যশোরে সরকারি চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নাম
Published: 27th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ১০ মাস আগে। কিন্তু এখনও সরকারিভাবে বিতরণ হওয়া দুঃস্থদের চালের বস্তায় তার নাম থেকে গেছে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় সেই চালের বস্তা বিতরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৫ জুন) যশোরের মণিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদ হতে ভারনারেবল ইউমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় দুঃস্থ নারীদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে চালের বস্তায় কালো কালিতে বড় অক্ষরে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ লেখা দেখা গেছে।
মেম্বর রেজাউল বলেন, “শেখ হাসিনার নাম সংবলিত চালের বস্তার ভিডব্লিউবির উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কেন এখনো চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নাম রয়েছে তার কৈফিয়ত জানতে চেয়েছেন অনেকে। আমরা কোন উত্তর দিতে পারিনি। চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার তুহিন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।”
রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কৃষ্ণগোপাল মুখার্জি বলেন, “রোহিতা ইউনিয়নে ভিডব্লিউবির ২০৬ জন উপকারভোগী আছে। বুধবার থেকে উপকারভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতি কার্ডধারী একসাথে তিন মাসের চাল পেয়েছেন। প্রতিটি বস্তায় শেখ হাসিনার নাম লেখা ছিল। কেন ছিল এটা আমরা বলতে পারবো না।”
মনিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান বলেন, “চালের বস্তাগুলো শেখ হাসিনার আমলের। বস্তায় শেখ হাসিনার নাম থাকলে নামের উপর রং করে চাল ছাড়তে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। গুদাম কর্মকর্তা এসব খেয়াল রাখার কথা।”
মণিরামপুর সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, “শেখ হাসিনার নাম সংবলিত চালের বস্তা বাইরের জেলা থেকে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি শেখ হাসিনার নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়ার জন্য। গুদামের শ্রমিকরা এ কাজ করছেন। তাদের ভুলে হয়তো এমনটি হতে পারে।”
উপজেলা ভিডব্লিউবি কর্মসূচির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, “চালের বস্তা থেকে শেখ হাসিনার নাম মুছে চাল বিতরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা আছে। কেন হলো আমার জানা নেই।”
ঢাকা/রিটন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বস ত য় শ খ হ স ন র ন ম চ ল র বস ত য় চ ল ব তরণ কর মকর ত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা