তারা কখনও সরকারি কর্মকর্তা, কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী
Published: 4th, July 2025 GMT
ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ফোন করে হুমকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী ও গাজীপুরের গাছা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আব্দুল মান্নান দুলাল ওরফে জাহাঙ্গীর, নাসিম হাসান লাভলু ও ইলিয়াস শিকদার ওরফে বেলায়েত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের কখনও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাৎসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে কল করত। এরপর ভয় দেখিয়ে বা প্রলুব্ধ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিত। গোয়েন্দা তথ্যে বিষয়টি জানতে পেরে গত ১ জুলাই ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি দল মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল মান্নান দুলালকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও জানান, পরে তার দেওয়া তথ্যে পল্লবী এলাকা থেকে চক্রের সদস্য নাসিম হাসান লাভলু এবং গাজীপুরের গাছা এলাকা থেকে ইলিয়াস শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি ট্যাব, ৫২টি মোবাইল ফোন, ১৯০টি সিমকার্ড, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে আটটি সিল, ছবি ও নাম–ঠিকানাসহ ২০টি ডিরেক্টরি, পাঁচটি ভুয়া পরিচয়পত্র এবং নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজে তারা একাধিক সিমকার্ড ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। তাদের প্রতারণার শিকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অভয়াশ্রমেই নিধনযজ্ঞ মাছের প্রজননে ঝুঁকি
দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য উল্লাপাড়ার ঘাটিনা রেল সেতুর পাশে করতোয়া নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে অভয়াশ্রম। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে অভয়াশ্রম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরা হচ্ছে। এতে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঘাটিনা রেল সেতু ও সড়ক সেতুর মাঝে করতোয়া নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশে প্রতিবছর মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করে মৎস্য বিভাগ। এই অভয়াশ্রমেই বড়শি ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। শিকারিরা রাতে কৌশলে নদীতে বাঁশের খুঁটি পুঁতে জাল ফেলে রাখে। ভোরে সবার অলক্ষ্যে নৌকা নিয়ে খুঁটি থেকে জাল খুলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বের করে আবারও একইভাবে জাল পেতে রাখে। খুঁটিগুলো এমনভাবে পোতা হয় যাতে মাথা এবং পানির উপরিভাগের স্তর সমান হয়। এতে দূর থেকে জাল ফেলার বিষয়টি কেউ সহজে বুঝতে পারে না।
অবৈধ এ কাজে বড় লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল হালিম, খোদাবক্স প্রামাণিক, লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকারিয়া হোসেনসহ বেশ কয়েজন জড়িত বলে জানা গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আব্দুল হালিম ও খোদাবক্স প্রামাণিকের ভাষ্য, এক সময় তারা অভয়াশ্রমে অবৈধভাবে মাছ শিকার করতেন। মৎস্য দপ্তরের এক অভিযানে ধরা পড়ার পর তাদের জাল বড়শি কেড়ে নেওয়া হয়। মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এর পর আর সেখানে যাননা।
এ বিষয়ে কথা বলতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকারিয়া হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ পেয়ে মাঝেমধ্যে অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে মৎস্য বিভাগ অভিযান চালালেও তেমন কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবলের অভাবে অভয়াশ্রমে সার্বক্ষণিক নজরদারি সম্ভব নয়। এ সুযোগে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মাছ অবৈধভাবে শিকার করছে দুর্বৃত্তরা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে খোদ উপজেলা মৎস্য অফিস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবৈধ শিকারিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তারা অভয়াশ্রমে কখনও বড়শি আবার কখনও চায়না দুয়ারি জাল ফেলে রুই, কাতল, চিতল, ফলি, কালিবাউশ, বোয়াল, মিরকাসহ দেশি বড় আকারের মা মাছ ও ছোট মাছ শিকার করে। এতে অভয়াশ্রমে মাছের প্রজনন হুমকির মুখে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অভয়াশ্রম তৈরির উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, প্রতিবছর লক্ষাধিক টাকা খরচ করে অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়। যাতে দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে ডিম ছাড়তে পারে। কিন্তু অসাধু ও লোভী মৎস্য শিকারিরা বড়শি বা চায়না দুয়ারি জাল ফেলে মা মাছগুলো নিধন করছে। এতে দেশের মৎস্য প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরও জানান, তাঁর দপ্তরে লোকবল খুব কম। তারপরও প্রতিবছর করতোয়া নদীতে অন্তত ১৫ বার অভিযান চালানো হয়। অভয়াশ্রমে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য লোক নিয়োগ না করলে মাছ নিধন বন্ধ করা কঠিন।