রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা বাড়ে। বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের চিন্তা মানুষকে পেয়ে থাকে। এই ভাবনা কাউকে ঘুমাতে দেয় না, কাউকে স্বপ্ন দেখায়, কাউকে গভীর ঘুমে আচ্ছাদিত করে রাখে। আমার সন্ধ্যার শেষ আর রাতের শুরুতেই এই অস্থিরতার গল্প দেখা শুরু। সঙ্গে ভূত-অদ্ভুতের আলোছায়া। উৎসবের আড়ালে যেন অন্য কিছু। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন বা আত্মোপলব্ধির এক চমৎকার উপস্থাপন। যেখানে আত্মদর্শন, জ্ঞানগত দ্বন্দ্ব, মানসিক রূপান্তর, কোলবার্গের সূত্র অনুযায়ী নৈতিক বিকাশ, ফ্রয়েডের দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিক বিবেক জাগ্রত হওয়া, মাসলোর সূত্র অনুযায়ী নিজেই নিজেকে ধাপে ধাপে রূপান্তর করা– এই বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে সুকৌশলে। 

পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ–এই কথাটি পড়েছিলাম। তাই পরিবার নিয়ে সম্প্রতি ‘উৎসব’ চলচ্চিত্রটি দেখতে গেলাম সন্ধ্যা ৭টা ৫০-এর শো। যদিও বিজ্ঞাপনের পর মূল চলচ্চিত্র শুরু হয়েছিল রাত ৮টায়। চার্লস ডিকেন্সের অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল অবলম্বনে তানিম নূর পরিচালিত উৎসবের গল্প লিখেছেন– তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া। চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়া। 

চলচ্চিত্রটির মূল ভূমিকায় অর্থাৎ ডিকেন্সের স্ক্রুজ বা তানিমের জাহাঙ্গীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভার্সেটাইল অভিনেতা জাহিদ হাসান (চলচ্চিত্রে জাহাঙ্গীর চরিত্রটি জাহিদ হাসানকে ভার্সেটাইল অভিনেতা বলেই উল্লেখ করেছেন)। একজন কৃপণ ব্যক্তির চরিত্র চিত্রণে কার্পণ্য করেননি তিনি। তাঁর বড় ভাইয়ের (মামাতো ভাই) চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র কাঁপানো জাঁদরেল অভিনেতা ও পরিচালক তারিক আনাম খান। যদিও অল্প দৃশ্যে; তারপরও অভিনয়, ডায়ালগ ডেলিভারি, চরিত্র চিত্রণ–সব কিছুতেই তিনি বরাবরের মতো অনবদ্য। গল্প শেষেও মনে পড়বে তাঁর কথা। মঞ্চে ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের দ্য মাইজার-এর রূপান্তর করেছিলেন তারিক আনাম খান। নাম দিয়েছিলেন কঞ্জুস। তাঁরই শিষ্য জাহিদ হাসান তানিম নূরের উৎসবের জাহাঙ্গীর (কঞ্জুস বা হাড় কিপটে) চরিত্রটিকে অদ্ভুত সরলতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। জাহাঙ্গীরের ছেলেবেলার চরিত্রে এই রূপ দিয়েছেন সৌম্য জ্যোতি। নাট্যকার ও অভিনেতা বৃন্দাবন দাস এবং অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির ছেলে সৌম্য যেন এই চরিত্রের জন্যই তৈরি ছিলেন। 

হয়তো মনের গহীনে সৌম্যর বাবার (বৃন্দাবন দাস) লেখা হাড় কিপটে নাটকটি কোনো না কোনোভাবে আঁচড় কেটেছিল। একদিকে কৃপণ মনোভাব, অন্যদিকে প্রেমিক-দ্বৈত মানসিকতায় ছোট জাহাঙ্গীর বা সৌম্য জ্যোতি খুব ভালো করেছেন। আশির দশকের উপশহরের তরুণী জেসমিনের ভূমিকায় সাদিয়া আয়মান বেশ প্রস্ফুটিত ছিলেন। ডিভিডি ভাড়া নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ, স্বামীর প্রতি প্রেম ও অভিমান, স্বামীর ভাগ্নের প্রতি স্নেহ–সব জায়গায় চমৎকার করেছেন সাদিয়া। তবে অভিনয়ে আরও একটু সিনেমাটিক হলে সোনায় সোহাগা হতো। এতে বিপরীত চরিত্রেরও কিছু দায় থাকে। সৌম্যও এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে লক্ষ্য রাখতে পারলে ভালো হবে। 

অন্যান্য অভিনয়শিল্পীর মতো বোঝা যাবে, অভিনয় দিয়েও চলচ্চিত্রের ভাষা প্রকাশ বা সিনেমাটিক করা যায়। ভূতের চরিত্রগুলোতে অসাধারণ আয়োজন, সংলাপ, কাহিনি বর্ণনা মনে রাখার মতো। চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম যেসব বিষয় নিয়ে ট্রলের শিকার হন তার কিছুটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেসব বিষয় হাস্যরস সৃষ্টি করেছে। কমেডি অব ম্যানার্স (রীতিনীতির কৌতুক), কমেডি অব এরর্স (ভ্রান্তিবিলাস), কমেডি অব ক্যারেক্টার্স (চরিত্রের কৌতুক), কমেডি অব হিউমার্স (হাস্যরস বা মেজাজের কৌতুক), ট্র্যাজিকমেডি (দুঃখ-আনন্দের মিশেল), ট্র্যাজিক রিলিফ (বিয়োগান্তক স্বস্তি)– এ সবের মিশ্রণ দেখা গেছে যখন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ভূতেরা সাক্ষাৎ করেছেন।

এই দৃশ্যগুলোতে জাহিদ হাসানের যেমন ভিন্ন অভিব্যক্তি, সংলাপ বলা ও অঙ্গভঙ্গির বৈচিত্র্য দেখা গেছে; তেমনি চঞ্চল চৌধুরী ভৌতিক চরিত্র চিত্রণের পাশাপাশি কারাগারের ডেভিড অ্যাডামস, আয়নাবাজির আয়না চরিত্রের কিছুটা ছোঁয়াও দিয়েছেন। ভূতের অসহায়ত্বও তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠেছে। গল্পটিকে চঞ্চল চৌধুরীর ভূত এগিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে জাহাঙ্গীর, মোবারক ও জেসমিনের ছোটবেলার চরিত্র গল্পের সূত্র ধরে উঠে আসে। ভূতের উপদ্রপ থেকে বাঁচতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় জাহাঙ্গীর। সেখানে ধরা দেন জয়া আহসান (যাকে জাহাঙ্গীরের ক্রাশ বলা হয়), মানে জয়া আহসানের রূপ ধরে আসা ভূত। নিজেকে নিয়ে বেশ মজা করেন জয়া। 

সেটির কাউন্টার সংলাপ দেন জাহিদ। তানিম নূর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ফিরে এসো বেহুলা’র তনিমা চরিত্রের জয়া আর উৎসবের জয়া যেন অন্যরকম দুটি মানুষ। উৎসবে জয়ার বদৌলতে মুহূর্তেই বদলে যায় চিত্রপট। জয়া অভিনীত চলচ্চিত্র ও নাটকের চরিত্রগুলোর পোশাক ও সংলাপ চলে আসে অবলীলায়। তারপর জাহাঙ্গীরকে এক জায়গায় কিছু প্রশ্ন করে ছেড়ে দেন জয়া। এর থেকে বাঁচতে গিয়ে অপি করিমের হাতে গিয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর। অপি তাঁকে নিয়ে যান ভবিষ্যতের গল্পে। চিরাচরিত অভিনয় ও সুন্দর হাসি দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন অপি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রক্তকরবী নাটকের নন্দিনী যেমন স্বপ্ন, ভালোবাসা ও মুক্তির আহবান জানায়; ঠিক তেমনি মঞ্চের রক্তকরবীর নন্দিনী অপি করিম ‘উৎসব’ চলচ্চিত্রেও জাহাঙ্গীরকে স্বপ্ন, ভালোবাসা ও মুক্তির আহ্বান জানান। 

তিন ভূতের উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয় সিমুর রাইট এবং জো ওরিওলো সৃষ্ট কালজয়ী ভৌতিক চরিত্র ক্যাসপারের কথা; যে এতটাই বন্ধুভাবাপন্ন, তাকে কেউ ভয় পায় না। উল্টো বন্ধুত্ব করে। হিংসা-হানাহানি-যুদ্ধ যেখানে বিশ্বচিত্র, সেখানে তিন ভূতের বন্ধুত্ব যেন প্রচণ্ড খরায় মেঘের কলকাকলি-এক পশলা বৃষ্টি-শীতল হাওয়া। ভূতের গল্পের রেলগাড়িতে চেপে পর্দায় আবর্তিত হন বড় জেসমিন অর্থাৎ আফসানা মিমি। চিরাচরিত অভিনয়শৈলী তাঁর। পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে অল্প হলেও আজাদ আবুল কালামের স্বল্প উপস্থিতি মানবমনে দীর্ঘতর হয় কিছু সংলাপের গভীরতায়। ঘটনার এক সময়ে অন্য এক ভূমিকায় দেখা যায় জাহিদ হাসানকে। 

তরুণ অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালের সঙ্গে তাঁর দৃশ্যগুলো মনে দাগ কাটার মতো। মিশ্রির ছুরির আঘাতে মানবমন কিছুটা হলেও ভালোবাসার ক্ষত সৃষ্টি করবে। গল্পের শুরুতে ডাক্তারের চরিত্রে ইন্তেখাব দিনারের (তানিম নূরের ফিরে এসো বেহুলা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন দিনার) অভিনয় ছিল যুক্তিসংগত। যা সত্যি, যা কল্পনা, যা যুক্তি–তার সঙ্গে মনোজাগতিক ব্যাখ্যা। দিনার তাঁর অভিনয়গুণেই এসব বিষয়ের অবতারণা করেছেন। যারা ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন যেমন জাহাঙ্গীরের ভাগ্নে, ভাগ্নে বউ, কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার, বাবুর্চি, বাবুর্চির বউ, জেসমিনের ছেলে, এলাকার ছেলে, সভাপতি, গায়ক দল–সবাই যার যার জায়গায় চেষ্টা করেছেন। কেউ পেরেছেন, কেউ পারেননি। আসলে জায়গায় আগুনের আঁচ লাগে না। একবার করে মনে হয়েছে, এই চলচ্চিত্রে অভিনেতা ও পরিচালক নরেশ ভূঁইয়ার কিছু কর্মযজ্ঞ থাকলে ভালো হতো। মোবারক চরিত্রে তারিক আনাম খানের আরও উপস্থিতি কী দেওয়া যেত–নিকট অতীতের গল্পে? 

পরিচালক তানিম নূর অনেক শিল্পী নিয়ে কাজ করতে আনন্দ পান, নাকি এটি তার স্টাইল? ১৩ বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন ফিরে এসো বেহুলা চলচ্চিত্র। সেখানে অভিনয় করেছিলেন ইন্তেখাব দিনার, জয়া আহসান, হুমায়ুন ফরীদি, মামুনুর রশীদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, শহীদুজ্জামান সেলিম, তৌকীর আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, স্বাগতাসহ আরও অনেকে। ফিরে এসো বেহুলা যেমন মনযাত্রার গল্প; তেমনি উৎসব হাস্যরসাত্মক মনস্তাত্ত্বিক গল্প। তানিম নূর একজন সব্যসাচী। উৎসবের প্রযোজনা সংস্থা ডোপ প্রডাকশনের চেয়ারপারসন হওয়ার পাশাপাশি একজন কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, শব্দ সংযোজক ও পরিচালক। তাঁর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ মানি হানি (২০১৯), কন্ট্রাক্ট (২০২১), কাইজার (২০২২)। একের পর এক থ্রিলারধর্মী গল্প নির্মাণ করেছেন। তাই পারিবারিক চলচ্চিত্র হিসেবে ঘোষিত উৎসব নিজেই অন্যরকম এক থ্রিলারের সৃষ্টি করে। এটিকে সুপারন্যাচারাল মোরাল থ্রিলার বলা যেতে পারে। কারণ, ভৌতিক উপাদান, মনস্তাত্ত্বিক উত্তেজনা, নৈতিক থ্রিল, ভবিষ্যতের ধ্বংসাত্মক চিত্র–এর প্রমাণ। তানিম নূর তাঁর চিরাচরিত ঢংয়ে কাহিনিতে টুইস্ট রাখার চেষ্টা করেছেন; যা এক কথায় অসাধারণ। 

নব্বই দশকের চিত্র ফুটিয়ে তোলার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন; যা আশি-নব্বই দশকের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে সফল তানিম। তবে কিছু দৃশ্যে পোশাক, অলংকার ও এলাকার শিল্প নির্দেশনায় আরও একটু যত্নবান হওয়ার সুযোগ ছিল। হয়তো পরের গল্পে উৎরে যাবেন পরিচালক। সংগীত ও তৎকালীন চলচ্চিত্রের পোস্টার নির্বাচন ছিল এক কথায় ফুল প্রুফ প্ল্যান। এখানে বলে রাখা ভালো, ভবিষ্যতের গল্প বলায় সিনেমাটিক দৃশ্য সৃষ্টির দাবি রাখে। সেটি ছয় ঘণ্টা পরের ঘটনা হোক বা তার আরও পরের। বেশকিছু দৃশ্যকে বলয়ের মধ্যে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল। না রাখলেও হতো। রাখলে আরও একটু ভাবা যেত। যেমন জেসমিনের বাবার দৃশ্য বা নরেশ ভূঁইয়ার দৃশ্য। তানিম নূর অনেকটা সময় কষ্ট করেছেন, এমন একটি চলচ্চিত্র উপহার দিতে; তাঁর সঙ্গে প্রথম থেকেই কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ আহমেদ শাওকীর মতো ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল নির্মাতা ছিলেন এবং আছেন। কেউ সহকারী হিসেবে; কেউবা আবার সহযোগী হিসেবে।

পাশাপাশি তানিম নূরের পাশে সহ-প্রযোজক হিসেবে রয়েছে লাফিং এলিফ্যান্ট। পরিবেশক হিসেবে রেদওয়ান রনির চরকি টিম, বিশ্ব পরিবেশনার দায়িত্বে থাকা স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা), পথ প্রোডাকশনস (অস্ট্রেলিয়া), রেভেরি ফিল্মস (আয়ারল্যান্ড) তো উৎসবমুখর করছেই। সুযোগের সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে হয়, তানিম নূর তা জানেন বলেই যে ঈদে শাকিব খানের তাণ্ডব মুক্তি পেয়েছে; সে সময়টাই উৎসবের জন্য বেছে নিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মাঠে নামতে হয়, প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে হয়। প্রথমে কম সিনেমা হল পেলেও পরে উৎসবের বেড়েছে হল সংখ্যা। দর্শকও গ্রহণ করছে ভিন্ন রোমান্সের এই গল্পটিকে। 

চিত্রনাট্যের গতিময়তা যতটা রয়েছে উৎসবে। সংলাপ যেন চলচ্চিত্রটিকে আরও উৎসবমুখর করে দিয়েছে। ‘সব জায়গায়ই এই লোকটা কমন, ওর কোনো গলা আছে? ও ডায়ালগ ডেলিভারি দিতে পারে?’, ‘ধ্যাৎ, পাইছে এক জিনিস’, ‘এলাকায় ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও আমার দোষ’, ‘আপনে হইলেন গিয়া লবণ’, ‘বৃন্দাবন দাসের হাড়কিপটা নাটকটা তুমি অনেক বেশি সিরিয়াসলি নিয়া ফেলছো’, ‘খাইষ্টা জাহাঙ্গীর উষ্টা খাক’, ‘এই নতুন নতুন অভিনেতাগো কী একটা ঝামেলা, কোনো অরিজিনালিটি নাই’– এরম অনেক সংলাপ আছে; যা মনে থাকবে আড্ডায়, ভাবনায় ও লেখায়। সংলাপ রচয়িতা আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়া প্রশংসার দাবি রাখে। তবে পারিবারিক ড্রামায় দুই একটা জায়গায় ডাবল মিনিং-এর ডায়ালগ না রাখলে কি বেশি অসুবিধা হতো? 

চিত্রগ্রহণে রাশেদ জামান তাঁর পূর্ববর্তী কাজের ছাপ রেখেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই চিত্রগ্রাহক বিশ্বাস (২০১০), মনকে মাইন্ড (২০১০), ডুব সাঁতার (২০১১), দেশা: দ্য লিডার (২০১৪), আয়নাবাজি (২০১৬) চলচ্চিত্রগুলোর চিত্রগ্রহণ করেছিলেন। উৎসব তাঁর জীবনের আরেকটি পালক। যেখানে তিনি ভূত-ভবিষ্যতের চিত্র ধারণের সুযোগ ও সুবিধা পেয়েছেন। বড়পর্দার একটি ভিন্ন দিক হলো– বড় করে দেখা যায়। একটি ক্লোজ শট তখন বেশি ক্লোজ লাগে। এক্সট্রিম লং বা বিগ লং শট যেন অনেকটা আরাম দেয়। আবার ক্লোজ শট চলচ্চিত্রের ডিমান্ড বা চাহিদার কারণে সৃষ্টি করা হয়। উৎসব এই রীতি অবলম্বন করেছে। সংলাপ ও মিউজিক ছাড়া এক সুতোয় চিত্রগুলো গেঁথে দিলে হাতের কাজের নকশিকাঁথার মতোই মনে হবে। 

একজন ডেটা এনালিস্ট বা করপোরেট টাইমটেবিল হিসেবে জীবন পার করতে না চাওয়া চলচ্চিত্র সম্পাদক সালেহ সোবহান অনীম উৎসবে তাঁর কাঁচি বেশ ভালোভাবেই চালিয়েছেন। যেন একটি নকশা তৈরি হয়। একজন পরিচালক, প্রযোজক, কালারিস্ট ও চিত্র সম্পাদকের চেয়ারে বসে চলচ্চিত্রটিকে কখনও পাখির চোখে, কখনও পিঁপড়ার চোখে দেখেছেন; যা ট্রানজিশনগুলো দেখলেই বোঝা যায়। প্রজন্ম টকিজ (২০১৭), তাকদীর (২০২০), কারাগার (২০২২), কালপুরুষ (২০২৪) ওয়েব সিরিজগুলোর সম্পাদনায় প্রমাণ করে; সালেহ সোবহান অনীম হাত পাকিয়ে চলচ্চিত্রে এসেছেন। 

উৎসবের মূল দুটি গান– আইদিদ রশিদের কথা ও কণ্ঠে তুমি এবং আর্টসেলের রুমান আহমেদের কথা ও জর্জ লিংকন ডি কস্টার গাওয়া ধূসর সময়। উৎসবের সংগীতায়োজন করেছে লেভেল ফাইভ ব্যান্ড। ধূসর সময় গানটি নাইন্টিজের সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেছে। তুমি গানটিও বেশ মুগ্ধ করেছে। আর আবহ সংগীত বা ফলি সাউন্ড সংগতিপূর্ণ ছিল। 

৭ জুন ২০২৫। চলচ্চিত্রটি যেমন ঈদে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তেমনি গল্পেও উঠে এসেছে ঈদের আমেজ। ঈদের উৎসব। এই চলচ্চিত্রের বাসাটির নাম মোবারক ভিলা হলেও জাহিদ হাসান তথা জাহাঙ্গীরের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ‘উৎসব’। 
চার্লস ডিকেন্সের অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল অবলম্বনে তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ যে শুধু ঈদুল আজহার চলচ্চিত্র নয়। এটি সর্বজনীন ও সব সময়ের গল্প। যেখানে ব্যক্তিগত পরিবর্তন, মানবিকতা, দয়া এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে তুলে ধরা হয়েছে নিপুণভাবে। সুকৌশলে উৎসব টিম বোঝাতে চেয়েছে মানুষ বদলাতে পারে, যদি সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। ভালোবাসা, সহানুভূতি ও উদারতা মানুষকে সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধ করে। ধন-সম্পদের চেয়ে মানুষের সম্পর্ক ও মানবতা অনেক বড়। 

চলচ্চিত্রটি দেখার পর স্কটিশ দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, ব্যাঙ্গাত্মক লেখক ও ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইলের মতো করে মনে কিছু প্রশ্ন জেগে ওঠে। মোবারকের ভূত কি শুধুই কল্পনা, নাকি সমাজে প্রকৃত অনুশোচনার প্রতীক?, জাহাঙ্গীরের পরিবর্তন কি শুধু আবেগপ্রবণ উপলব্ধি, নাকি এটা আত্মিক নবজন্ম?, এই নৈতিকতার ভিত্তি কতটা গভীর? এটি কি আত্মিক জাগরণের ফল, না কি আবেগনির্ভর মধ্যবিত্ত মানবতাবাদ? সব প্রশ্নের জবাব হয়তো আমার, আপনার বা পরিচালকের কাছেই আছে। তা জানতে চলচ্চিত্রটি দেখতে হবে। 

মো.

ইসহাক ফারুকী: সাংবাদিক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র চলচ চ ত র র র পর চ ল ত ত র গল প কর ছ ল ন র চর ত র চর ত র র উৎসব র ম ব রক দ বন দ ন র পর কর ছ ন চ ত রগ ত রগ ল আয়ম ন আহস ন উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে মৌসুমী ফল উৎসব অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জে সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে এক ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো “মৌসুমী ফল উৎসব ২০২৫”।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকালে রুপগঞ্জ উপজেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন রূপগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলা থেকে আগত গণমাধ্যমকর্মীরা।

প্রকৃতিতে বইছে ফলের সুবাস। বাহারি রং আর স্বাদের ফলের পসরা নিয়ে সেজেছে প্রকৃতি। রূপগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম টক-মিষ্টি নানা ফলের স্বাদ ভাগাভাগি করতে ‘মৌসুমি ফল উৎসবের আয়োজন করে।

আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, লটকন, আমলকি, ড্রাগনসহ বাহারি এবং নানা স্বাদের ফলের সমারোহে আয়োজিত হয় মৌসুমি ফল উৎসব। উৎসবে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা মৌসুমী ফলের আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।

রুপগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের সাংবাদিক সালাউদ্দিন জসিম, দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার ইসরাফিল ফরাজী, রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও মোহনা টিভির রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ছাত্তার আলী সোহেল, রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মুক্তার হোসেন এবং সাংবাদিক ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ । এ ধরনের আয়োজন সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবসময় সাংবাদিকদের ইতিবাচক উদ্যোগে সহযোগিতা থাকবে। আমরা শুধু পেশাগত দায়িত্বে সীমাবদ্ধ নই, সাংবাদিকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সামাজিক বন্ধনে বিশ্বাসী। 

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মধ্যে ফলভোজের আয়োজন করা হয়, যেখানে সবাই মিলেমিশে উপভোগ করেন বিভিন্ন জাতের রসাল মৌসুমী ফল।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বরঙে নীল উৎসব
  • রূপগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে মৌসুমী ফল উৎসব অনুষ্ঠিত
  • ১৮ দিনে কত আয় করল ‘উৎসব’
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠল
  • শিল্পকলায় জবি চলচ্চিত্র সংসদের উৎসব শুরু
  • লেখাটা পড়তে গিয়ে এতটাই ভালো লাগল যে চোখে পানি চলে এল
  • ৬ গোলের জয়ে শেষ ষোলোতে ম্যানসিটি
  • ‘উৎসব’ চলচ্চিত্রের স্ব-ঐতিহ্যে ফিরে আসার টার্নিং পয়েন্ট 
  • পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ সিনেমাটি ঈদের দুই সপ্তাহ পরও হাউজফুল যাচ্ছে