পূর্বাচলে জবাইকৃত ৫টি ঘোড়ার মাংস উদ্ধার, যুবককে কারাদন্ড
Published: 1st, July 2025 GMT
রূপগঞ্জের পূর্বাচলে জবাইকৃত ৫টি ঘোড়ার মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার পূর্বাচল উপ শহরের ১০ নং সেক্টর এলাকা থেকে পাঁচটি ঘোড়ার মাংস উদ্ধার করা হয়৷
পরে সহকারি কমিশনার ভূমি ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফয়েজ মিয়া (১৫) নামে এক যুবককে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ফয়েজ মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার বরমপাড়া এলাকার হাফিজ মিয়ার ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পূর্বাচল উপ-শহরের শহরের ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় আনসার বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছিলেন৷ এ সময় তারা একটি সিএনজি পূর্বাচলের একটি প্লটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়।
পরে তারা সিএনজিকে থামার সিগনাল দিলে সিএনজি থামিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে তারা প্লটের ভেতর প্রবেশ করে আনসার সদস্যরা দেখতে পান পাঁচটি ঘোড়া জবাই করে তাদের মাংস আলাদা করা হচ্ছে।
আনসার সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেন এবং আটককৃত ফয়েজ মিয়াকে পুলিশের কাছে সোপর্দ্য করেন। পরে ঘটনাস্থলে সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফয়েজ মিয়াকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
স্থানীয়রা জানান, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ঘোড়ার মাংসকে গরুর মাংস বলে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ও বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করে আসছে। পূর্বাচল শুনশান এলাকা হওয়ার কারণে এখানেই তারা ঘোড়ার মাংস জবাই করে তা গরুর মাংস হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে বিক্রি করত।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা