সিনেমার শুটিং করেও বেঁকে বসেন সাকিব, অভিযোগ নির্মাতার
Published: 29th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান সিনেমার জন্য অভিনয় করেছেন। ১২ বছর আগে কক্সবাজারে সেই ছবির শুটিং হয়। টানা ১০ দিন সাকিবের শুটিং করার কথা ছিল। শুধু তাই নয়, তার কারণেই সেই সিনেমাটি ভেস্তে যায় শুটিংয়ের মাঝপথে। আর সেটি মুক্তির আলোয় পাখা মেলতে পারেনি আজও। এমন অভিযোগ করেছেন নির্মাতা রাজিবুল হোসেন।
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ শিরোনামে একটি ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাকিব আল হাসান। সম্প্রতি এ নিয়ে ছবিটির পরিচালক রাজিবুল হোসেন ধারাবাহিকভাবে কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ বন্ধের কারণ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। জানালেন সাকিবের বেঁকে বসার নেপথ্যের কারণ।
আজ বিকেলে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “চুক্তি ছিল সিনেমার, অভিনয়ও করেছিলন, প্রমাণ আছে ক্ল্যাপস্টিকে-তবুও সাকিব বললেন, আমি তো সিনেমায় অভিনয় করিনি!”
শহরের পাঁচ তরুণ-তরুণীর গল্প নিয়ে এক যুগ আগে ‘সবকিছু পেছন ফেলে’ নামের সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন রাজিবুল। সাকিবকে নিয়ে কক্সবাজারে শুটিংয়েও করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে অভিনয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন সাকিব। বিপদে পড়েন পরিচালক, থেমে যায় শুটিং। শেষ পর্যন্ত সিনেমার কাজই বন্ধ করে দেন নির্মাতা। পরিচালক জানান, সাকিব আল হাসানের মিথ্যাচারের কারণেই শেষ করা যায়নি সিনেমাটির কাজ।
পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার প্রযোজকও ছিলেন রাজিবুল হোসেন। এই ছবির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ফুজি ফিল্ম বাংলাদেশ। তাদের মাধ্যমেই সাকিব আল হাসান এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন বলে জানান নির্মাতা।
এর আগে গণমাধ্যমকে নির্মাতা বলেন, ‘সাকিব তখন ফুজি ফিল্মের শুভেচ্ছাদূত। ফুজির সঙ্গে সাকিবের চুক্তি ছিল বছরের সুবিধা অনুযায়ী ৮ দিন তিনি তাদের সময় দেবেন। সিনেমা নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ফুজি ফিল্মস আমাদের জানায়, সিনেমার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে তারা, সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসান অভিনয় করবেন সিনেমায়। আমি সেই কথা মোতাবেক সাকিবের সঙ্গে মিটিং করি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছিল। সাকিবও আনন্দ নিয়েই শুটিং করছিল। কিন্তু যেই–না সিনেমায় অভিনয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে, তখনই বেঁকে বসেন সাকিব। সরাসরি জানান, খবর কেন বাইরে এল, তাই তিনি কাজ করবেন না।’
রাজিবুল হোসেন জানান, এই ছবির কাজ নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় ফুজি ফিল্মসের সঙ্গেও সাকিবের দ্বন্দ্ব হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়।
রাজিবুল বলেন, ‘ফুজি ফিল্মসের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়, সাকিবের যে অংশ শুটিং হয়েছে, তা যেন বাদ দিয়ে দিই। তত দিনে আমার ছবির শুটিংয়ে ওই সময়ে ৬৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। আমি পুরো ব্যাপারটায় ট্রমাটাইজড হয়ে পড়ি। বাধ্য হয়ে শুটিং বন্ধ করে দিই। এরপর আর কখনো ছবিটির কাজ হয়নি।’
তাহলে এতদিন পর কেন এই অভিযোগ-এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে সাকিব আল হাসান কাজটি সে সময় ঠিক করেননি। এটা সবাইকে জানানোর জন্যই এ বিষয় নিয়ে কথা বলা। এ ছাড়া অনেকেই সিনেমা বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে নানা কথা বলতো। তাদের সত্যিটা জানানো দরকার। কোনও প্রডাকশন বা পরিচালনাগত দুর্বলতায় নয়, বরং অবাঞ্ছিত ও অনৈতিক একটি ঘটনার কারণে অসমাপ্ত থেকে গেছে সিনেমাটি।’
এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছিলেন মেঘলা মুক্তা, অর্ণব অন্তু প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন স ক ব আল হ স ন কর ছ ল সবক ছ
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা