পারমাণবিক স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি হয়েছে: আরাগচি
Published: 27th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ‘ব্যাপক ও গুরুতর’ ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি নিজেদের একটি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমকে এ কথা বলেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (এইওই) কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
আরাগচির মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিঘ্নিত করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির জবাবে তিনি এ কথা বলেছিলেন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, বোমাবর্ষণের ফলে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ হয়ে গেছে।
কিন্তু খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে ‘কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি’।
১৩ জুন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান খামেনি। এ অবস্থায় বৃহস্পতির এক ভিডিও বার্তায় তিনি জোর দিয়ে বলেন, বোমা হামলার প্রভাব নিয়ে ট্রাম্প ‘অতিরঞ্জিত’ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ের ঘোষণা দেন।
কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচির মন্তব্যে একেবারে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করে তেহরান।
আরাগচি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নতুন আলোচনা শুরুর জন্য কোনো চুক্তি, উদ্যোগ বা কথাবার্তা হয়নি।’
ইরানের পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, সরকার এখন ‘ইরানি জনগণের স্বার্থ’ পর্যালোচনা করছে। ইরানের কূটনৈতিক কৌশল ‘নতুন রূপ’ নিতে যাচ্ছে। তবে এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।
সিএনএন জানিয়েছে, ইরানকে আবার পারমাণবিক আলোচনায় ফেরাতে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর মধ্যে ইরানকে প্রায় ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা বা ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে একটি বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করা, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং বিভিন্ন দেশে আটকে থাকা ইরানের বিপুল পরিমাণ অর্থ ছেড়ে দেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা