ইরানের লক্ষ্যবস্তু হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ৭৯% মার্কিনি
Published: 25th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রায় ৭৯ শতাংশ মার্কিনি। তারা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত তাদের দেশের সামরিক কর্মীদের নিয়েও একইভাবে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় ৮৪ শতাংশ নাগরিক ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ জরিপ পরিচালনা করে রয়টার্স/ইপসোস। গত সোমবার ভোরে কাতারে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগেই জরিপটি শেষ হয়। দেশব্যাপী ১ হাজার ১৩৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের ওপর চালানো জরিপে ওয়াশিংটনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে বিভক্তি দেখা গেছে। তারা ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। জরিপে প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের রেটিং ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জানুয়ারিতে শুরু হওয়া তাঁর বর্তমান মেয়াদের সর্বনিম্ন স্তর।
প্রায় ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে সমর্থন করেছেন। মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত রাখার পক্ষে, যেখানে ৪৯ শতাংশ বিরোধিতা করছেন। তবে, ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ৬২ শতাংশ আরও হামলার পক্ষে এবং ২২ শতাংশ হামলার বিরোধিতা করেছেন।
ইরানের সঙ্গে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার তাৎক্ষণিক অবসানকে সমর্থন করেন কিনা জানতে চাইলে রিপাবলিকানরা আরও গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ৪২ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে ওই সংঘাত থেকে ওয়াশিংটনের বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন এবং ৪০ শতাংশ এই ধারণার বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট সদস্য ইরানে আরও বোমা হামলার বিরোধিতা করেছিলেন এবং অবিলম্বে সংঘাতের অবসান ঘটানোর পক্ষে ছিলেন।
ট্রাম্প গত শনিবার মধ্যরাতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেশের বাইরের যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ এড়াতে ট্রাম্পের বারবার প্রতিশ্রুতির পরও এটি ছিল বৈদেশিক নীতিতে একটি নাটকীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন। ট্রাম্প ‘আমেরিকাকে প্রথমে রাখার’ প্রতিশ্রুতিকে কেন্দ্র করে তাঁর রাজনৈতিক ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন এবং দুই মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারেই তিনি বিদেশি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে না জড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
কৈগরদাসকাঠি চরে জীবিকার সংকট
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নদীর তীরে কৈগরদাসকাঠি চরের বাসিন্দা সিদ্দিক শেখ। জীবনের ৫০ বসন্তের ৪০টি কেটেছে এ চরে। তাঁর চোখের সামনেই বালুতে ভরাট হয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। গড়ে উঠেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এক দশক আগেও এসব জমিতে উৎপাদিত ধানে বছর চলে যেত সিদ্দিক শেখসহ শতাধিক পরিবারের।
পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে সিদ্দিক শেখ বললেন, ‘জমিতে ফসল হয় না, নদীতে মাছ পাই না। সারারাত নদীতে জাল টেনে ১২০ টাকার মতো মাছ ধরা পড়ে। কীভাবে চারজনের সংসার চলে, আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না।’
সিদ্দিক শেখের সঙ্গে কথা বলার সময়ে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শাফিয়া বেগম। তাঁর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। অসুস্থ শরীরে স্বামী-সন্তানের জন্য ঠিকমতো রান্নাও করতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একসময় নিজেদের ধানেই বছর চলে যেত।’
কৈগরদাসকাঠি চরে এমন গল্পের সংখ্যা কম নয়। রেজাউল শেখ নামের এক ব্যক্তি জানালেন, আগে এখানে তারা ধান চাষ ও মাছ ধরে জীবন চালাতেন। ধান রোপণ ও মাছের ঘের প্রস্তুত করার জন্য অনেক শ্রমিক লাগত, এমনকি বাইরে থেকেও শ্রমিকরা দুই-তিন সপ্তাহের জন্য আসতেন। অথচ এখন দেখলে মনে হয় মরুভূমিতে তাদের বসবাস।
পশুর নদসংলগ্ন কাপাসডাঙ্গা গ্রামে গড়ে ওঠা কৈগরদাসকাঠি চরের একদিকে বাগেরহাটের রামপাল, অপরদিকে খুলনার দাকোপ উপজেলার সীমান্ত। ২০১০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রামপালের সাপমারি, কাটাখালি ও কৈগরদাসকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৮৩৪ একর কৃষি, মৎস্য ও আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর ৯৫ শতাংশই তিন ফসলি কৃষিজমি। সে সময় এ প্রকল্পের জন্য ভিটেমাটি হারাতে হয় অনেক পরিবারকে। সরকার ১৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে বাস্তুহারাদের ঠাঁই দিলেও দুঃখ ঘোচেনি তাদের।
কৈগরদাসকাঠি চরের অনেক বাসিন্দা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চরের অদূরেই বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থানীয়দের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য নদীতে পড়ার পর থেকে মাছ কমতে শুরু করে। সারাদিন মাছ ধরেও সংসার চালানোর খরচ ওঠে না তাদের।
আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করা হেনা বেগম নামের এক নারী জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হওয়ার পর কিছুদিন আগে সরকার আশ্রয়কেন্দ্রে একটি ঘর দিয়েছে। এর আগে অনেক বছর গোলপাতার ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে চারজন নিয়ে থাকতেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বামী খুলনায় রিকশা চালান আর তিনি নদীতে মাছ ধরেন।
জীবিকা সংকটে পড়েছেন চরের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী রহমান ফকিরও। তিনি জানান, বাপদাদার আমল থেকে ধান চাষ আর নদীতে মাছ ধরে বড় হয়েছেন। এখন না হয় ধান, আর না আছে মাছ। বাধ্য হয়ে তিন বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছেন। কিন্তু বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান নদীর পানিতে মিশে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গবেষণায় দেখা যায়, নদীতে প্রতি লিটার পানিতে যে পরিমাণে মাছের রেণু পাওয়া যেত, ডিম পাওয়া যেত, সেটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে তৈরি হয়েছে জীবিকা সংকট।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না ফেরদৌসি বলেন, জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে উপজেলাজুড়ে তাদের কাজ চলছে। যদিও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। কৈগরদাসকাঠি চর পরিদর্শন করে বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।