তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন: এ্যানী
Published: 26th, June 2025 GMT
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তার ফেরার জন্য লন্ডন ও বাংলাদেশে প্রস্তুতি চলছে। তাকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে জানিয়ে শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখান থেকে উদ্ধার হতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
এ্যানী বলেন, বিএনপির ৩১ দফায় উল্লেখ রয়েছে, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতি দূর করতে আমরা এখন থেকে কাজ শুরু করেছি। এটা বিএনপির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। শুধু প্রশাসনে নয়, তার বাইরে যাতে কেউ দুর্নীতি করতে না পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা নেওয়া হবে।
ক্ষমতায় গেলে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটা আঞ্চলিক আলাপ-আলোচনা ও সমাধানের মঞ্চ। তবে, আওয়ামী লীগ সরকার সার্ককে অকার্যকর করে একটি দেশকে (ভারত) প্রাধান্য দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করবে। এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি হিসেবে 'আমাদের বন্ধু থাকবে, প্রভু থাকবে না'।
এই নীতি অনুসরণ করে বিএনপি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে। সেখানে চিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী দেশের জন্য আলাদা পররাষ্ট্রনীতি থাকবে।
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সহ সভাপতি গাজী আনোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য জুনায়েদ হোসাইন (জুনায়েদ শিশির)।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা