নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় এক বিএনপির নেতার গুদাম থেকে ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল জব্দ করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল শুক্রবার রাতে কেন্দুয়া পৌরসভার বাদে আঠারোবাড়ি কলেজ রোড এলাকায় মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামের ওই গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩০৪ বস্তায় ১৩ হাজার ৫১৫ কেজি চাল জব্দ করা হয়।

মেসার্স নাহার ট্রেডার্স নামের ওই গুদামের মালিক মো.

খোকন আহমেদ। তিনি কেন্দুয়া পৌর বিএনপি সভাপতি। অভিযান শেষে চালগুলো উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে দেয় সেনাবাহিনী। আজ শনিবার বিকেলে জেলার মদনের অস্থায়ী সেনাক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জামিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও সেনাক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ভিজিএফের মাধ্যমে দরিদ্রদের বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি চাল নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেন বিএনপি নেতা খোকন আহমেদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সন্ধ্যায় ওই গুদামে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে একটি হ্যান্ড ট্রলি দিয়ে কিছু চালের বস্তা গুদাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি নেতা। এ সময় হ্যান্ড ট্রলিটি উপজেলার বঙ্গানিয়া মোড় থেকে জব্দ করে গুদামের সামনে আনে সেনাবাহিনী। পরে গুদাম ও ট্রলি থেকে মোট ৩০৪ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। জব্দ করা চালের মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের পাটের বস্তা, টিসিবির বস্তা এবং নীল, সাদা ও হলুদ রঙের বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তা ছিল। এসব চাল কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খোকন আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, অভিযানের সময় খোকন আহমেদকে গুদামে আসার কথা বলা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। একপর্যায়ে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আঠারোবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সরকারি ত্রাণের চাল মজুত করে রাখা ও সরিয়ে ফেলার চেষ্টা যে উদ্দেশ্যেই হোক, তা অপরাধ। অভিযুক্ত খোকন আহমেদ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইনগত পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করা হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সেনা কর্মকর্তা জামিউল ইসলাম বলেন, জব্দ করা ৩০৪ বস্তা সরকারি চাল ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। হ্যান্ড ট্রলিতে নিচে খাদ্য অধিদপ্তরের সরকারি বস্তা আর ওপরে কিছু সাদা বস্তায় চালগুলো রেখে নিয়ে যাচ্ছিল। এ বিষয়ে তদন্তসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা হয়েছে। গুদামের মালিক খোকন আহমেদকে মুঠোফোনে কল করে ডাকা হলেও তিনি আসেননি। একপর্যায়ে তিনি মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। উপস্থিত দুজনকে আটক করা হলেও তাঁদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোকন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, জব্দ করা চাল উপজেলা প্রশাসনের কাছে আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। আজ রাতে কর্মস্থলে ফিরব। ঘটনা শুনেছি। এসে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র বস ত উপজ ল ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘চোখের সামনে বসতবাড়ি ভাইঙ্গা নিল, পোলাপান লইয়া কই যামু’

চার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে এক রাতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন শেরপুর সদর উপজেলার গৃহিণী নাজমা বেগম (৪৬)। চোখের সামনে নিজেদের শেষ আশ্রয়স্থলটি নদীতে বিলীন হতে দেখেন। এই অবস্থায় কোথায় যাবেন, কী করবেন—কিছুই বুঝতে পারছেন না। এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাগলঘর গ্রামের এই বাসিন্দা বলেন, ‘চোখের সামনে বসতবাড়ি ভাইঙ্গা নিল (ব্রহ্মপুত্র নদ), পোলাপান লইয়া কই যামু?’

আপাতত দিনমজুর স্বামী আবদুল্লাহ ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন নাজমা। তবে ভবিষ্যতে কোথায় যাবেন, এই ভেবে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। ব্রহ্মপুত্র নদে বসতভিটা হারানোর এই কষ্ট কিংবা অসহায়ত্ব শুধু নাজমা বেগমের একার নয়, চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাগলঘর গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের একই দুর্দশা। পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তারা।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দক্ষিণ ভাগলঘর গ্রামের একাংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামটির প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেই অনেকের বসতভিটা নদে পুরোপুরিভাবে বিলীন হয়ে গেছে। আবার কোথাও নদের পাড় ঘেঁষে থাকা শূন্য ভিটায় উঁকি দিচ্ছে বাঁশের খুঁটি। এগুলো এখন সেই দুঃসহ বাস্তবতার সাক্ষী যেন। অনেকে তড়িঘড়ি নিজেদের ঘর থেকে আসবাব সরিয়ে কোনোরকমে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রেখেছেন।

ব্রহ্মপুত্রের তীর থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে আছে ভাগলঘর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ ও সামাজিক কবরস্থান। ভাঙন রোধ করা না গেলে যেকোনো সময় এগুলো নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বালু ভরার কাজ চলতে দেখা যায়।

নদের ভাঙনকবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভাগলঘর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ