অন্যদের পরা পোশাকে নিজেকে কেমন মানাবে, তা জানাবে অ্যাপ
Published: 29th, June 2025 GMT
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি পছন্দের পোশাক পরলে কেমন মানাবে, তা জানার জন্য আর ট্রায়াল রুমে যেতে হবে না। স্মার্টফোন থেকেই মিলবে সেই অভিজ্ঞতা। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ঘরে বসে ট্রায়াল রুমের অভিজ্ঞতা দিতে ‘ডপল’ নামের একটি অ্যাপ তৈরি করেছে গুগল। অ্যাপটি চালু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি পছন্দের পোশাক ভার্চ্যুয়াল প্রযুক্তির মাধ্যমে পরে দেখা যাবে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা বিভিন্ন ছবিতে থাকা পোশাক পরলে নিজেকে কেমন মানাবে, তা–ও দেখা যাবে।
গুগলের গবেষণা ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘গুগল ল্যাবস’–এর তৈরি এই অ্যাপ এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি পরখ করতে পারছেন। গুগলের তথ্যমতে, ডপল অ্যাপটি ব্যবহারকারীর একটি ডিজিটাল অ্যাভাটার তৈরি করবে। এরপর সেই অ্যাভাটারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক কেমন দেখাবে, তা ভিডিও আকারে প্রদর্শন করবে। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে পোশাকের অ্যানিমেটেড ভার্চ্যুয়াল রূপ দেখা যাবে। ফলে শুধু ছবির পরিবর্তে ব্যবহারকারীরা ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের পোশাক পছন্দ করতে পারবেন।
ডপল অ্যাপে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের পছন্দের লুকগুলো সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলে সেগুলো পুনরায় দেখার পাশাপাশি অন্যদের পাঠানো যাবে। শুধু তা–ই নয়, অন্যদের পরা কোনো পোশাক ভালো লাগলে সেটির ছবি তুলে ডপল অ্যাপে আপলোড করলেই পোশাকটি নিজের গায়ে কেমন মানাবে, তা জানা যাবে।
ডপল অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনের পাশাপাশি আইফোনেও ব্যবহার করা যাবে। শুরুতে অ্যাপটির মাধ্যমে শুধু শার্ট, প্যান্টসহ কিছু নির্দিষ্ট নকশার পোশাক পরে দেখা যাবে। শিগগিরই অ্যাপটি সব ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক মন ম ন ব পছন দ র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা