টানা ১২ দিন তীব্র পাল্টাপাল্টি হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার থেকে দুই দেশের যুদ্ধবিরতির পর তাঁদের অনেকে এখন মত পাল্টেছেন। আগ্রহীদের অনেকেই এখন আর দেশে ফিরতে চাইছেন না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ইরান থেকে দেশে ফেরত আসতে এখন পর্যন্ত ২৫০ বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। এঁদের মধ্যে ৯২ জনকে পাকিস্তান স্থলসীমান্ত দিয়ে ফেরত আনার প্রস্তুতি চলছিল। ইরান থেকে পাকিস্তানে প্রবেশ সহজ করতে ওই ৯২ জনের তথ্য ইসলামাবাদের কাছে দিয়েছে ঢাকা; কিন্তু এদের অনেকেই যুদ্ধবিরতির পর দেশে ফিরতে আগ্রহী নন।

জানা গেছে, ওই ৯২ জনের ২৯ জনের প্রথম দলটি তেহরান থেকে ইরান–পাকিস্তানের তাফতান সীমান্তের দিকে রওনা দেবে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দলটি পাকিস্তান পৌঁছাবে। এরপর তাঁদের ফ্লাইটে করাচি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং তেহরান ও এর আশপাশের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছিল, তাতে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। তবে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে। ফলে দেশে ফেরত আসতে আগ্রহী বাংলাদেশির সংখ্যা কমছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ফেরত আসতে ২৫০ জন নিবন্ধন করলেও পাকিস্তান হয়ে ফেরত আনতে ৯২ জনের তালিকা ইসলামাবাদকে দেওয়া হয়েছিল। এঁদের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত প্রথম ৪০ জন এবং পরে ২৯ জন ফেরত আসতে চাইছেন। বাকিরা পরিস্থিতি বিবেচনায় থেকে যেতে চাইছেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে। ফেরত আসতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য সুযোগ থাকছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা জানান, ইরানে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তেহরানে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত পর স থ ত হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ