মাদারীপুরের কালকিনিতে আওয়ামী লীগের ব্যানারে একটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মিছিলটি শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের মিয়ারহাট বাজারসংলগ্ন সেতুর ওপর থেকে শুরু হয়ে প্রায় ২০০ মিটার দূরেই শেষ হয়ে যায়। এর আগে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের কক্ষে আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন দলটির কিছু কর্মী।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এটাই কালকিনিতে আওয়ামী লীগের প্রথম ঝটিকা মিছিল। এর আগে মাদারীপুর সদরেও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে কয়েকটি ঝটিকা মিছিল হয়েছিল।

গতকাল রাত আটটার পর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিছিল ও মিলাদের ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি একটি গ্রামীণ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে একটি ব্যানার হাতে নিয়ে হাঁটছেন ও স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানে বলা হচ্ছিল, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ কাঁপবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, মিছিলটি মিয়ারহাট বাজারসংলগ্ন সেতুর ওপর থেকে শুরু হয়। এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা কেউই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা-কর্মী নন। শিশু ও বিভিন্ন বয়সের ২৩ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি মিছিলে অংশ নেন। মিছিল শুরুর আগে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ১০ মিনিটের দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয় এবং পরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সেই মিলাদে ব্যবহৃত ব্যানারটিই পরে মিছিলে ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ সোহেল রানাকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও কালকিনি সার্কেল) চাতক মারমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিছিলটি কখন, কোথায় হয়েছে, তা আমরা নিশ্চিত নই। রাতেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা বিষয়টি যাচাই করার চেষ্টা করছি। আজ সকালে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক লক ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ