পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ, এমন ট্যাগলাইন নিয়ে মুক্তি পায় তানিম নূরের সিনেমা ‘উৎসব’। মুক্তির পর দেখা গেল কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। এবারের ঈদে ‘উৎসব’ হয়ে উঠেছে পারিবারিক দর্শকের প্রথম পছন্দ। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে সিনেমাটি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ। মুক্তির ১৮ দিনের মাথায় দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ‘উৎসব’-এর টিকিট বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে আড়াই কোটি টাকা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উত্তর আমেরিকাতেও ভালো সাড়া পাচ্ছে সিনেমাটি। সেখানে ‘উৎসব’ গড়েছে নতুন রেকর্ড—ঢালিউড সিনেমার সর্বোচ্চ ওপেনিংয়ের তালিকায় এখন ৩ নম্বরে রয়েছে ছবিটি।
আরও পড়ুন‘উৎসব’ ছবিটার কথা ভুলতে পারছি না কেন?১৪ জুন ২০২৫তানিম নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ দিনেই মাল্টিপ্লেক্সে দুই কোটি টাকার বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আজ ১৯তম দিনেও ভালো সাড়া পাচ্ছি। হল থেকে ফিরে দর্শকেরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, যার ফলে টিকিট বিক্রি আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেকেই একাধিকবার দেখছেন, কেউ একা দেখার পর পরেরবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসছেন। ২০ তারিখ থেকে উত্তর আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, সেখান থেকেও ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
‘উৎসব’-এর উত্তর আমেরিকার আন্তর্জাতিক পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন স্কেয়ারক্রোর স্বত্বাধিকারী অলিউল্লাহ সজীব এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, প্রথম ৩ দিনে ‘উৎসব’–এর আয় ৫৩ হাজার ডলার। এটি উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের সিনেমার মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়। এ মুহূর্তে ডোমেস্টিক (ইউএসএ+কানাডা) টপচার্টের ২১ নম্বরে অবস্থান করছে সিনেমাটি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ
ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতি ও অনুভূতির এক অনন্য প্রতীক। পূর্ণিমার রাতে নদীতে জ্যোৎস্না পড়লে যেমন মনে হয় সোনালি রূপ ঝলমল করছে, তেমনি ইলিশের রুপালি ঝলক যেন বাঙালির খাবার টেবিলে আনন্দের আলো ছড়ায়। কিন্তু সেই আলো গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছায় না। তাদের কাছে ইলিশ আজ স্বপ্নের মতো ছোঁয়া যায় না, শুধু কল্পনায় ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশকে ইলিশের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে ইলিশ শুধু খাবার নয়, আবেগ। ঈদ হোক বা পূজা, অতিথি এলে কিংবা উৎসবের দিনে, ইলিশ ছাড়া খাবারের টেবিল অসম্পূর্ণ মনে করেন অনেক মানুষ। কিন্তু এই আনন্দ সব ঘরে ভাগ হয়ে যায় না। শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর কিংবা গ্রামীণ গরিব পরিবারগুলোর কাছে ইলিশ এখন বিলাসবস্তু। একসময় বাজারে গিয়ে ছোট একটা ইলিশ কেনা গেলেও এখন দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে এটা একেবারেই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কিংবা সাগর সব জায়গায় এই মাছের সমারোহ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। অথচ এ দেশের অনেক গরিব মানুষ বছরের পর বছর মুখে ইলিশ তুলে খেতে পারে না। দাম এত বেশি যে সাধারণ শ্রমিক বা দিনমজুর পরিবারের কাছে এটা এখন বিলাসিতা।
দেশের প্রান্তিক শ্রমজীবী পরিবারগুলোর বেশির ভাগই বছরে একবারও ইলিশ কিনতে পারে না। কখন সর্বশেষ তারা ইলিশ খেয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই হয়তো মনেই থাকে না। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশি আসে এই দেশ থেকে। বর্তমানে মাঝারি আকারের এক কেজি ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকার ওপরে। আর একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মাসিক আয় গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। ফলে তাঁদের জন্য ইলিশ কেনা মানেই মাসের বাজেট ভেঙে যাওয়া।
ইলিশ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। নদীদূষণ, অতিরিক্ত নৌ চলাচল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে গেছে। জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে অবৈধ জালের ব্যবহার উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। দালাল ও ব্যবসায়ী চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে মধ্যবিত্তও হিমশিম খায়, আর গরিবদের জন্য ইলিশ নাগালের বাইরেই থেকে যায়। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ সীমিত থাকে। এতে দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের স্বপ্নের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।
ইলিশের স্বাদ যেন কেবল ধনীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সে জন্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জাটকা নিধন কঠোরভাবে দমন করতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে নদীতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। নদীদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইলিশ আহরণের মৌসুমে সঠিক সময়ে মাছ ধরার সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা দিলে উৎপাদন বাড়বে। এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে ইলিশের দাম কমে আসবে এবং সব শ্রেণির মানুষ সমানভাবে এর স্বাদ নিতে পারবে।
ইলিশকে যদি আমরা সত্যিই ‘জাতীয় মাছ’ বলি, তাহলে তার স্বাদ কেবল ধনী-সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। গরিব শিশুরাও যেন উৎসবের দিনে অন্তত একটুকরো ইলিশ খেতে পারে। এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ফারিহা জামান নাবিলা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা