ইরান থেকে দেশে ফিরতে আড়াই শ বাংলাদেশির নিবন্ধন
Published: 24th, June 2025 GMT
ইরান থেকে দেশে ফিরে আসতে এখন পর্যন্ত ২৫০ বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৯০ জনকে পাকিস্তান স্থলসীমান্ত দিয়ে ফেরত আনা হবে। এরই মধ্যে ওই ৯০ জন যাতে ইরান থেকে সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে সহজে প্রবেশ করতে পারেন, সে জন্য ইসলামাবাদকে তথ্য দিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে নারী–শিশুদের পাশাপাশি ইরানে চিকিৎসার জন্য যাওয়া লোকজনকে দেশে ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে যেসব বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন তাঁদের স্থলপথে ইরান থেকে পাকিস্তানে নেওয়া হবে। দেশে ফিরতে বাংলাদেশিরা ইরানের মারজাভেহ থেকে বেলুচিস্তান প্রদেশের তাফতান সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করবেন। এরপর তাঁদের ফ্লাইটে করাচি থেকে দুবাই ট্রানজিট নিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। করাচি থেকে দুবাই ছাড়াও অন্যান্য বিকল্প রুটও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তাঁদের যাত্রা শুরুর পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতির ওপর। এরই মধ্যে প্রায় ৯০ জনের তথ্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইরান থেকে বাংলাদেশিদের পাকিস্তান হয়ে ফেরত আনার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইরানে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এর মধ্যে তেহরানে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। দেশটিতে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৭২ জন, যাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৬৬ জন। দেশে ফিরতে আগ্রহী সব বাংলাদেশিকে দ্রুত নাম-ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় তথ্যসহ তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ লক্ষ্যে যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য হটলাইন নম্বরগুলোয় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে—বাংলাদেশ দূতাবাস, তেহরান (হটলাইন): +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮, +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা (হটলাইন): +৮৮০১৭১২০১২৮৪৭।
আরও পড়ুনইরান থেকে ১০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু১৯ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা