জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “কিভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তার ধারণা পাওয়া গেছে। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করে অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যান সাংবাদিকের এ কথা বলেন।

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং প্রণীত নীতি বাস্তবায়নপূর্বক রাজস্ব আহরণ-এ দুটো কার্যক্রম পৃথকীকরণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এরপর মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া তৈরি করে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যাদেশের খসড়া পরিমার্জ করে ১২ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।

অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৫টায় অর্থ উপদেষ্টা বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের আলোচনার আহ্বান জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডাকেন। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়।

এই বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “তারা না আসলেও সব সিনিয়র অফিসার, কমিশনাররা আসছে। এরা সবাই রেসপন্সিবল। যারা আন্দোলন করছে, বেশিরভাগই তাদের অধীনে কাজ করে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি এবং এই সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি হবে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেছি। সমস্যার সমাধান বেশ তাড়াতাড়ি হবে। আগামী সপ্তাহে আরো একটি সভা করব। তখন একটা চূড়ান্ত হবে।”

শনিবারে এনবিআর কর্মকর্তাদের একটি কর্মসূচির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সেটার ব্যাপারে তাদেরকে অনুরোধ করেছি। তারা যেন ইমিডিয়েটলি এটা উইথড্রো করে। এখানে আমাদের কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই। দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে তারা এটা শুনবে বলে আশা করছি। কিছুদিনের মধ্যে দেখবেন সমাধান করে দেব।”

অন্যদিকে, এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আজকে আড়াই ঘণ্টারও বেশি লম্বা সময় ধরে মিটিং হয়েছে। রেভিনিউজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ১৭ জন সর্বোচ্চ অথরিটি বা সদস্যের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। একজন অফিসিয়াল কাজে বাইরে থাকার কারণে আসতে পারেন নাই।সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সদস্যরা আলোচনা করেছেন।”

তিনি বলেন, “আপনারা যেভাবে উদ্বিগ্ন, আমরাও একইভাবে উদ্বিগ্ন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যার সাথে আমদানি রপ্তানি সবকিছু জড়িত। সেখানে যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো হয়েছে, সেটা কিভাবে হলো সে বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে একটা সুন্দর সলিউশন হবে। স্যার সেই দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যেই কাজ চলছে। আলোচনা চলছে, আরো আলোচনা হবে। আশা করি একটা সুখবর দিতে পারব।”

তিনি বলেন, “এই আলোচনা শেষ হলেও আন্দোলনরত কর্মকর্তারা উনাদের মধ্যে আলোচনা করছেন।উনারা সিদ্ধান্ত দিলে আজকের মধ্যেই একটা সলিউশন হবে বলে আশা করি।”

এনবিআর চেয়ারম্যানি বলেন, “এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে, টেলিফোনে, মেসেজ বিনিময়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। যারা রাজস্ব আহরণ করেন, তারাও অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং টেলেন্টেড মানুষ। এতকিছুর পরও সারা দেশের রেভিনিউ কালেকশন বেশ ভালো ট্রাকেই আছে। আন্দোলন করলেও তারা সাথে সাথে এই কাজটাও করছে। ব্যাপারটা এমন না যে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তাদের কনসার্নগুলো ভেন্টিলেট করা গেছে।আশা করি এগুলোর একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে।যখন সমাধান হবে সবকিছুরই সমাধান হবে।”

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও সেই গোলের ‘গাড়ি’ নিয়ে প্রস্তুত বার্সেলোনা

গোল ফুটবলে চরম আনন্দের এক মুহূর্ত। দুই দলের ২২ ফুটবলারের লক্ষ্য থাকে এটাই—প্রতিপক্ষের জালে কোনোভাবে বলটা জড়ানো। সেই গোল ঠেকাতে কৌশলেরও কমতি নেই। ডিফেন্ডাররা এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা করেন না, যেন গোল দিতে না পারলে ক্ষতি নেই কিন্তু গোল হজম করা যাবে না!

তবে গোল ঠেকানোর এই চেষ্টা সব সময় সফল হয় না। শেষ পর্যন্ত ফুটবল মানেই যে গোল। হোক তা কম বা বেশি, কিন্তু গোল করেই তো জিততে হয়। আর গোলের খেলায় সাম্প্রতিক কালে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী দল বার্সেলোনা।

হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে বদলে যাওয়া বার্সেলোনা গোল করাকে এখন ছেলের হাতে হাতের মোয়া বানিয়ে ছেড়েছে। ব্যাপারটা এমন যে এলাম দেখলাম আর গোল করলাম! সর্বশেষ মৌসুমে তো বটেই সাম্প্রতিক প্রাক্‌–মৌসুমেও গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে কাতালুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

গত মৌসুম দিয়েই শুরু করা যাক। ২০২৪–২৫ মৌসুমে ফ্লিক যখন বার্সার দায়িত্ব নেন, তখন অনেকেরই সন্দেহ ছিল, জার্মান কোচের অধীনে বার্সেলোনা কতটা সফল হবে। কেউ কেউ আগেভাগেই ফ্লিকের বিদায়ী এপিটাফও লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু জার্মান এই কোচ ডাগআউটে এসেই আমূল বদলে দেন বার্সাকে। পুরো দলটিকেই তিনি পরিণত করেন আশ্চর্য এক গোল মেশিনে।

আরও পড়ুনবার্সেলোনায় রিয়াল মাদ্রিদ যেভাবে ‘হালি মাদ্রিদ’১২ মে ২০২৫

দলের ফরোয়ার্ড লাইনের প্রত্যেক ফুটবলার ফ্লিক হাতে ধরে কার্যকর স্কোরারে পরিণত করেন। এই চিত্র যে শুধু লা লিগাতে দেখা গেছে তা নয়, বরং প্রতিটি প্রতিযোগিতায় গোল করায় এককভাবে নিজেদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে বার্সা। গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬০ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করেছে ১৭৪টি। ম্যাচ প্রতি গোল প্রায় তিনটি (২.৯) করে। গত মৌসুমে ৩৮ ম্যাচের লা লিগায় বার্সেলোনা গোল করেছে ১০২টি, ম্যাচে বার্সার গোলগড় ২.৬৮ করে। যা ইউরোপিয়ান শীর্ষ ৫ লিগে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি লিগে গত আট মৌসুমের মধ্যে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের পরিসংখ্যানও এটি।

লিগে বার্সেলোনা সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় পেয়েছে গত বছরের ৩১ আগস্ট রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে। ৭–০ গোলে জেতে বার্সা। এরপর ৭ জানুয়ারি ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সা জিতেছিল ৭–১ গোলে। আর সব মিলিয়ে ৪ বা তার বেশি গোল করে বার্সা জিতেছে ১৩ ম্যাচ। মৌসুমজুড়ে বার্সার গোলের উৎসব কেমন ছিল, সেটা বোঝা যাবে আরেকটি পরিসংখ্যানে। লিগে দ্বিতীয় রিয়াল মাদ্রিদের গোল সংখ্যা ৭৮। অর্থাৎ বার্সার সমান ম্যাচ খেলে তাদের চেয়ে ২৪ গোল কম করেছে রিয়াল।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও দেখা গেছে একই দৃশ্যপট। এই প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে হেরে বিদায় নিলেও গোল করায় বার্সার ধারেকাছেও ছিল না অন্যরা। প্রতিযোগিতায় ১৪ ম্যাচ খেলে বার্সা গোল করে ৪৩টি, ম্যাচপ্রতি গোল তিনটির বেশি। ৩৮ গোল করে এ তালিকার দুই নম্বরে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। বার্সার চেয়ে ৫ গোল কম করা পিএসজি ৩ ম্যাচ বেশি খেলেছে।

বার্সার গোল করার এই ধারা দেখা গেছে কোপা দেল রে এবং সুপার কোপাতেও। কোপা দেল রেতে ৬ ম্যাচ খেলে বার্সার গোল ২২টি। ম্যাচপ্রতি গোল ৩.৬৬। আর স্প্যানিশ সুপার কাপে দুই ম্যাচে বার্সার গোল ৭টি, এখানেও ম্যাচ প্রতি গোল সাড়ে তিনটি করে। গোলের অবিশ্বাস্য এক পরিসংখ্যানই বটে।

আরও পড়ুনযে ক্লাসিকোয় বার্সার কাছে ৬৩ গোল খেয়েছে রিয়াল০৭ মার্চ ২০২৫

গত মৌসুমে অ্যাটাকিং থার্ডে বার্সা ছিল অনেকটা শিকারি নেকড়ের মতো। এমনকি তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদও। ২০২৪–২৫ মৌসুমে এল ক্লাসিকোয় রিয়াল–বার্সা মুখোমুখি হয়েছিল চার ম্যাচে। এই চার ম্যাচে রিয়ালের জালে বার্সা বল জড়িয়েছে ১৬ বার। ম্যাচপ্রতি গোল সংখ্যা ৪টি! খেলাধুলার তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’ জানিয়েছে, এক মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের জালে কোনো দলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এটাই। বলা বাহুল্য, এই চার ম্যাচের প্রতিটিতে জিতেছে বার্সাই।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ