ইসরায়েলের বর্বর হামলার পর পাল্টা হামলা চালাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিতে হামলা চালিয়েছে। ফলে ভয়ংকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান।

বলিউড অভিনেত্রী মান্দানা করিমি ইরানের নাগরিক। তার পরিবার এখন ইরানে অবস্থান করছেন। নিজ মাতৃভূমির দুঃখ-দুর্দশা তাকে ভীষণ ভাবিয়ে তুলেছে। মানসিকভাবে ভালো নেই বলেও জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছেন মান্দানা। তাতে এ অভিনেত্রী বলেন,  “আমি ভালো নেই। আমি জানি আমাকে দেখে হয়তো মনে হচ্ছে, আমি সব কাজই করছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি ভালো নেই। আমি ঠিক থাকার ভাণ করছি, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য।”

আরো পড়ুন:

‘আমার বয়স ৫৯, জীবনে গার্লফ্রেন্ড এসেছে ৪ জন’

বিরতি ভেঙে ফিরলেন আমির: কত টাকা আয় করল ‘সিতারে জমিন পার’?

বিশ্ববাসীর সমালোচনা করে মান্দানা করিমি বলেন, “শিশুদের মৃত্যু দেখেও কীভাবে একজন মানুষ ভালো থাকতে পারে। শুধু প্যালেস্টাইন বা ইরানে নয়; মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকায় আমেরিকার আর্থিক সহায়তায় বোমা ফেলা হচ্ছে। ইজরায়েল হামলা করছে। আর সারা বিশ্ব নীরবে দেখছে!”

বর্তমানে ইরানে নেই মান্দানা। তবে ইরানের বাড়িতে রয়েছে এ অভিনেত্রীর মা-ভাই। তা জানিয়ে মান্দানা বলেন, “আমি এখন ইউরোপে অবস্থান করছি। এখানকার শান্ত একটি রাস্তায় হাঁটছি। কিন্তু নিজেকে ভূত মনে হচ্ছে! আমার জীবনের একটা অংশ এখন ইরানের বাড়িতে রয়েছে। আমার একটি অংশ আমার মা, ভাই, ভাতিজা-ভাতিজিদের সঙ্গে রয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটছে। পরের মিসাইলটি হয়তো ওদের আঘাত করবে।”   

নিজের দেশকে পুড়তে দেখে অসহায় বোধ করছেন মান্দানা করিমি। এ অভিনেত্রীর ভাষায়, “ইরান বলতে সরকার, প্রশাসন নয়। ইরান বলতে সেই দেশের মানুষকেই বুঝি। আমার মায়ের হাতকে বুঝি। সেই ইরানের মৃত্যু হচ্ছে, আমি ভালো নেই।” 

২০১৫ সালে বলিউডে পা রাখেন মডেল-অভিনেত্রী মান্দানা করিমি। ‘রায়’ সিনেমায় আনিতা চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে ‘কেয়া কুল হ্যায় হাম ৩’, ‘থর’ সিনেমায় দেখা যায় তাকে। এর আগে ‘বিগ বস ৯’-এ অংশ নিয়ে আলোচনায় ছিলেন। 

চলতি বছরের শুরুতে অভিনয়কে বিদায় জানানোর ঘোষণা দেন মান্দানা করিমি। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ৩৭ বছরের মান্দানা বলেন, “অভিনয় এমন একটি কাজ ছিল যা কখনো পছন্দ করিনি, এমনকি এই শিল্পও না। আমি সেখানে যে সময় কাটিয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞ। তবে এটি এমন কিছু ছিল না যার জন্য আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ