গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে চারা বটগাছ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক অবরোধ করে ইপিজেডের বিপক্ষে বিক্ষোভ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোকজনসহ একটি পক্ষ। 
অন্যদিকে ইপিজেডের পক্ষে দুই ঘণ্টা উপজেলা সদরের চারমাথা এলাকায় ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এতে উভয় সড়কের তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইপিজেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। 
এর আগে সকালে উপজেলার কাটামোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এতে দুই শতাধিক সাঁওতাল, বাঙালি নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে চারা বটগাছ এলাকায় সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ শেষে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য দেন সাঁওতাল নেতা বার্নাবাস টুডু, রাফায়েল হাঁসদা, প্রিসিলা মুর্মু, ব্রিটিস সরেন, রিপন বেসরা, সুফল হেমব্রম, স্বপন শেখ, সাহেব মুর্মু, মইনুল মিয়া, আতাউর রহমান, সোবান মুর্মু, রসেন টুডু, আন্দ্রিয়াস মুর্মু প্রমুখ। 
বক্তারা বলেন, সরকার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা করার আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে বক্তব্য দেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এমএ মতিন মোল্লা, সংগঠক রফিকুল ইসলাম, মোকছেদ ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবু রায়হান, আসলাম মিয়া, সাঁওতাল নেতা মেখায়েল বেসরা প্রমুখ।
বক্তারা চিনিকলের জমিতে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ইপিজেড স্থাপন হলে দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে সাঁওতালরা অগ্রাধিকার পাবে। একটি মহল এর বিরোধিতা করছে। তারাই চিনিকলের জমি অবৈধভাবে দখল করে আছে। 
সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ দখলমুক্ত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন। এ পরিস্থিতিতে রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ ব ন দগঞ জ স হ বগঞ জ চ ন কল র এল ক য় অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেনে মাথার বদলে ব্যথা হয় পেটে, সমাধান কী

কী এই অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন

অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন একটি স্নায়বিক ব্যাধি। এটি সরাসরি পরিপাকতন্ত্রের কোনো রোগ নয়; বরং মাইগ্রেনেরই একটি রূপ। যখন স্নায়ুতন্ত্রের কিছু রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতার কারণে পেটের রক্তনালিগুলো অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হয়, তখন পেটে তীব্র ব্যথার পুনরাবৃত্তি হয়।

এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের পারিবারিক ইতিহাসে সাধারণ মাইগ্রেন বা এ ধরনের পেটের মাইগ্রেনের প্রবণতা থাকে। সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুনসব মাথাব্যথাই কি মাইগ্রেন, নাকি অন্য কিছু?১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২প্রধান উপসর্গ

অ্যাবডোমিনাল বা পেটের মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এটি বারবার ফিরে আসে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো—

তীব্র পেটে ব্যথা: ব্যথা সাধারণত পেটের মাঝামাঝি বা নাভির চারপাশের অংশে অনুভূত হয়। এটি মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ বন্ধ করে দিতে পারে। অনেকে এটাকে অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা ভেবে ভুল করেন।

বমি বমি ভাব ও বমি: ব্যথার সময় প্রায়ই বমি বমি ভাব বা বমি হয়।

ক্ষুধামান্দ্য: এই পর্বের সময় রোগীর খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়।

ফ্যাকাশে ভাব: আক্রমণের সময় ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে।

ক্লান্তি: ব্যথা কমে যাওয়ার পর রোগী খুব ক্লান্ত বা নিস্তেজ বোধ করেন।
কিছু ক্ষেত্রে আলো বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বা হ্যালুসিনেশনও দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুনমাইগ্রেন দূর করবে এই ১১টি ঘরোয়া উপায়২২ জুলাই ২০২৫চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত দুটি ধাপে করা হয়—

আক্রমণের সময় ব্যথা কমানো এবং

পুনরাবৃত্তি রোধ করা।

১. লক্ষণজনিত চিকিৎসা

ব্যথার তীব্রতা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ও বমিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো ট্রিপটানসের মতো মাইগ্রেনের বিশেষ ওষুধও কাজে আসে।

২. প্রতিরোধ

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এর আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন—

ট্রিগার এড়িয়ে চলা: চকলেট, পনির, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ক্যাফেইনের মতো খাদ্যবস্তু যদি ব্যথা বাড়ায়, তা চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যোগাসন বা মাইন্ডফুলনেসের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে আক্রমণের হার অনেকাংশে কমে।

যদি পেটে ব্যথা ঘন ঘন হয়, বমি ও পানিশূন্যতা দেখা যায় অথবা ব্যথা ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই দ্রুত একজন শিশুবিশেষজ্ঞ বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি শুধু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নয়; বরং একটি স্নায়বিক ব্যাধি, যা সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

আরও পড়ুনঅতিরিক্ত বিশ্রাম থেকে কি মাইগ্রেন হতে পারে১৪ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ