জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্ত্রী, পুত্রসহ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালু ব্যবসায়ী আজিজুল আলম ওরফে বেন্টুর (৫৩) নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ রোববার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রধান আসামি আজিজুল আলম আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে একচেটিয়াভাবে বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। বালুমহাল থেকেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও বিপুল সম্পদের মালিক তাঁর গৃহিণী স্ত্রী নাসিমা আলম (৪৮) ও বেকার ছেলে রুহিত আমিন (২৯)। দুদকের মামলায় তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। আজিজুল, তাঁর স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে দুদক ৩৬টি দলিলমূলে ৯ একরের বেশি জমি পেয়েছে। অনুসন্ধানে তাঁদের মোট ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। অথচ সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে দুদককে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দেন তাঁরা। আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকা।

অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, আজিজুল আলমের স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিণী হলেও তাঁর নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, নাসিমার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকার। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামীর অর্জিত সম্পদ নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তাঁর নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিলকৃত আয়কর নথি অনুযায়ী, রুহিতের নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। অনুসন্ধানকালে তাঁরও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবার অর্জিত সম্পদ আয়কর ফাইলে নিজের দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। এ ছাড়া আয়কর নথিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল আলম তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।

দুদক বলছে, নাসিমা আলম তাঁর স্বামী আজিজুল আলমের অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তাঁর বাবা আজিজুল আলমের অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে আজিজুল আলমের স্ত্রী ও ছেলেও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, মামলাটি দায়ের করার পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ জ ল আলম র র হ ত আম ন র অর জ ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

পাঁচ শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন না দিলেও চলবে

পাঁচ ধরনের করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ ছাড়া অন্য সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।

আজ সোমবার এনবিআর এ–সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ জারি করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এতে সই করেন।

যে পাঁচ শ্রেণির করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ১. ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা; ২. শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা (সনদ দাখিল সাপেক্ষে); ৩. বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা; ৪. মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি এবং ৫. বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক। তবে তাঁরা চাইলে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

এর আগে ৩ আগস্ট সারা দেশের সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে (www.etaxnbr.gov.bd) আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়।

যে পাঁচ শ্রেণির করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ১. ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা; ২. শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা (সনদ দাখিল সাপেক্ষে); ৩. বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা; ৪. মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি এবং ৫. বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক।

এনবিআর জানায়, কোনো ব্যক্তি করদাতা ই–রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমর্থ না হলে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে তিনি কাগুজে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

গত বছর সীমিত আকারে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হলে ১৭ লাখের বেশি ব্যক্তি করদাতা অনলাইনে ই–রিটার্ন দাখিল করেন।

করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহারে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই–রিটার্ন দাখিলের রসিদ প্রিন্ট নিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখপূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে
  • পাঁচ শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন না দিলেও চলবে
  • বিদেশিদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক নয়