নেত্রকোনায় বিএনপি নেতার গুদাম থেকে ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ
Published: 21st, June 2025 GMT
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এক বিএনপির নেতার গুদাম থেকে ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল শুক্রবার রাতে কেন্দুয়া পৌরসভার বাদে আঠারোবাড়ি কলেজ রোড এলাকায় মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামের ওই গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩০৪ বস্তায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি চাল জব্দ করা হয়।
মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামের ওই গুদামের মালিক মো.
পুলিশ, এলাকাবাসী ও সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ভিজিএফের মাধ্যমে দরিদ্রদের বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি চাল নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেন বিএনপি নেতা খোকন আহমেদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সন্ধ্যায় ওই গুদামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে একটি হ্যান্ড ট্রলি দিয়ে কিছু চালের বস্তা গুদাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি নেতা। এ সময় হ্যান্ড ট্রলিটি উপজেলার বঙ্গানিয়া মোড় থেকে জব্দ করে গুদামের সামনে আনে সেনাবাহিনী। পরে গুদাম ও ট্রলি থেকে মোট ৩০৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা এবং নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল। এসব চাল কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, অভিযানের সময় খোকন আহমেদকে গুদামে আসার কথা বলা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। একপর্যায়ে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আঠারোবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সরকারি ত্রাণের চাল মজুত করে রাখা ও সরিয়ে ফেলার চেষ্টা যে উদ্দেশ্যেই হোক, তা অপরাধ। অভিযুক্ত খোকন আহমেদ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সেনা কর্মকর্তা জামিউল ইসলাম বলেন, জব্দ করা ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। হ্যান্ড ট্রলিতে নিচে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি বস্তা আর ওপরে কিছু সাদা বস্তায় চালগুলো রেখে নিয়ে যাচ্ছিল। এ বিষয়ে তদন্তসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা হয়েছে। গুদামের মালিক খোকন আহমেদকে মুঠোফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। একপর্যায়ে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। উপস্থিত দুজনকে আটক করা হলেও তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোকন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, জব্দ করা চাল উপজেলা প্রশাসনের কাছে আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। আজ রাতে কর্মস্থলে ফিরব। ঘটনা শুনেছি। এসে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র বস ত উপজ ল ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা