কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে তার বাবার বাড়িতে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একই উপজেলার বাহেরচর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে।

এর আগে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রোববার সকালে এসব তথ্য জানান কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন।

ফজর আলী ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো.

আলমের ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক।

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে উপজেলার একটি গ্রামে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, ঘটনার রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় ফজর আলী ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনার সময় আশপাশের কয়েকজন লোক এসে ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে। পরে ওই ঘটনার ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ সময় অভিযুক্ত ফজর আলী পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর স্বামী পাঁচ বছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।

নারীকে নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ১০/১২ জন যুবক বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে মারধর করছে। আর ওই নারী বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলীকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলেও তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা ওই নারী পুলিশকে বলেনি। তবে ভিডিও ধারণ ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় জড়িতদের শনাক্ত করে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন সমকালকে বলেন, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ভিডিও ছড়ানোয় জড়িত চারজনকে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম র দনগর ওই ন র র ঘটন ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামের নারীরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক মাসের বেশি সময় ধরে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য বলে দাবি করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতাধিক নারী। এ সময় তাঁরা দুই সন্তানসহ নারী হত্যাকে ‘গণপিটুনি’ ও নিহত রোকসানা বেগম ওরফে রুবিকে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বলে দাবি করেছেন।

সোমবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি এলাকায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত না হলেও তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে ৫ আগস্ট একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা।

গত ৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস আট দিন পার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সায়েরা বানু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ এখানে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ফিরছেন না। এতে পুরো গ্রাম এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ হোক।’

কড়ইবাড়ি গ্রামের রুমা বেগম বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরুষেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। এতে অর্থকষ্টে পড়েছি আমরা। শিশুসন্তানদের নিয়ে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিরপরাধ মানুষেরা গ্রামে ফিরে আসুক। আমাদের প্রতিটি দিনই এখন আতঙ্কে কাটে।’

গ্রামবাসীর নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এলাকায় শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতি রাতেই কড়ইবাড়ি এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে পুলিশের চারটি টহল দল কাজ করছে। এ ছাড়া নিরপরাধ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা পুলিশের পোশাক পরেই ডিউটিতে বের হই। তবে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার লোকজন আসেন কি না, সেটি আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘নিরীহ একজন মানুষকেও হয়রানি করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে সতর্ক। গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন, তাঁরা গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন