শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে পাকিস্তানের মনোনয়ন
Published: 21st, June 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তান সংকটে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে পাকিস্তান।
শনিবার (২১ জুন) ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মনোনয়ন ট্রাম্পের সেই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেয়, যার ফলে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে এবং সরাসরি সংঘাত এড়ানো গেছে।
এমন সময় এ মনোনয়ন এলো, যখন আন্তর্জাতিক মহল ওই সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে ইসলামাবাদ বলছে, “ট্রাম্পের কৌশলগত নেতৃত্ব না থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত।”
এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে পাকিস্তান সরকার জানায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের উস্কানি ও বেআইনি আগ্রাসনের সাক্ষী, যা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ভয়াবহ লঙ্ঘন এবং এতে নারী, শিশু ও বয়স্কসহ বহু নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ভারতের এ আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করে।
পাকিস্তান সরকার দাবি করে, ট্রাম্পের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ দ্রুত অবনতি হওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছে এবং দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে সহায়তা করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, গোটা বিশ্বের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারত।
সরকার আরো জানায়, ট্রাম্পের এই ভূমিকা তাকে ‘সত্যিকারের শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরেছে এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ বহন করে।
তবে ভারতের অবস্থান ভিন্ন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আসে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আলোচনার মাধ্যমেই—যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নয়।
এদিকে, ট্রাম্প আগেই দাবি করেছিলেন, তার আহ্বানে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, বাণিজ্যের দিকে মনোযোগ দিতে সম্মত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তারা সংঘর্ষ থামায়।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা