জাবিতে সিনেট অধিবেশন: জুলাইয়ের সহযোগী শিক্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা
Published: 28th, June 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪২তম সিনেট অধিবেশনে আসা জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৮ জুন) দুপুর ৩টায় সিনেট হলে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনের পূর্বে জুলাইয়ে সহযোগী শিক্ষকদের ফুল দিয়ে বরণ ও বিভিন্ন পোস্টার লিখে স্বাগত জানাতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ এমন স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও সিনেট ভবনের দেয়ালে ও দরজায় ‘জুলাইয়ের সাহসী শিক্ষকদের জন্য লাল গোলাপ’, ‘আওয়ামী দোসরদের জন্য পঁচা ডিম’ এমন পোস্টার লাগিয়ে রাখতে দেখা যায়।
আরো পড়ুন:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও গবেষক চাই, ভোটার নয়
বাকৃবিতে বহিষ্কারসহ ৫ ছাত্রীর শাস্তি নিয়ে যা জানা গেল
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “জুলাই আন্দোলন সারা দেশের মানুষের এক কাঙ্ক্ষিত মুক্তির আন্দোলন। এই আন্দোলনে আমাদের ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষক যেমন বিরোধিতা করেছে, তেমনি কিছু শিক্ষক আমাদের জন্য মন উজাড় করে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে আমরা সেসব মহান শিক্ষকদের সম্মাননা জানানোর জন্য এটা আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।”
তিনি বলেন, “আর যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করে গণহত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছিল, সেসব শিক্ষক নামের কুলাঙ্গারদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানিয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যেন আওয়ামী দোসর মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করে, এ প্রত্যাশা করছি।”
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেসব শিক্ষক স্বার্থের বাইরে গিয়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমাদের সঙ্গে রাজপথে অংশগ্রহণ করেছেন, গণঅভ্যুত্থানকে সফল করেছেন। তাদের যখন সিনেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভায় উপস্থিত হতে দেখি, তখন আমরা সাহস পাই। এই সভা থেকে যে নীতিনির্ধারণী হবে, তার জন্য আমরা আশাবাদী হই।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তাই আমরা তাদের লাল গোলাপ দিয়ে বরণ করে নিয়েছি। একইসঙ্গে আমাদের ভয় হয়, যখন দেখি আওয়ামী দোসরা এই সভায় উপস্থিত হন। আমরা চাই, এই সভার মাধ্যমে তাদের বহিষ্কার করা হোক এবং যোগ্য সিনেটরদের নির্বাচন করা হোক।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবির জাবি শাখার অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, অভ্যুত্থানে যেসব শিক্ষক নৈতিক জায়গা থেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা শিক্ষকতার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। তারা আমাদের অনুকরণীয় অনুপ্রেরণা। আর যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের সমর্থন, প্রশ্রয় ও সহযোগিতা করেছে তারা শিক্ষকতা পেশার কলঙ্ক, তাদের বিচারের আওতায় আনা আবশ্যক।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র র জন য আম দ র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি
জুলাই ঘোষণাপত্রকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক প্রহসন উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছেন গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ৬০ ছাত্রনেতা। তারা শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণকে অংশীদার করে নতুন ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান ছাত্র নেতারা। এতে বলা হয়, হাজারো শহীদ এবং আহত ভাইবোনের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংঘটিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক পুলিশ, আদালত, আইন-সংবিধান তথা পুরোনো ব্যবস্থার কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের জুলাই ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের মতো সামরিক শাসনকে মেনে নেয়নি। আবার নব্বইয়ের মতো কেবল ব্যক্তি স্বৈরাচারীর অপসারণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি বরং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙক্ষার মধ্য দিয়ে গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের বৈপ্লবিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আকাঙক্ষা অনুসারে নতুন কল্যাণমূলক, গণবান্ধব রাষ্ট্র তৈরির দায়িত্ব পালনে অগ্রসর ভূমিকায় হাজির হয়ে গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা যাদের ডাকে বিশ্বাস স্থাপন করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ আগস্ট পুরোনো শোষণমূলক আমলাতন্ত্র, লুটেরা শক্তি ও পুরোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সমর্থনে একটি প্রতারণামূলক ও অর্থহীন ডকুমেন্টকে জুলাই ঘোষণাপত্র নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমন অবস্থায় গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা, জুলাই ঘোষণা ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানায়। পাশাপাশি শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও প্রকৃত ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন গণবান্ধব সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানায়।
এসব দাবি বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা তথা পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারীসমাজ, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীসহ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদ ও আহত গাজী ভাই-বোনদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তাদের অপরিসীম সাহস ও দেশপ্রেমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা সত্যিকার গণবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে চলমান রাখবো।’
বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল্লাহ সালেহীন, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, হামজা মাহবুব, মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবলী সাদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল তানভীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব হোসাইন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজিফা জান্নাত, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল, ঢাকা কলেজের মো. রাকিব, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ বিন রনি, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, স্টেট ইউনিভার্সিটির মিশু আলী সুহাস, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সিনথিয়া জাহিন, বিএল কলেজের (খুলনা) সাজিদুল ইসলাম প্রমুখ।