ইসলামি চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাস মহররম। ‘মহররম’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এ মাস এমন কিছু উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যেসব স্মৃতির সম্মানার্থেই একে ‘মহররম’ বা ‘সম্মানিত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.

) ও হজরত আমর ইবনুল আছ (রা.)-এর পরামর্শে ইসলামি সনের গণনা শুরু হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরতের বছরকে প্রথম বছর ধরে এ সন গণনা শুরু হওয়ায় একে ‘হিজরি সন’ বলা হয়।

হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্য গভীরভাবে সম্পৃক্ত। ওআইসির ফিকহ একাডেমিসহ বিভিন্ন ইসলামি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চান্দ্রতারিখ নির্ধারণে তিনটি পদ্ধতির স্বীকৃতি দিয়েছে: ১. স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা, ২. পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে নির্ধারণ, ৩. জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুসারে স্থায়ী চান্দ্রপঞ্জি অনুসরণ।

মুসলমানদের ইবাদত ও ধর্মীয় বিধিবিধান চান্দ্রতারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই চান্দ্রতারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। হিজরি নববর্ষ উদ্‌যাপন এই তারিখের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়, নবীজি (সা.)-এর হিজরতের বেদনা ও আত্মত্যাগ মনে করিয়ে দেয় এবং নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। 

আশুরা অর্থ দশম তারিখ। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরা ইসলামের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ দিন। সৃষ্টির শুরু থেকে ১০ মহররম তথা আশুরার দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এদিন আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করেছেন। এদিনেই নুহ (আ.)–এর প্লাবন শেষ হয় এবং নুহ (আ.)–এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ পর্বতে গিয়ে থামে। এদিন ইব্রাহিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ৪০ দিন পর নিরাপদে মুক্তি পান। এদিন ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এদিন আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর পর রোগমুক্তি লাভ করেন। এদিনেই সুলাইমান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এদিনে ইয়াকুব (আ.) হারানো পুত্র ইউসুফ (আ.)–কে ৪০ বছর পর ফিরে পান। এদিন ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। আশুরার দিনে আরও বহু ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল।

পূর্বে মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা সুন্নত হয়ে যায়। তবে সুন্নত রোজার মধ্যে আশুরার রোজা সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ। (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি ও মুসনাদে আহমাদ)

প্রিয় নবী (সা.) হিজরতের পর মদিনায় এসে দেখতে পান, ইহুদিরাও এদিন রোজা রাখছে। এর কারণ জানতে পারলেন, এদিন মুসা (আ.) তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এদিনেই তিনি বনি ইসরায়েলকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করে নীল নদ অতিক্রম করেন এবং ফেরাউন ডুবে মরে। তাই তারা এদিন রোজা রাখে। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘আমরা মুসার অধিক আপন, তোমরা ইহুদিদের ব্যতিক্রম করো, আশুরার এক দিন পূর্বে বা এক দিন পরও রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম ও আবু দাউদ) 

আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনে রোজার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট আমি আশাবাদী, তিনি পূর্বের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন পরিবারের ব্যয় বৃদ্ধি করবে, ভালো খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করবে; আল্লাহ সারা বছর তার প্রাচুর্য বাড়িয়ে দেবেন।’ হজরত সুফিয়ান ছাওরি (রা.) বলেন, ‘আমরা এটি পরীক্ষা করেছি এবং যথার্থতা পেয়েছি।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত: ১৭০; ফয়জুল কালাম: ৫০১, পৃষ্ঠা: ৩৪৯; বায়হাকি ও রজিন)

হাফসা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) চারটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি। আশুরার রোজা, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা, আইয়ামে বিদের (প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা, ফজর ওয়াক্তে ফরজের পূর্বে দুই রাকআত সুন্নত নামাজ। প্রিয় নবীজি (সা.)–এর প্রিয় তিনটি আমল, যা তিনি কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ও রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ।’ (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহম দ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আয়াতুল কুরসিতে আমরা যা পড়ি

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এটি পাঠ করলে অসংখ্য পুণ্য লাভ হয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়েন, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? তিনি উত্তর করেন, আয়াতুল কুরসি।

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ-ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি, ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাই-ইম মিন ইল-মিহি ইল্লা বিমা শাআ, ওয়াসিয়া কুরসিইউহুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়ুল আজীম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসির অনেক ফজিলতআরও পড়ুনসুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩আয়াতুল কুরসির সৌন্দর্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিজরি নববর্ষ বরণ
  • পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই
  • জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে টানা তিন দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
  • আয়াতুল কুরসিতে আমরা যা পড়ি