যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ‘ব্যাপক ও গুরুতর’ ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি নিজেদের একটি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমকে এ কথা বলেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (এইওই) কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আরাগচির মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিঘ্নিত করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির জবাবে তিনি এ কথা বলেছিলেন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, বোমাবর্ষণের ফলে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ হয়ে গেছে।

কিন্তু খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে ‘কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি’।

১৩ জুন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান খামেনি। এ অবস্থায় বৃহস্পতির এক ভিডিও বার্তায় তিনি জোর দিয়ে বলেন, বোমা হামলার প্রভাব নিয়ে ট্রাম্প ‘অতিরঞ্জিত’ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ের ঘোষণা দেন।

কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচির মন্তব্যে একেবারে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করে তেহরান।

আরাগচি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নতুন আলোচনা শুরুর জন্য কোনো চুক্তি, উদ্যোগ বা কথাবার্তা হয়নি।’

ইরানের পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন ‘ইরানি জনগণের স্বার্থ’ পর্যালোচনা করছে। ইরানের কূটনৈতিক কৌশল ‘নতুন রূপ’ নিতে যাচ্ছে। তবে এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

সিএনএন জানিয়েছে, ইরানকে আবার পারমাণবিক আলোচনায় ফেরাতে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর মধ্যে ইরানকে প্রায় ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা বা ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে একটি বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করা, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা ইরানের বিপুল পরিমাণ অর্থ ছেড়ে দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন ড. ইউনূস 

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, ‍“চলমান সংস্কার, খুনিদের বিচার ও দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ড. ইউনূস সরকার হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদ বিলোপ হবে না।”

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের ফ্যামিলি জোন নামে একটি রেষ্টুরেন্টে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং একটি সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মো. রাশেদ খান বলেন, “চুনোপুটিদের নয়, খুনি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, কামাল ও শামীম ওসমানদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। এ নিয়ে জাতি কোনো টালবাহানা সহ্য করতে পারে না। প্রয়োজন হলে আরো ১০টি ট্রাইব্যুনাল বসাতে হবে। টাকা না থাকলে জনগণ টাকা দেবে।”

এনসিপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই দলটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এটা আমার কথা নয়, টিআইবি প্রধান তাদের কিংস পার্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া এনসিপি সমর্থিত দুই উপদেষ্টা পদ নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। তারপরও হাসনাত আব্দল্লারা ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদেরও ভুল ভাঙ্গতে বসেছে।”

তিনি বলেন, “যারা হাসিনার মতো স্বৈরশাসককে পরাজিত করতে পেরেছে, তারা আজ নানা কলঙ্কের তিলক মাথায় নিচ্ছে। চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হচ্ছেন। মানুষ ও সমাজের কাছে এইসব বীরেরা হেয় হচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রদের কলঙ্কিত করলো কারা?”

রাশেদ খান বলেন, “প্রত্যেক উপদেষ্টা দুর্নীতি করছেন। তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। ডিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই দুর্নীতির ছোঁয়া লেগে আছে। ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াতের তকমা গায়ে লাগানো আমলারা এখনো নির্যাতিত ও পদ বঞ্চিত হচ্ছেন।”

জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্ন গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, “যে সরকার শহীদদের তালিকা তৈরি করতে পারে না, তাদের কাছ থেকে জাতি কি আশা করতে পারে। জাতিসংঘের তদন্তে নিহতের সংখ্যা ১৪০০, কিন্তু জুলাই সনদে সংখ্যা এক হাজার করা হলো। এটা কেন এবং কিভাবে হলো?”

গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে মো. রাশেদ খান বলেন, “মাঠে না থাকলে আওয়ামী লীগ মাঠ দখল করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে তারা এমন ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। তাই সবাইকে কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি নানা বাহানায় নির্বাচন করতে চাইবে। তাদেরকেও প্রতিহত করতে হবে। কারণ তারাও হাসিনার সঙ্গী।” ১৪, ১৯ ও ২৪ সালে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের বিচার দাবি করেন তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, যুব অধিকারের সভাপতি রাকিবুল হাসান রকিব, যুবনেতা মো. মিশন আলী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লা আল মামুন, সাধারণ সম্পাদ মো. রায়হান হোসেন রিহান, মো. মাহাফুজ রহমান, মো. হালিম পারভেজ ও মো. নাহিদ হাসনান বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ