অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা এবং পোর্ট চালু হওয়ায় খুশি হয়েছি। আন্দোলনকারীদের বলব, আপনারা ভালো করে কাজ করেন। পক্ষপাতভাবে কাজ না করলে কারো সমস্যা হবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে মানুষের সেবা করলে সেখানে সমস্যা হওয়ার কথা না।’’ 

সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর অনলাইন ডাটাবেইস সিস্টেমে বাজেট রিপোর্টিং, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায় বিশ্লেষণসহ সার্বিক কাজ মূল্যায়নের প্রথম বছরের কাজের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ড.

সালহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আজকে আমরা একটু খুশি। প্রধান উপদেষ্টাও ছিলেন। এনবিআরের বিষয়টি সলভ (সমাধান) হয়েছে। পোর্ট চালু হয়েছে। আমরা মাঝখানে একটু ইতস্তত ছিলাম। আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বললাম পরে। বললেন ঠিক আছে, ওরা কথা বলুক। কমিটি করা হয়েছে ওদের সঙ্গে। আমাকে বললেন, ‘তুমি পরে বস, এখন না’।’’ 

আরো পড়ুন:

‘অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব প্রয়োজন’

রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম 

আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা এনবিআরের ৬ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রথমত আমি দুদক সম্পর্কে কোনো উত্তর দেব না। তাদের আলাদা টার্ম অফ কন্ডিশন আছে। ওটা দরকার হলে আপনি তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করবেন। ডেফিনেটলি সরকার থেকে এখন কোনো ধরনের ইন্টারফেয়ার করা হয় না।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আপনি দেখেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে হস্তক্ষেপ করতে। আমার সময় পারেনি, কারণ আমি ওখানে ছিলাম। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক তো চলত সরকারের নির্দেশে, আদেশে। যারা গভর্নর ছিলেন, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন না, সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এখন কিন্তু সেটা নেই।’’ 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কালকে আমি মিটিং করলাম অনেকক্ষণ। আজকেও কয়েকজন ব্যবসায়ী ফোন করে বলেছেন, (এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটে) অনেক লস হয়ে গেছে। এটা কোনো ক্রমে গ্রহণযোগ্য না। সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে কিন্তু জাতীয় স্বার্থে একটা সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া, এটা কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য না।’’ 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে তাদের মতবিরোধ থাকতে পারে, আমি বহু আগে বলেছি। কিন্তু পোর্ট বন্ধ করে দেয়া, এটা তো প্রাইভেট প্রপাটি না। ইউ আর পেইড বাই দা গভমেন্ট। রাজস্ব আমি কোথা থেকে পাই, এটা বন্ধ করে দেয়া। যাইহোক এখন জিনিসটা সলভ হয়েছে। আমি বলব, এটার সলুশন ডিফিক্যাল্ট না। পাঁচজন উপদেষ্টা আছেন, তারা হিয়ারিং করে সলভ করবেন।’’ 

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আপনি কি বলবেন¬— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আপনারা ভালো করে কাজ করবেন। পক্ষপাতভাবে কাজ না করলে কারো কোনো সমস্যা হবে না। আমি চাই ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) ও অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা)- এর সঙ্গে মানুষের সেবা করুক। সেখানে কারো সমস্যা হওয়ার কথা না। যারা সারা জীবন এভাবে কাজ করেছেন, তাদের সমস্যা হতে দেখেছেন। যারা বিচ্যুত ঘটে, তারই জবাদিহিতার আওতায় আসে একদিন না একদিন।’’ 

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট প্রণয়ন, ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়ন, বিশ্লেষণসহ সার্বিকব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়নের জন্য সরকার ‘স্টেট-ওন এন্টারপ্রাইজেস এন্ড অটোনোমাস বডিস বাজেট, রিপোর্টিং এন্ড ইভালুয়েশন ডাটাবেইজ (সেবার+)’ সফটওয়ার ব্যবহার করছে।

সেবার+ এর মাধ্যমে চলতি বছর ৭২টি প্রতিষ্ঠানের বাজেট প্রণয়নের কাজ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আগে অর্থ বিভাগ ৪৯টি সংস্থার বাজেট অফলাইনে প্রণয়ন করত। বর্তমানে অনলাইন ডাটাবেইজের মাধ্যমে সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় চার শতাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে সেবার+ ডাটাবেইজের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছে।

সেবার+ হলো অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল প্রণীত একটি অনলাইন ডাটাবেইজ সিস্টেম, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বাজেট প্রস্তুত, সংস্থাগুলোর ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়ন, রিপোর্টিং ও সার্বিক কাজকর্মের মূল্যায়ন করা হয়। এই সিস্টেমের লক্ষ্য হলো বাজেট প্রস্তুত, সম্পদ ও দায়ের সঠিক হিসাবায়ন, মূল্যায়ন এবং প্রতিবেদন প্রক্রিয়াকে অনলাইন মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজতর করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া সেবার+ বিগত অর্থবছরে ১২টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এটি ৭২টি সংস্থার বাজেট প্রস্তুতসহ ১০১ সংস্থার ঋণ ও প্রচ্ছন্ন দায়ের হিসাবায়নের পাশাপাশি সরকারের আর্থিক ঝুঁকি নিরূপণ ও ২০টি সংস্থার কাজকর্মের মূল্যায়নে তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত  গ্রহণে প্রধান ভ’মিকা পালন করেছে।
 
সেবার+ এর সাথে আইবাস++ এর ‘এপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) থাকায় জাতীয় আর্থিক রেকর্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ডেটা বিনিময় সম্ভব হয়। এর ফলে সমন্বয় নিশ্চিত হয়, কাজের পুনরাবৃত্তি কমে এবং আর্থিক প্রবাহের প্রকৃত তথা রিয়েল-টাইম নজরদারি সহজ হয়।

চলতি অর্থবছরে ৭২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা সেবার+ এর মাধ্যমে বাজেট দাখিল করেছে। অফলাইন থেকে অনলাইন ব্যবস্থায় রূপান্তরের ফলে বাজেট প্রক্রিয়া নির্ভুল হয়েছে এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ন আহম দ ড ট ব ইজ সরক র র আর থ ক ক জ কর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

চূড়ান্ত রায় পেতে আরেক ধাপ বাকি

রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এ সময়ে মামলার বিচার দুই ধাপ পার হয়েছে। চূড়ান্ত রায় পেতে এখনও আরেক ধাপ বাকি।

এরই মধ্যে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ে সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। ২২৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এক বছর আট মাস পর গত ১৮ জুন প্রকাশিত হয়েছে। ফলে মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কিনা, তা জানা যায়নি। অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে, রায়ের কপি পেলে সাজা কমাতে তারা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করবে। আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।

কারাগারে থাকা আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে– জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যা শ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। 

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালত যে ধারায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, সেই ধারায় আসামিদের অপরাধ সংঘটিত হয়নি। এই আসামিরা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। তাই তাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, হোলি আর্টিজানে দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, ওই হামলায় বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। এ ছাড়া এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন আদালত।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ নৃশংস হামলা চালায় নব্য জেএমবির আত্মঘাতী সদস্যরা। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে এবং কুপিয়ে ও গুলি করে ২২ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। এ হত্যাকাণ্ডটি সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। রায়ে সাত জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারক। পরে আসামিদের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

সম্পর্কিত নিবন্ধ