ফরিদপুরের পদ্মা নদীতে জেলের বড়শিতে ধরা পড়েছে প্রায় ৪২ কেজি ওজনের মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি বাগাড় মাছ। মাছটি দেখতে সকাল থেকে ভিড় জমায় এলাকার মানুষ। পরে মাছটি ৬২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নিয়ে ভাগ করে নেন স্থানীয় ৩৮ জন ক্রেতা।

রোববার সকালে মাছটি বিক্রির জন্য চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চর হাজীগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসেন জেলে। বিশাল আকৃতির এই মাছ দেখতে বাজারে ভিড় করেন এলাকাবাসী। মেপে দেখা যায়, মাছটির ওজন ৪১ দশমিক ৯ কেজি।

আরও পড়ুনপদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ৫০ কেজির মহাবিপন্ন বাগাড়, ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি২০ ঘণ্টা আগে

মাছটি ধরা পড়ে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চর সালেপুর পশ্চিম এর হাজার বিঘের এলাকার বাসিন্দা আদু শেখের বড়শিতে। মাছটি ধরা পড়ে চর হাজীগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীতে। পরে আদু শেখ অন্য জেলেদের সহযোগিতায় মাছটি নৌকায় তোলেন।

আদু শেখ বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে পদ্মায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। তবে জীবনে এই প্রথম এত বড় বাগাড় মাছ ধরতে পারলাম।’

চর হাজীগঞ্জ বাজারের আড়তদার বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, মাছটি সকাল সাতটার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারে সুকুমার মালোর আড়তে আনা হয়। সেখানে ৬২ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে কিনে নেন ইউনিয়নের ব্যাপারী গ্রামের মোশারফ হোসেন। পরে মাছটি ৩৮ জন ক্রেতা ভাগ করে নেন।

আড়তদার সুকুমার মালো বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে চর হাজীগঞ্জ বাজারে মাছের আড়তদারি করছেন। প্রায়ই ২৫ থেকে ২৬ কেজি ওজনের বাগাড় এ বাজারে ওঠে। তবে এত বড় বাগাইড় মাছ তিনি এ পর্যন্ত এ বাজারে উঠতে দেখেননি।

চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

নাঈম হোসেন বলেন, পদ্মা নদীসহ বড় নদীগুলোতে এখন পানি বাড়ছে, যা মাছের চলাচলের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। বাগাড় সাধারণত গভীর পানিতে থাকে, তবে খাবারের খোঁজে কম গভীর জায়গায় চলে আসে। তখনই এটি জেলেদের জালে বা বড়শিতে ধরা পড়ে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি অব্যাহত আছে।

বিষয়টি নজরে আনা হলে মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‘বাগাড় সাধারণত বৃহৎ আকারের হয়। জাটকা বা ছোট বাগাড় মাছের ক্ষেত্রে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। তবে বড় বাগাড় মাছ ধরার বিষয়ে আইনি শিথিলতা রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ