Samakal:
2025-06-27@00:13:35 GMT

হিজরি নববর্ষ বরণ

Published: 26th, June 2025 GMT

হিজরি নববর্ষ বরণ

আরবি নববর্ষ ১৪৪৭-এর আগমনকে স্বাগত জানাই। হিজরি নতুন বছর শুরু হয় মহররম মাস দিয়ে। হিজরি সন মূলত একটি চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জিকা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে গণনা করা হয়। ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসবসহ সর্বক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ চান্দ্র তারিখের ওপর নির্ভরশীল। আরবি হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তমদ্দুনও ঐতিহ্যগতভাবে সম্পৃক্ত। 

বছরকে আমরা সাল বা সন বলি। সন শব্দটি আরবি; বাংলায় বর্ষ, বছর ও অব্দ। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের সময়কে সৌরবর্ষ এবং পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তনের সময়কে চান্দ্রবর্ষ বলা হয়। চাঁদের হিসাবে সব ইবাদতের প্রচলন হজরত আদম (আ.

)-এর সময় থেকে। কিন্তু হিজরি বর্ষ বা সন গণনার প্রবর্তন হয় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতের চতুর্থ বছর থেকে। তখন তিনি ছিলেন অর্ধপৃথিবীর শাসনকর্তা। তাঁর শাসনামলে শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়। পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল; সনের উল্লেখ ছিল না। 
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে, এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীর পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা অনুযায়ী ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলী (রা.)। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামী বর্ষ শুরু করার পরামর্শ দেন হজরত উসমান (রা.)। (বুখারি ও আবুদাউদ) ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাস এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যেসব স্মৃতির সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবার ৩৬ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২। তার মধ্যে চারটি মাস (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) সম্মানিত।’ 

এ আয়াতের চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে মহানবী (সা.) বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অপরটি হলো রজব। (তাফসির ইবনে কাসির) হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)
মুসলিম হিসেবে হিজরি নববর্ষ উদযাপন কিংবা মুসলিমদের গৌরবের দিনটি পালনের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতিতে ব্যাপকতা লাভ করেনি।

আমরা অনেকে জানি না, মুসলিমদের নববর্ষ কোন মাসে হয়? আবার কেউ হয়তো হিজরি বর্ষ গণনার সঠিক ইতিহাস জানেন না! হিজরি সনের তারিখেরও খবর রাখেন না। 
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম কারবালার ঐতিহাসিক হৃদয়বিদারক ঘটনার অনন্য স্মৃতি বহন করে। মুসলিম বিশ্বে মহররম মাসকে শোকের মাস হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এ মাসের ১০ তারিখে কারবালা ময়দানে প্রিয় নবীর (সা.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-সহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম শাহাদাতের সুধা পান করেন নির্মম ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে। তাই শোকের মাসটির শুরুতে অনেকেই আনন্দ উৎসব উদযাপন করাকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন।
মহররম মাস মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত। এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ। তাই এই মাস ইবাদত-বন্দেগি, দান-খয়রাত এবং আত্মসমালোচনার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিমদের আত্মোন্নয়ন, ত্যাগ ও একতার শিক্ষা দেয়। 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক 
স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববর ষ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আয়াতুল কুরসিতে আমরা যা পড়ি

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এটি পাঠ করলে অসংখ্য পুণ্য লাভ হয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়েন, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? তিনি উত্তর করেন, আয়াতুল কুরসি।

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ-ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি, ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাই-ইম মিন ইল-মিহি ইল্লা বিমা শাআ, ওয়াসিয়া কুরসিইউহুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদ, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়ুল আজীম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

আয়াতুল কুরসির অনেক ফজিলতআরও পড়ুনসুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩আয়াতুল কুরসির সৌন্দর্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই
  • জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে টানা তিন দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা
  • আয়াতুল কুরসিতে আমরা যা পড়ি