Samakal:
2025-11-17@12:32:45 GMT

ইরার নীল রেইনকোট

Published: 23rd, June 2025 GMT

ইরার নীল রেইনকোট

শ্রাবণের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা। রোহান আজকে এলো ইরাদের ছাতাটা নিয়ে, যেটি গতদিন পড়াতে এসে বৃষ্টির কারণে নিয়ে গিয়েছিল। ফলে আজকে ভিজতে হয়নি। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এবার ঢাকায় এত বৃষ্টি ভাবা যায় না!
বৃষ্টি থেমে গেল। ইরা রোহানের হাতে একটা শপিংব্যাগ তুলে দিল। বলল, বাবা এটি আপনাকে দিতে বলেছেন। বাসায় গিয়ে খুলবেন।
রোহান নিতে না চাইলেও তার মামা কষ্ট পাবেন ভেবে নিল। রোহান ইরাকে পড়িয়ে কোনো টাকা নেয় না। আত্মীয়তা ও সম্পর্কের মধ্যে সে টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে চায় না।
মেসে গিয়ে ব্যাগটা খুলে রোহান অবাক। নীল রঙের রেইনকোট এবং একটি চিরকুট। যেখানে লেখা, ‘রোহান ভাই, আর বৃষ্টিতে ভিজবেন না। অসুস্থ হলে আমাকে কে পড়াতে আসবে?’ 
ইতি– ইরা।
রোহান শুধু মুচকি হাসল। পুরো বর্ষায় এ রেইনকোটই তার সঙ্গী হয়ে গেল।
রোহান ইরার ফুফাতো ভাই। ইরা পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স করছে, এবার ফাইনাল দেবে। রোহান একই সাবজেক্টে সদ্য পাস করে বেরিয়েছে। চাকরি না হওয়ায় মেসে থেকে টিউশনি করে। ইরার বাবার অনুরোধেই ইরাকে কয়েকদিন ধরে পড়াচ্ছে; ফাইনালে যাতে ভালো সিজিপিএ আসে। রোহানকে  ইরার পছন্দ আগে থেকেই। রোহানও জানে। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টা চেপে যাবে দু’জনেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইরার পরীক্ষা শেষে রোহান গ্রামে যায়। মায়ের অসুস্থতা আর বাবার জমিজমা নিয়ে ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন পর ফেরে। ইরাদের বাসায় গিয়ে শুনল, ইরার বিয়ে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে দেশের বইরে এখন। হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় জানাতে পারেননি বলে ইরার বাবা দুঃখপ্রকাশ করলেন। হঠাৎ মনে হলো রোহান বাড়িতে যাওয়ার সময় রেইনকোট মেসে রেখে গিয়েছিল। এদিকে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বৃষ্টির পানিতে তার মোবাইলটা ভিজে যায়। 
এরপর থেকে আর নেটওয়ার্ক কাজ করে না। গ্রামের বাজারে ঠিক না হওয়ায় ঢাকায় এসে ঠিক করাবে বলে রেখে দিয়েছিল। ইরা হয়তো অনেক চেষ্টা করেছে ফোনে।
রোহান একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি পায়। বাসা ও গাড়ির ব্যবস্থা হওয়ায় রেইনকোট পরার প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন রঙের অনেক রেইনকোট আছে এখন তার, মাঝেমধ্যে পরে।  ইরার দেওয়া সেই প্রিয় নীল রেইনকোট এখন আর পরে না। শুধু আলমারিতে যত্নে সাজিয়ে রেখেছে আজীবনের জন্য। v
সুহৃদ মৌলভীবাজার

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ র ইনক ট হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ