মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম খুন, পিতা গুরুতর আহত
Published: 2nd, July 2025 GMT
পটুয়াখালীর বাউফলে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৮)। এ ঘটনায় তার পিতা জাকির হোসেন বয়াতিও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার বিকেলে ধলুফকির হাটের পূর্ব পাশে আঞ্চলিক মহাসড়কে চিংগরিয়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত ফাহিম বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের ভাংরা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেনের ছেলে এবং নওমালা আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন ফাহিম ঘরের জন্য মোদী মনোহরী মালামাল কিনতে ধলুফকির বাজারে যায়। এ সময় স্থানীয় মাদক কারবারি শাকিল মীর পিতা আব্দুর রশিদ মীর তার সঙ্গে দেখা করে বন্ধুসুলভ আচরণে ফাহিমকে চিংগরিয়া এলাকায় ডেকে নেয়। সেখানে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শাকিল ফাহিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে।
খবর পেয়ে ফাহিমের বাবা জাকির হোসেন দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও ১০-১২টি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় হামলাকারী।
স্থানীয়রা ফাহিম ও তার বাবাকে উদ্ধার করে প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত জাকির হোসেনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নিহতের চাচা মস্তফা বয়াতি জানান, “ফাহিম আমাদের পরিবারের বড় সন্তান। ওকে মানুষ করতে ভাই দুজন দিনরাত পরিশ্রম করতাম। শাকিল ঢাকায় থেকে মাঝে মাঝে গ্রামে এসে ফাহিমকে হুমকি দিত। আজ সে-ই আমার ভাতিজাকে হত্যা করেছে। আমি এই খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা ও সদর পটুয়াখালীর সীমান্তবর্তী এ চিংগরিয়া অঞ্চলটি ‘ক্রাইম জোন’ হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এলাকায় মাদক ব্যবসা ও দুষ্কৃতিকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
বাউফল থানার ওসি আক্তারুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি দশমিনা থানার আওতায় হলেও আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি।” দশমিনা থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে শাকিলের চাচা শানু মীরকে আটক করা হয়েছে এবং মূল আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কালীগঞ্জে এইচএসসি ফলাফলে পাসের চেয়ে ফেল বেশি
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল যেন শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৫৪ জন, আর অকৃতকার্য হয়েছে ৬৭৪ জন। অর্থাৎ পাসের চেয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি!
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই কলেজে ৩ শিক্ষার্থী, শতভাগ ফেল
এইচএসসিতে শতভাগ জিপিএ-৫ পেল মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
এই পরিসংখ্যান কালীগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের হতাশার জন্ম দিয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মতে, ফলাফলের এ চিত্র শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ, পাঠদানের মানহীনতা এবং শিক্ষা প্রশাসনের দুর্বল তদারকির স্পষ্ট প্রতিফলন।
তবে হতাশার মাঝেও সামান্য আশার আলো জ্বেলেছে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থী। মোট ১৯ জন পরীক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ–৫ অর্জন করেছে।
কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৫ ও ফেল ১৭০, মানবিকে পাস ৯০ ও ফেল ২১৯, বিজ্ঞানে পাস ৫৬ জন। এ কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ শিক্ষার্থী। মোট পাস ২২১ ও অকৃতকার্য ৪৩৬ জন।
জামালপুর কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ২৩ জন ও ফেল ৫৮ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪ জন ও ফেল ৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ৩৪ ও অকৃতকার্য ৮২ জন।
আজমতপুর আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৮ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১৬ জন ও ফেল ৩৩ জন । জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ২৪ জন ও অকৃতকার্য ৩৯ জন।
কালীগঞ্জ মহিলা কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ১২ জন ও ফেল ১ জন, মানবিকে পাস ৩০ জন ও ফেল ২৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। মোট পাস ৪২ জন ও অকৃতকার্য ২৭ জন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন ঢালী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৫ জন ও ফেল ৬ জন, মানবিকে পাস ১ জন ও ফেল ১৪ জন। মোট পাস ৬ জন ও অকৃতকার্য ২০ জন।
সেন্ট মেরিস গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৭৮ জন ও ফেল ১৩ জন, মানবিকে পাস ৬৫ জন ও ফেল ২৩ জন, বিজ্ঞানে পাস ৪৭ জন ও ফেল ৯ জন । এখানে জিপিএ–৫ পেয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থী। মোট পাস ১৯০ জন ও অকৃতকার্য ৪৫ জন।
সেন্ট নিকোলাস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজনেস স্টাডিজে পাস ৩৩ জন ও ফেল ১৯ জন, মানবিকে পাস ৪ জন ও ফেল ৬ জন। মোট পাস ৩৭ জন ও অকৃতকার্য ২৫ জন।
সব হতাশার মধ্যেও জিপিএ–৫ পাওয়া ১৯ জন শিক্ষার্থী দেখিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সাফল্য অসম্ভব নয়। তবে এই ক্ষীণ সাফল্য কালীগঞ্জের সামগ্রিক শিক্ষা সংকট ঢাকতে পারছে না।
শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি, মানসম্মত ক্লাসের অভাব, পর্যাপ্ত একাডেমিক পরিবেশের সংকট এবং প্রশাসনিক তদারকির দুর্বলতা—এসবই এ ফলাফলের পেছনে প্রধান কারণ।
ঢাকা/রফিক/মেহেদী