নিজের কাজ ফেলে ট্রলি ঠেলে বেড়ান কর্মচারীরা, ব্যবস্থা নেবে দুদক
Published: 25th, June 2025 GMT
নিজের কাজ ফেলে রোগীদের ট্রলি ঠেলে বেড়ান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। এর বিনিময়ে তারা রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করেন টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদেরকে মজুরি দিয়ে থাকে।
বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাজশাহীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল এনফোর্সমেন্ট অভিযানে গিয়ে এ চিত্র দেখেছে। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভাড়া নিয়ে দৈরাত্মও দুদকের নজরে এসেছে। এ দুটি ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি রামেক হাসপাতালের আউটডোর ডিসপেনসারির ফার্মাসিস্ট ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাওয়া এক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে।
আরো পড়ুন:
দেশে এসে মোকাবিলা করতে হবে
সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা: দুদক চেয়ারম্যান
শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
দুদকে করা অভিযোগে বলা হয়, রফিকুল ইসলামের শর্ট স্লিপে সব প্রকার ওষুধের গড়মিল আছে। মন্টিলুকাস, ফেকসু, মেটফরমিন, ওরস্যালাইন, মেট্রো, ডায়াগন টু, জিটিএন ও প্যারাসিটামল খরচের সঙ্গে স্লিপের মিল থাকে না বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। মেইন স্টোরের ফার্মাসিস্ট মীর শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে দেয়া হয়। টিমের সদস্যরা আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে অভিযান চালান। তারা বেশকিছু নথিপত্রও নিয়ে যান।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, “অভিযানে আমরা স্টোর রুমের খাতা দেখেছি। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে আমরা কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দেব।”
অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরা ট্রলি পরিচালনা করে। তাদের দৈরাত্ম লক্ষ্য করেছি। এছাড়া হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নিয়েও দৈরাত্ম দেখেছি। প্রাথমিকভাবে এ দুটি ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখেছি। আমরা এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করব। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.
ওষুধ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ রকম ভৌতিক কমপ্লেইন থাকেই। এটা নিয়ে আমরা ভাবছি না।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা