যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রায় ৭৯ শতাংশ মার্কিনি। তারা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত তাদের দেশের সামরিক কর্মীদের নিয়েও একইভাবে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় ৮৪ শতাংশ নাগরিক ক্রমবর্ধমান সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ জরিপ পরিচালনা করে রয়টার্স/ইপসোস। গত সোমবার ভোরে কাতারে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগেই জরিপটি শেষ হয়। দেশব্যাপী ১ হাজার ১৩৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের ওপর চালানো জরিপে ওয়াশিংটনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে বিভক্তি দেখা গেছে। তারা ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। জরিপে প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের রেটিং ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জানুয়ারিতে শুরু হওয়া তাঁর বর্তমান মেয়াদের সর্বনিম্ন স্তর। 
প্রায় ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে সমর্থন করেছেন। মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত রাখার পক্ষে, যেখানে ৪৯ শতাংশ বিরোধিতা করছেন। তবে, ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ৬২ শতাংশ আরও হামলার পক্ষে এবং ২২ শতাংশ হামলার বিরোধিতা করেছেন। 

ইরানের সঙ্গে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার তাৎক্ষণিক অবসানকে সমর্থন করেন কিনা জানতে চাইলে রিপাবলিকানরা আরও গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ৪২ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে ওই সংঘাত থেকে ওয়াশিংটনের বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন এবং ৪০ শতাংশ এই ধারণার বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ডেমোক্র্যাট সদস্য ইরানে আরও বোমা হামলার বিরোধিতা করেছিলেন এবং অবিলম্বে সংঘাতের অবসান ঘটানোর পক্ষে ছিলেন। 

ট্রাম্প গত শনিবার মধ্যরাতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেশের বাইরের যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ এড়াতে ট্রাম্পের বারবার প্রতিশ্রুতির পরও এটি ছিল বৈদেশিক নীতিতে একটি নাটকীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন। ট্রাম্প ‘আমেরিকাকে প্রথমে রাখার’ প্রতিশ্রুতিকে কেন্দ্র করে তাঁর রাজনৈতিক ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন এবং দুই মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারেই তিনি বিদেশি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে না জড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ