নড়াইলে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা, চলাচলে দুর্ভোগে
Published: 30th, June 2025 GMT
কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নড়াইল শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাড়িঘরে। রাস্তা তলিয়ে থাকায় চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নালা না থাকা এবং বিদ্যমান নালাগুলোর মধ্যে দিয়ে পানি সরতে না পারায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে।
নড়াইল পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে ২৮.
আরো পড়ুন:
৫ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস
বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে উদ্বেগ
রবিবার (২৯ জুন) বিকেলে নড়াইল পৌর এলাকায় দুই ঘণ্টার মতো বৃষ্টি হয়। সোমবার (৩০ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকেও বৃষ্টি হয়েছে।
নড়াইল পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা রবিবার বিকেলে ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নিচু এলাকার বাড়ির উঠানে হাঁটু সমান পানি জমেছে। অনেকের ঘরে মেঝেতে পানি রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে রয়েছেন বাসিন্দারা। স্কুল-কলেজে যেতে কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
পৌরসভার ভওয়াখালী এলাকার আশিকুর রহমান বলেন, “একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্য পানি ওঠে। রাস্তায় পানি জমে যায়। চলাফেরা বিঘ্নিত হয়।”
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারদিন শাহরিয়ার খান বলেন, “বৃষ্টি হলেই রুপগঞ্জ মুচির পোল থেকে উত্তর দিকে নেমে আসা রাস্তার প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে স্কুলে যেতে কষ্ট হয়।”
শহরের রুপগঞ্জ গোহাটখোলার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম বলেন, “মুসলধারে বৃষ্টি হলেই রান্নাঘর, টিউবওয়েল ও টয়লেট পানিতে তলিয়ে যায়।”
একই এলাকার গৃহবধূ সুলতানা বলেন, “বৃষ্টিতে আমাদের মহল্লার সমস্ত বাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি বেশি হলেই আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়।”
নড়াইল পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক জুলিয়া সুকায়না বলেন, “প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে ড্রেন নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমাধান করা হবে। জরুরি ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌরসভা কাজ করছে।”
ঢাকা/শরিফুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা