ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০৪ বছর অতিক্রম করেছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। কাঙ্ক্ষিত সমাজের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্যই এই প্রতিপাদ্যে ফুটে উঠেছে। জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে অবদান রাখতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি এমন সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যার ঠিক এক বছর আগে জুলাই আন্দোলনের ভিন্নমাত্রার সূচনা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশের শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করে। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই অর্জিত হয় ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। কোনো সরকারের এমন পতন মানুষ আগে দেখেনি, যার নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বস্তুত চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানই নয়, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে।

এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, দেশের যোগ্য শিক্ষার্থীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এই শিক্ষার্থীরাই বর্তমানে যেমন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, তেমনি ভবিষ্যতেও এ ধারা নিশ্চয় অব্যাহত থাকবে। এই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রাম থেকে আসা। সবচেয়ে বড় বিষয়, নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে এখানে সবাই পড়ার সুযোগ পান বলে গ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীর পক্ষেও পড়াশোনা খুব কঠিন হয় না। আবাসিক হলেও অনুরূপ প্রায় বিনামূল্যে থাকার সুযোগ মেলে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়ার পর এখানকার পরিবেশই শিক্ষার্থীদের বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন স্বপ্ন দেখায়, তেমনি অনেকের স্বপ্নভঙ্গের কারণও হতে পারে। প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর সুযোগ যেমন অনেককে ‘এলিট’ বানায়, তেমনি তাদের প্রতি এক ধরনের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও তৈরি হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে এক ধরনের চাপে ফেলে। সে জন্য ভর্তির পর থেকেই দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে চাকরিকেন্দ্রিক উদ্বেগ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতে তাই যতটা একাডেমিক পড়াশোনার চর্চা হয়, তার চেয়ে বেশি দেখা যায় চাকরিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা। যার কারণে স্ববিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ বা স্কলার হয়ে ওঠেন, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অথচ কিছু শিক্ষার্থী থাকতেই হবে, যারা স্বীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন, গবেষণা করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন জ্ঞান সৃষ্টির দায়িত্ব পালন করবেন।       

দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, আমাদের রাজনীতি হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। অর্থাৎ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা ও পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিতে রাজনীতির কথা বলেছেন। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি কীভাবে লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে কলুষিত করেছিল। কীভাবে হলগুলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন দখল করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করেছিল। গণরুম ও গেস্টরুমের নামে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল বানিয়েছিল। বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রাতভর নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

স্বস্তির বিষয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাঙ্গনে আবাসিক হলগুলো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দিচ্ছে। শঙ্কা জাগে, অন্তর্বর্তী সরকারের পর রাজনৈতিক সরকার এলে হলগুলো কি আগের বীভৎসতায় ফিরে যাবে? যে দল ক্ষমতায় আসবে সে দলের ছাত্র সংগঠন এভাবে হল দখল করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করবে? আমাদের প্রত্যাশা, সেই পরিবেশ যাতে ফিরে না আসে। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের আগেই অঙ্গীকার করতে হবে– তারা শিক্ষার্থীদের লাঠিয়াল বাহিনী বানাবে না।
শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু রাজনীতি ফিরিয়ে আনার অন্যতম মাধ্যম ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে সফল হলে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও উদাহরণ তৈরি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার খরা কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের আলমা মাতের– এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কী হতে পারে!

মাহফুজুর রহমান মানিক: 
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র জন ত পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে: প্রধান উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের নির্বাচন গতানুগতিক কোনো নির্বাচন নয়; বরং এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন।  এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সদ্য পদায়নকৃত ৫০ জেলা প্রশাসকসহ ৬৪ জেলার প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আরো পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান ‍উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল এবি পার্টি 

আগামী নির্বাচনকে শুধু পাঁচ বছরের সরকার গঠনের একটি নির্বাচন নয়; বরং গণভোট যুক্ত হওয়ায় এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি নির্বাচন। জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।”

“এটা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচন; এই নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেওয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য নির্ধারিত হবে শতাব্দীর গতিপথ,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়।”

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের যা যা জানা প্রয়োজন সব জেনে নেবেন। নির্বাচনকে একই সঙ্গে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে বিপুল সংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হলেও গত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।”

তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এরইমধ্যে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা দেখতে চান কেমন নির্বাচন হচ্ছে—এটা নিয়ে তাঁদের গভীর আগ্রহ।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনকে স্বার্থক করা গণঅভ্যুত্থানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই নির্বাচন একটি বিরাট অভিযান, এ অভিযানে আমাদের জিততেই হবে।”

তিনি বলেন, “স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক এবং বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ রাকিবুলের মা-বাবার
  • রায়ে খুশি শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা
  • এ রায় সামনের দিনের জন্য উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • শেখ হাসিনার রায় ঘিরে বিশৃঙ্খলা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে
  • শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে সন্তুষ্ট আইন উপদেষ্টা 
  • এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা 
  • ঢাকায় বড় পর্দায় দেখা যাবে শেখ হাসিনার মামলার রায়
  • শেখ হাসিনার মামলার রায়: ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি ফখরুলের
  • বেওয়ারিশ জুলাই শহীদদের শনাক্তে আসছে বিদেশি ফরেনসিক টিম