গাজীপুরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমায় আসা এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। 

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরারি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মৃত মুসল্লি মো. নুর আলম (৮০) নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডার চর গ্রামের সুলতান আহমাদের ছেলে। 

নুর আলম জোড় ইজতেমা মাঠে নোয়াখালী খিত্তায় অবস্থান করছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি মারা যান। সেখানে উপস্থিত সাথীরা তাকে প্রাথমিক সেবা দেওয়ার পর চিকিৎসাকেন্দ্রে নেন। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরারি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেছেন, আজ একজন মুসুল্লির মৃত্যু হয়েছে। জুমার নামাজের পরে তার জানাজা হয়। মরদেহ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ 

শুক্রবার ফজরের নামাজের পর গাজীপুরের টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরারি নেজামের আয়োজনে পাঁচ দিনের ইজতেমা। আগামী ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে এ ইজতেমার সমাপ্তি হবে।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইজত ম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বল্প আয়: কমছে নৈশপ্রহরীর পেশায় আগ্রহ, সংকটে নিরাপত্তা

শহুরে সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে, নিরাপত্তার চাহিদা ততই বাড়ছে। শহরের জনজীবনের নিরাপত্তা এক মৌলিক স্তম্ভ হলো নৈশপ্রহরী বা নাইট গার্ড। অথচ এই পেশা ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নগরজীবনের মূল কাঠামো থেকে। এর মূল কারণ হলো স্বল্প মজুরি। কম বেতন, অনিরাপদ কর্মঘণ্টা এবং সামগ্রিক অবহেলার কারণে নৈশপ্রহরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে।

অথচ এ পেশাই ছিল শহরের রাতের নিরাপত্তার অন্যতম ভরসা। নৈশপ্রহরী রাতের বেলা নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনো এলাকায়, ভবনে, পাড়ায় বা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। যখন পুরো শহর ঘুমিয়ে থাকে, তখন শুরু হয় তাঁর দায়িত্ব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নৈশপ্রহরীর কাজ হলো এলাকা বা ভবন টহল দেওয়া, শহরে বা এলাকায় চুরি, ডাকাতি কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা। এককথায়, তাঁদের রাতে শহরের যেকোনো ঝুঁকির প্রথম প্রতিরক্ষা সারি বলা যায়।

শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা যতই প্রযুক্তিনির্ভর হোক, নৈশপ্রহরীর অবদানের বিকল্প নেই। একটি ক্যামেরা ছবি তুলতে পারে কিন্তু আশঙ্কাজনক শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।

শহরের জনজীবনের এক স্বস্তির নিশ্বাস হলেন নৈশপ্রহরীরা। রাতের শান্তি বজায় রাখার মাধ্যমে নাগরিকের মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন হাজারো নির্ঘুম প্রহরী।

গবেষণা বলছে, দৃশ্যমান নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতি অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করে। শহরে রাতের বেলা চুরি ও ডাকাতি কমাতে নৈশপ্রহরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দ্রুত বাড়তে থাকা জনঘনত্বপূর্ণ এলাকা, বহুতল ভবন, গাড়ির সংখ্যা—এই সবকিছু মিলিয়ে রাতের শহরটি ঝুঁকিপূর্ণ। নৈশপ্রহরী সেখানে মানবিক নজরদারির অপরিহার্য এক উপাদান।

তাহলে কেন এই গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন মানুষ? ঢাকায় কোনো পরিবারের একজন উপার্জনকারীকে ২০-২৫ হাজার টাকার প্রাথমিক ব্যয় ধরতেই হয়। তা–ও কেবলই টিকে থাকতে, কোনো আরাম–আয়েশ ছাড়া। এদিকে নৈশপ্রহরীদের মাসিক বেতন অনেক এলাকায় মাত্র ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। যা জীবনযাত্রার মৌলিক ব্যয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পাশাপাশি এই পেশার নেই কোনো সামাজিক স্বীকৃতি। নৈশপ্রহরীর কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সমাজে তাঁদের জন্য থাকে না সম্মান, না প্রশংসা। অনেক সময় তাঁদের কাজকে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়, ফলে আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। এসব কারণেই দিন দিন নৈশপ্রহরীর পেশায় অনীহা দেখা দিচ্ছে।

তাহলে এর সমাধান কোথায়? নৈশপ্রহরী পেশাকে টেকসই ও সম্মানজনক করতে কী করা দরকার?

প্রথমত, ন্যায্য ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বেতন নির্ধারণ করা। শিগগিরই সরকার, সিটি করপোরেশন ও হাউজিং কমিটিগুলোকে যৌথভাবে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। ১৮-২০ হাজার টাকা না হলে একজন প্রহরী জীবন চালাতে পারেন না। বেতনকাঠামো অবশ্যই আইনি বাধ্যবাধকতার অধীনে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রহরীদের জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া সরকারিভাবে। তৃতীয়ত, আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টা নিশ্চিতকরণ। এ ছাড়া নিরাপত্তা প্রহরীকে কেয়ারটেকার বা কমিউনিটি সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে পরিচিত করা যেতে পারে। এতে সামাজিক মর্যাদার ফলে এ পেশায় কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।

পরিশেষে, রাতের অন্ধকারে শহরকে নিরাপদ রাখেন যেসব নৈশপ্রহরী, তাঁদের পেশাকে অবহেলার কারণে আমরা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি আমাদের সামাজিক জীবনের নিরাপত্তা। যাঁরা রাতের বেলা জীবনের অনিশ্চয়তাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে আমাদের ঘুম নিঃশব্দে রক্ষা করেন, তাঁদের যথার্থ সম্মান ও সঠিক পারিশ্রমিক নিশ্চিত করাই এখন জরুরি।

মায়িশা ফাহমিদা ইসলাম শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ