Samakal:
2025-11-17@12:34:02 GMT

সাফল্যের সহজ কৌশল

Published: 29th, June 2025 GMT

সাফল্যের সহজ কৌশল

৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)। মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) শুরু হবে আগামী ৮ জুলাই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এবং মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষাগুলোর একটি। লিখিত পরীক্ষার বৈতরণী পার হওয়ার পর প্রার্থীদের জন্য অপেক্ষা করে চূড়ান্ত ধাপ– ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা। এটি কেবল আপনার জ্ঞান যাচাইয়ের পরীক্ষা নয়, বরং আপনার ব্যক্তিত্ব, মানসিক দৃঢ়তা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং যোগাযোগ দক্ষতারও পরীক্ষা। অনেক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফল করেও ভাইভায় আশানুরূপ ফল করতে না পারায় চূড়ান্ত তালিকা থেকে ছিটকে পড়েন। তাই ভাইভার গুরুত্ব অপরিসীম।
শুরুতেই যা জানা জরুরি
ভাইভার প্রস্তুতি শুরু করার আগে আপনাকে কিছু মৌলিক বিষয় জেনে নিতে হবে:
নিজেকে জানুন: আপনার নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আপনার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিজ জেলা, পরিবার– সবকিছু সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য এবং সেগুলোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সাধারণ জ্ঞান জেনে রাখুন।
সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলি : বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। বিশেষ করে সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, ভূ-রাজনীতি, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক– এসব বিষয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ুন এবং দেশ-বিদেশের খবর সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন।
নিজ ক্যাডার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় :
আপনি যে ক্যাডারগুলো পছন্দের তালিকায় রেখেছেন, সেগুলোর কাজ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। কেন আপনি এই ক্যাডারটি পছন্দ করেন, তা যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করার প্রস্তুতি রাখুন।
প্রস্তুতি কৌশল: ধাপে ধাপে সফলতা
ভাইভা প্রস্তুতির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি :
নিজ জেলা: আপনার জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিখ্যাত ব্যক্তি, সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন। আপনার জেলার নামকরণের ইতিহাস বা কোনো বিশেষ স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে।
শিক্ষাগত বিষয়: আপনার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। আপনার পঠিত বিষয়ের সঙ্গে বিসিএস ক্যাডারের কাজের কী সম্পর্ক, তা বোঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানের মূলনীতি, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ এবং সংশোধনীগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। এটি ভাইভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: দৈনন্দিন জীবনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন – এসব বিষয়ে মৌলিক ধারণা থাকা উচিত।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন: এই বিষয়গুলো বিসিএস সিলেবাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলোর সংজ্ঞা, গুরুত্ব এবং বাস্তবায়নে আপনার ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে।
মৌখিক অনুশীলন (মক ভাইভা) 
একা একা প্রস্তুতি নেওয়ার চেয়ে গ্রুপ স্টাডি বা মক ভাইভা দেওয়া অনেক বেশি কার্যকর। অভিজ্ঞ বিসিএস ক্যাডার বা শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত মক ভাইভাগুলোতে অংশ নিন। এতে আপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত হবে এবং আপনি সেগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
নেতিবাচকতা পরিহার: কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে অযথা আন্দাজে কিছু বলবেন না। বিনীতভাবে বলুন যে আপনার জানা নেই। মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা তর্ক করা থেকে বিরত থাকুন।
ইতিবাচক মনোভাব: চাপের মুখে শান্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি। বোর্ড সদস্যরা আপনার মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতাও যাচাই করবেন।
যোগাযোগ দক্ষতা : স্পষ্ট ভাষায়, গুছিয়ে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলুন। আঞ্চলিকতা পরিহার করে প্রমিত বাংলায় কথা বলার অভ্যাস করুন। অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ বাক্য বা শব্দ ব্যবহার না করে সরাসরি মূল বিষয়ে আসুন।
শেষ মুহূর্তের টিপস
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিন।
মানসিক চাপ কমাতে পরীক্ষার আগে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
হাসিখুশি ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করুন।
বিসিএস ভাইভা আপনার স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপ। সুচিন্তিত প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে এই ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। v
[লেখক- ৩৬তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডার]

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স এস প রস ত ত আপন র জ ব স এস পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ