বাংলাদেশের ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের শিল্পী–কলাকুশলীদের স্বীকৃতি দিতে চতুর্থবারের মতো দেওয়া হচ্ছে ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি ও ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪। আজ ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের আয়োজনে ২৯টি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে।
দ্য ডেইলি স্টার–এর হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস ইমরান কাদির, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ওমর হান্নান এবং মিডিয়াকম লিমিটেডের সিইও অজয় কুমার কুন্ডু আলাদা বক্তব্যে জানান, চলচ্চিত্র, নাটক ও সিরিজ ক্যাটাগরিতে ৯ শাখায় এবার পুরস্কার দেওয়া হবে। সমালোচক পুরস্কারে থাকবে ১২টি ক্যাটাগরি। সংগীতের থাকবে ৪টি পুরস্কার, কনটেন্ট নির্মাতাদের ৩টি পুরস্কার দেওয়া হবে। আর দর্শক ভোটে সিরিজ বা নাটক থেকে একটি পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ আয়োজনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের যেমন স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তেমনি নবাগতদের কাজকেও আলাদা করে মূল্যায়ন করা হবে।

দ্য ডেইলি স্টার-এর চিফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান মনে করেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো দেশের বিনোদনের ধরন পাল্টে দিচ্ছে। এ পরিবর্তনের পেছনে যাঁরা চালিকা শক্তি, যাঁদের সৃজনশীলতায় এই আমূল বদল, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। ‘অভিজ্ঞ থেকে উদীয়মান সবাইকে সম্মান জানাতে এই আয়োজন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর কনটেন্টকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার আন্দোলনে যারা সাহসী, মেধাবী ও বাধার দেয়াল ভেঙে দিচ্ছে, তাদের সম্মান জানাতেই এই আয়োজন।’

সাংস্কৃতিক বিকাশে সব সময়ই কাজ করে যেতে চায় মিডিয়াকম লিমিটেড, বললেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও অজয় কুমার কুন্ডু। তিনি বলেন, ‘দেশের বৃহৎ একটা শ্রেণি এখন ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দর্শক। এখানে কাজের পরিধি এখন বাড়ছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এই কাজগুলোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সেই অর্থে স্বীকৃতি ছিল না। সৃজনশীল চেতনার পাশে থাকতেই চতুর্থবারের মতো আমাদের পথচলা শুরু।’

সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম প রস ক র কনট ন ট

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ