স্নায়ুর লড়াইয়ে হাসেন শেষ হাসি। অথচ জাপানের গাকুতোর বিপক্ষে প্রথম দুই সেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানো আলিফের জয়টি মনে হয়েছিল সময়ের অপেক্ষা। প্রথম ও দ্বিতীয় সেট জিতে নেন ২৮-২৭, ২৯-২৮ ব্যবধানে। কিন্তু পরের দুই সেটে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো জাপানের প্রতিযোগীর কাছে আলিফ হেরে যান ২৮-২৭, ২৭-২৬ পয়েন্টে। পঞ্চম সেটে গিয়ে ছন্দে ফেরা এ তীরন্দাজ ২৯-২৬ পয়েন্টে করেন বাজিমাত। তাঁর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে থাকা বাংলাদেশ দলের বাকিরাও উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।
২০১৮ সালে বিকেএসপিতে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া আলিফ তখনও জানতেন না তীর-ধনুক হাতে নিবেন। কারণ আগে আরচারি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না তাঁর। জাতীয় দলের সঙ্গে থাকলেও সবসময় আড়ালে পড়ে ছিলেন। রোমান সানার পর রিকার্ভ ইভেন্টে বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন হাকিম আহমেদ রুবেল। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালে আলোয় আসেন সাগর ইসলাম। কিন্তু তিনি এই আসরে ব্যর্থ হলে আলিফ একাই হাল ধরেন রিকার্ভ পুরুষ ইভেন্টে। স্বর্ণ জয়ের অনুভূতি এভাবেই প্রকাশ করেন এ তীরন্দাজ, ‘অনুভূতিটা অন্যরকম। এই প্রথমবার আমি বিদেশে আমার দেশের জাতীয় সংগীত বাজাতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এটা আমার প্রথম স্বর্ণ।’
এখানেই থেমে থাকতে চান না আলিফ। এইচএসসি পরীক্ষার্থী আলিফের চাওয়া বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা, ‘সামনে আমার লক্ষ্য ২০২৮ অলিম্পিকে মেডেল নিয়ে আসা। সেই ধারাবাহিকতায় অনুশীলন করছি। সুযোগ-সুবিধা ভালো হচ্ছে। বেশি ম্যাচ খেললে আমাদের র্যাঙ্কিং উন্নতি হবে এবং আমরা টিমসহ অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে পারব। ফেডারেশন বা সরকারের কাছে চাওয়া যেন সব গেমসে অংশ নিতে পারি। আন্তর্জাতিক আঙিনায় বেশি খেললে অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করাটা সহজ হয়ে যাবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বর ণ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্টেডিয়াম আলট্রা-রান
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে স্টেডিয়ামভিত্তিক আলট্রা-রান প্রতিযোগিতা, আয়োজন করতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোস্টাল আলট্রা বাংলাদেশ। ‘ঢাকা স্টেডিয়াম রান ২০২৫’ নামে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে।
কোস্টাল আলট্রা বাংলাদেশ-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই ইভেন্ট আয়োজনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। কোস্টাল আলট্রা বাংলাদেশ এ বছর ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম দূরত্বের আলট্রা-ম্যারাথন আয়োজন করেছিল। সেই প্রতিযোগিতায় ৫০ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ২০০ কিলোমিটার—চার ক্যাটাগরিতে দেশি–বিদেশি প্রায় ৪০০ দৌড়বিদ অংশ নেন।
আলট্রা-রান মূলত ম্যারাথনের প্রচলিত ৪২.১৯৫ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি দূরত্বের দৌড়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের নানা দেশে এ ধরনের দৌড়ের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। তবে স্টেডিয়াম আলট্রা-রান একটু আলাদা, এখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব নয়; বরং নির্দিষ্ট সময় ধরে দৌড়াতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে কে কত দূর দৌড়াতে পারেন, সেই হিসাবেই নির্ধারিত হন বিজয়ী।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ‘ঢাকা স্টেডিয়াম রান ২০২৫’–এ থাকছে সময়ভিত্তিক চার ক্যাটাগরি ৩৬ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা ও ৬ ঘণ্টা। আন্তর্জাতিক মান পূরণ সাপেক্ষে দেশি–বিদেশি প্রায় ৪০০ দৌড়বিদ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন বলে জানানো হয়েছে। দৌড়বিদদের সহায়তায় কাজ করবেন প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবক।
ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৬ নভেম্বর রাত ৮টা থেকে। বাছাইপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত দৌড়বিদেরাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। আবেদন করা যাবে সংগঠনটির ওয়েবসাইটে: coastalultra.com