সিদ্ধিরগঞ্জে ৬নং ওয়ার্ড এলাকার আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা আবু খান ওরফে পিস্তল আবুকে গ্রেফতার করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আদমজী মুড়ি ফ্যাক্টরীর সামনে থেকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবুকে আটক করা হয়। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম। 

এর আগে নাসিক ৬নং ওয়ার্ডে আবু খান ও তার বাহিনী প্রকাশ্যে স্বশস্ত্র মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।  এনিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে জনমনে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মনির হোসেন হত্যা মামলায় সাখাওয়াত হোসেন বাদীর করা মামলায় ৭৭ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি পিস্তল আবু।এছাড়াও ছাত্র আন্দোলনে ৩ টি হত্যা ও ২টি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে পিস্তল আবুর বিরুদ্ধে। 

এদিকে, কিছু  বিএনপি নেতার ছত্রছায়ায় এলাকায় নেট, ডিস ও মাদক ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতে প্রকাশ্যে তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছে আবু বাহিনী।  এরফলে যেকোনো সময় বড় ধরণের নাশকতা ও প্রাণহানীর আশংকা করছেন এলাকাবাসী।

জানাগেছে, গত ৫ আগষ্টের আদমজী সোনামিয়া মার্কেট  এলাকার মৃত পৈলন খাঁর ছেলে যুবলীগ নেতা আবু খান সাবেক এমপি শামীম ওসমান ওসমান ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলের   ছত্রছায়ায় আদমজী  এলাকার অপরাধের সাম্রাজ্য  গড়ে তুলেন।

সাবেক  কাউন্সিলর সিরাজের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে সন্ত্রাসী গুলু মেম্বারের আপন ভাই হওয়ার সুবাদে শামীম ওসমানের গুড লিষ্টের তালিকাতে ও স্থান করে নেয় সে। শামীম ওসমান ব্লকের একনিষ্ঠ হয়ে আবু খান এলাকায় অপরাধের রাম রাজত্ব গড়ে তুলে। এলাকায় ছিনতাই, মাদক, সুদের ব্যবসা, ভুমিদস্যুতা, মারামারি এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আবু খান ও তার বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংগঠিত না হয়েছে। মাদরাসা ছাত্র সাগরকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা মামলার আসামিও এই আবু খান। 

এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম জানান, পিস্তল আবু কে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র হত্যার ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আসামীকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ সন ত র স ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ