ফরিদপুরে পদ্মায় ধরা পড়ল ৪২ কেজি ওজনের বাগাড়, বিক্রি হলো ৬২ হাজার টাকায়
Published: 29th, June 2025 GMT
ফরিদপুরের পদ্মা নদীতে জেলের বড়শিতে ধরা পড়েছে প্রায় ৪২ কেজি ওজনের মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি বাগাড় মাছ। মাছটি দেখতে সকাল থেকে ভিড় জমায় এলাকার মানুষ। পরে মাছটি ৬২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নিয়ে ভাগ করে নেন স্থানীয় ৩৮ জন ক্রেতা।
রোববার সকালে মাছটি বিক্রির জন্য চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চর হাজীগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসেন জেলে। বিশাল আকৃতির এই মাছ দেখতে বাজারে ভিড় করেন এলাকাবাসী। মেপে দেখা যায়, মাছটির ওজন ৪১ দশমিক ৯ কেজি।
আরও পড়ুনপদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ৫০ কেজির মহাবিপন্ন বাগাড়, ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি২০ ঘণ্টা আগেমাছটি ধরা পড়ে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চর সালেপুর পশ্চিম এর হাজার বিঘের এলাকার বাসিন্দা আদু শেখের বড়শিতে। মাছটি ধরা পড়ে চর হাজীগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীতে। পরে আদু শেখ অন্য জেলেদের সহযোগিতায় মাছটি নৌকায় তোলেন।
আদু শেখ বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে পদ্মায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরি। তবে জীবনে এই প্রথম এত বড় বাগাড় মাছ ধরতে পারলাম।’
চর হাজীগঞ্জ বাজারের আড়তদার বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, মাছটি সকাল সাতটার দিকে হাজীগঞ্জ বাজারে সুকুমার মালোর আড়তে আনা হয়। সেখানে ৬২ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে কিনে নেন ইউনিয়নের ব্যাপারী গ্রামের মোশারফ হোসেন। পরে মাছটি ৩৮ জন ক্রেতা ভাগ করে নেন।
আড়তদার সুকুমার মালো বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে চর হাজীগঞ্জ বাজারে মাছের আড়তদারি করছেন। প্রায়ই ২৫ থেকে ২৬ কেজি ওজনের বাগাড় এ বাজারে ওঠে। তবে এত বড় বাগাইড় মাছ তিনি এ পর্যন্ত এ বাজারে উঠতে দেখেননি।
চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি অব্যাহত আছে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‘বাগাড় সাধারণত বৃহৎ আকারের হয়। জাটকা বা ছোট বাগাড় মাছের ক্ষেত্রে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। তবে বড় বাগাড় মাছ ধরার বিষয়ে আইনি শিথিলতা রয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধনাগোদা নদীর পাড়ে তিন ঘণ্টার হাট, দিনে বিক্রি ৮ লাখ টাকার তাজা মাছ
ভোরের আলোয় ধনাগোদা নদীর পাড়ে প্রতিদিন বসে এক বেলার হাট। চলে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। তিন ঘণ্টার এই হাটে ৭–৮ লাখ টাকার তাজা মাছ বেচাকেনা হয়। প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে এই হাট। ধনাগোদা, মেঘনা ও পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে ট্রলারে করে শতাধিক জেলে প্রতিদিন এখানে আড়তদার ও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন তাজা মাছ। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক ক্রেতা কিছুটা কম দামে মাছ কেনেন এখানে।
আশপাশের লোকজনসহ দূর থেকেও অনেকে তাজা মাছ কিনতে এই বাজারে ভিড় করেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হইচইয়ে ভোরের নিস্তব্ধতা ভাঙে বাজার এলাকায়। এ যেন এক মাছের রাজ্য। নদীর তাজা মাছ কিনতে আসেন চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার লোকজন। মাছ বিক্রি হয় ঢাকাতেও।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া ও আমিরাবাদ গ্রামের মাঝখানে ধনাগোদা নদীর পশ্চিম পাড়ে এই হাটের অবস্থান। স্থানীয়ভাবে এটি জনতা বাজার নামে পরিচিত। স্থানীয় জেলে, মৎস্যজীবী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে ২০০৫ সাল থেকে এই হাট চলছে।
শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে হাটে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পশ্চিম পাড়ে জেলেদের মাছ ধরার সারি সারি ট্রলার। জেলেরা দল বেঁধে ট্রলার থেকে ক্যারেটে করে মাছ পাড়ে নামিয়ে বিক্রি করছেন আড়তদারদের কাছে। সেখান থেকে মাছ কিনছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। বিক্রি হচ্ছে ইলিশ, কাতলা, রুই, আইড়, বোয়াল, পাঙাশ, শিং, ট্যাংরা, চেউয়া, চিংড়ি, কই, বেলেসহ ছোট-বড় অনেক জাতের মাছ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন ক্রেতারা। দর–কষাকষি শেষে কিনছেন মাছ।
কথা হয় সেখানকার বেশ কয়েকজন আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা মাছ বিক্রেতা এবং ক্রেতার সঙ্গে। আড়তদার উত্তম সরকার বলেন, এই হাটে প্রতিদিন গড়ে মাছ বিক্রি হয় ১০–১৫ মণ। এগুলোর মূল্য ৭–৮ লাখ টাকা। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে মাছের আড়তদারি করছেন। ১৫–২০ জন আড়তদার প্রতি ভোরে জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করেন।
হাটের পাইকারি মাছ বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, আড়তদারদের কাছ থেকে কম দামে তিনিসহ অন্য পাইকারি ক্রেতারা মাছ কেনেন। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করেন কিছুটা লাভে।
খুচরা মাছ বিক্রেতা মো. আলো বলেন, হাটে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি বড় পাঙাশ ৩০০–৪০০ টাকায়, আইড় কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছও কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
আমিরাবাদ এলাকার জেলে পবিত্র দাস বলেন, মেঘনায় সারা রাত মাছ ধরে ট্রলারে করে প্রতিদিন তিনিসহ অনেকে এখানে মাছ বিক্রি করেন। মাছ বিক্রির আয়ে চলে সংসারের খরচ। এই হাট তাঁদের জন্য আশীর্বাদ।
উপজেলার হাজীপুর এলাকার মো. হালিম, জনতা বাজার এলাকার কামাল হোসেন মীর ও চরমাছুয়া এলাকার মো. আমিনুল হক এখানে মাছ কিনতে এসেছে। তাঁরা বলেন, এখানে নদীর তাজা মাছ পাওয়া যায় যা ফরমালিনমুক্ত। তাজা মাছ কেনার আশায় প্রায়ই তাঁরা এখানে আসেন। দরদাম ভালো। নদীর মাছ খেতেও সুস্বাদু। ভোরে মাছ কেনার পাশাপাশি নদীর সতেজ হাওয়া ও সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ফরমালিন ও বিষযুক্ত মাছ বিক্রির এই যুগে এ রকম সতেজ মাছের একটি হাট থাকা ইতিবাচক। এই হাটের সার্বিক কার্যক্রম মৎস্য বিভাগ তদারক করে বলে তিনি জানান।