সুরে, শ্রুতিতে, শ্রদ্ধায় সুফিয়া কামালকে নিবেদন
Published: 21st, June 2025 GMT
আষাঢ়ের অন্ধকার নেমে এসেছিল শহরের গায়ে। বৃষ্টির নরম পর্দা যেন ঢেকে দিচ্ছিল জীবনের কোলাহল। এমনই এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে জমে উঠেছিল এক অনুপম গীতিসন্ধ্যা—সুর, রাগ, এবং অনুভবে মগ্ন একটি অনুষ্ঠান, যেটি নিবেদিত ছিল ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মহীয়সী নারী সুফিয়া কামালের প্রতি।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা। ছায়ানট মিলনায়তনের অন্দরমহলে শুরু হয় ‘বর্ষা উৎসব’। বাইরে বৃষ্টির ছন্দ, আর ভেতরে সংগীতের অনুরণন—এই সন্ধ্যা যেন পরিণত হয়েছিল ঋতুর প্রতি এক নান্দনিক শ্রদ্ধা নিবেদনে।
অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ইফফাত আরা দেওয়ান, তাঁর কণ্ঠে ভেসে আসে ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’। এই গান দিয়ে শুধু একটি পরিবেশনার সূচনা নয়, বরং বর্ষার আবহ, প্রেমের প্রতীক্ষা আর প্রকৃতির রহস্যময়তার দরজাটি খুলে যায়।
এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সংগীতশিল্পীরা। উষসী নাগ পরিবেশন করেন রাগ শুদ্ধসারং, যার প্রতিটি স্বরে মিশে থাকে মনভোলানো বারিধারার মায়া। শ্রাবন্তী ধর গাইলেন ‘ঝরো ঝরো বারি ঝরে অম্বর ব্যাপিয়া’—সেই চিরচেনা ঋতুভার অনুভব, যা শ্রোতার মনেও এনে দেয় অনাবিল স্নিগ্ধতা।
সুদীপ্ত শেখর দে রাগ ‘দেশ’ পরিবেশন করেন। সত্যম কুমার দেবনাথের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘এসো শ্যামলসুন্দর’—আধ্যাত্মিক আবাহন আর রাগ-ভিত্তিক গানের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় এক ধ্যানমগ্ন মুহূর্ত।
পরিবেশনায় ছিলেন স্বপ্না সাহা (রাগ ছায়ানট), সেজুঁতি বড়ুয়া (গোধূলী গগনে মেঘে), সিরাজুম মুনীরা (রাগ কেদার), নুসরাত জাহান রুনা (বহু যুগের ওপার হতে)—যাঁদের সুরে বর্ষা শুধু আবহ নয়, হয়ে ওঠে এক অন্তর্লীন মানসপট।
প্রিয়ন্তু দেব গেয়ে শোনান ‘মেঘমেদুর বরষায়’, সমুদ্র শুভম পরিবেশন করেন রাগ জয়জয়ন্তী—সন্ধ্যা তখন পূর্ণতায়। তাহমিদ ওয়াসিফ ঋভুর ‘আমার দিন ফুরালো’, রিফাত আহমেদ ইমনের ‘দেশমল্লার’ এবং মিনহাজুল হাসান ইমনের ‘রামদাসীমল্লার’—এই ধারাবাহিকতায় শ্রোতারা যেন হারিয়ে যান ঋতুর সুরলোকে।
দ্বিতীয় অংশে মানীষ সরকার গেয়ে শোনান ‘ঝর ঝর ঝরে শাওন ধারা’, ফারজানা আক্তার পপির কণ্ঠে বাজে ‘ঝড়ো ঝড়ো বরিষে বারিধারা’, আর আফরোজা রুপা পরিবেশন করেন ‘মেঘমল্লার’—বর্ষার সংগীতযাত্রা সেখানে এক ধ্বনিময় সংলাপে রূপ নেয়।
শেষ মুহূর্তগুলোতে সুশ্মিতা দেবনাথ সুচির ‘বরষা ওই এলো বরষা’, অনন্যা আচার্যের ‘মিয়াকিমল্লার’ এবং শারমিন শাথী ইসলাম ময়নার ‘চঞ্চল শ্যামলে এলো গগনে’—এই ত্রয়ী পরিবেশনায় শ্রোতা যেন দাঁড়িয়ে থাকে গানের শেষ বৃষ্টিবিন্দু গায়ে মেখে।
সন্ধ্যার উপসংহার হিসেবে পরিবেশিত হয় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত— তাতে উদ্ভাসিত হয় গভীর ও গর্বিত এক মুহূর্ত।
যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন গৌতম সরকার, ইফতেখার আলম ডলার, মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ য় নট পর ব শ ছ য় নট
এছাড়াও পড়ুন:
১৪ কার্গো বিমানে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি থেকে ইসরায়েলে এলো অস্ত্র
ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে আসা ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলে পৌঁছেছে। এসব বিমানে সেনাবাহিনীর জন্য বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও সহায়তা উপকরণ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটির মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশটি আকাশ ও সমুদ্রপথে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই নতুন এই চালান এসেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই সরঞ্জামগুলো সেনাবাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি জোরদারে সহায়ক হবে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এটি নতুন চালান হলেও গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০-র বেশি সামরিক কার্গো বিমান ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
তবে নতুন করে আসা সরঞ্জামগুলো কী ধরনের, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালালে সংঘাতের সূচনা হয়। এর জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০-র বেশি মানুষ আহত হয়েছে।