এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন তুলে নিতে অর্থ উপদেষ্টার আহ্বান
Published: 26th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “কিভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তার ধারণা পাওয়া গেছে। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করে অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকের এ কথা বলেন।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং প্রণীত নীতি বাস্তবায়নপূর্বক রাজস্ব আহরণ-এ দুটো কার্যক্রম পৃথকীকরণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এরপর মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া তৈরি করে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জ করে ১২ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৫টায় অর্থ উপদেষ্টা বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের আলোচনার আহ্বান জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডাকেন। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়।
এই বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “তারা না আসলেও সব সিনিয়র অফিসার, কমিশনাররা আসছে। এরা সবাই রেসপন্সিবল। যারা আন্দোলন করছে, বেশিরভাগই তাদের অধীনে কাজ করে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি এবং এই সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হবে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি। সমস্যার সমাধান বেশ তাড়াতাড়ি হবে। আগামী সপ্তাহে আরো একটি সভা করব। তখন একটা চূড়ান্ত হবে।”
শনিবারে এনবিআর কর্মকর্তাদের একটি কর্মসূচির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সেটার ব্যাপারে তাদেরকে অনুরোধ করেছি। তারা যেন ইমিডিয়েটলি এটা উইথড্রো করে। এখানে আমাদের কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই। দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে তারা এটা শুনবে বলে আশা করছি। কিছুদিনের মধ্যে দেখবেন সমাধান করে দেব।”
অন্যদিকে, এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আজকে আড়াই ঘণ্টারও বেশি লম্বা সময় ধরে মিটিং হয়েছে। রেভিনিউজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ১৭ জন সর্বোচ্চ অথরিটি বা সদস্যের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। একজন অফিসিয়াল কাজে বাইরে থাকার কারণে আসতে পারেন নাই।সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সদস্যরা আলোচনা করেছেন।”
তিনি বলেন, “আপনারা যেভাবে উদ্বিগ্ন, আমরাও একইভাবে উদ্বিগ্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যার সাথে আমদানি রপ্তানি সবকিছু জড়িত। সেখানে যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো হয়েছে, সেটা কিভাবে হলো সে বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে একটা সুন্দর সলিউশন হবে। স্যার সেই দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে। আলোচনা চলছে, আরো আলোচনা হবে। আশা করি একটা সুখবর দিতে পারব।”
তিনি বলেন, “এই আলোচনা শেষ হলেও আন্দোলনরত কর্মকর্তারা উনাদের মধ্যে আলোচনা করছেন।উনারা সিদ্ধান্ত দিলে আজকের মধ্যেই একটা সলিউশন হবে বলে আশা করি।”
এনবিআর চেয়ারম্যানি বলেন, “এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে, টেলিফোনে, মেসেজ বিনিময়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। যারা রাজস্ব আহরণ করেন, তারাও অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং টেলেন্টেড মানুষ। এতকিছুর পরও সারা দেশের রেভিনিউ কালেকশন বেশ ভালো ট্রাকেই আছে। আন্দোলন করলেও তারা সাথে সাথে এই কাজটাও করছে। ব্যাপারটা এমন না যে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তাদের কনসার্নগুলো ভেন্টিলেট করা গেছে।আশা করি এগুলোর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে।যখন সমাধান হবে সবকিছুরই সমাধান হবে।”
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকেলে দুই ধাপে মোট ১৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এ সময় অন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রসংগঠনের নেতারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রশাসনিক সহযোগিতা, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ভোট গ্রহণপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতামত দেন।
আলোচনায় ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ডাকসুর নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা, যাতে পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনও নির্দিষ্ট সময়ে হতে পারে; ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ও ৭(ক) ধারা পরিবর্তন করা; শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা সাপেক্ষে ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করা; ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হওয়া এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) আমাদের ডাকসুর গঠনতন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তাবিত দাবিগুলোর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি অথচ আমরা সব ছাত্রসংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের কথা বলেছি। বৈঠকে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছে।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনার পর আমাদের মনে হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো একটি বিশেষ দলের লোকদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা তাদের সব ধরনের কথা রাখতে গিয়ে ডাকসু নির্বাচন পিছিয়ে নিচ্ছে। এতে করে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একধরনের হতাশা কাজ করছে। আমরা জুন মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছি।’
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ মাস ধরে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা ও প্রতারণা করে এসেছে। আজ যে গঠনতন্ত্রের ছাপানো কপি আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। এমনকি যেসব ধারা পরিবর্তনের ব্যাপারে সব সংগঠন ঐকমত্যে পৌঁছেছিল, সেগুলোরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
নূজিয়া হাসিন বলেন, সংস্কার কমিশন কখনোই গঠনতন্ত্রের খসড়া নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। এটি পরিষ্কারভাবে দেখায়, প্রশাসন গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করতে চাইছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনাজুড়ে অনেক আলাপ হয়েছে, যেগুলো নির্বাচন কমিশনের কাজের আওতাভুক্ত নয়। তবে আমরা আমাদের আলাপগুলো প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছি। মোটাদাগে গঠনতন্ত্র সংস্কারের যেসব বিষয়ে সব ছাত্রসংগঠন একমত, যেমন সভাপতি হিসেবে ছাত্র প্রতিনিধি রাখা, সভাপতির ক্ষমতা কমানো, নির্বাচিত ডাকসুর মাধ্যমে গঠনতন্ত্র সংশোধন ইত্যাদি বিষয় দ্রুত অনুমোদনের কথা বলেছি।’
মাঈন আহমেদ বলেন, প্রায় সবাই ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরীক্ষা, জুলাই উদ্যাপনকে বিবেচনায় রাখার কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন কোনো ফয়সালা না দিলেও নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ফলোআপ মিটিংয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকারবদ্ধ।