গাইবান্ধায় ইপিজেডের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
Published: 11th, July 2025 GMT
গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে চারা বটগাছ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক অবরোধ করে ইপিজেডের বিপক্ষে বিক্ষোভ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোকজনসহ একটি পক্ষ।
অন্যদিকে ইপিজেডের পক্ষে দুই ঘণ্টা উপজেলা সদরের চারমাথা এলাকায় ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এতে উভয় সড়কের তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইপিজেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এর আগে সকালে উপজেলার কাটামোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এতে দুই শতাধিক সাঁওতাল, বাঙালি নারী-পুরুষ অংশ নেন। পরে চারা বটগাছ এলাকায় সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ শেষে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য দেন সাঁওতাল নেতা বার্নাবাস টুডু, রাফায়েল হাঁসদা, প্রিসিলা মুর্মু, ব্রিটিস সরেন, রিপন বেসরা, সুফল হেমব্রম, স্বপন শেখ, সাহেব মুর্মু, মইনুল মিয়া, আতাউর রহমান, সোবান মুর্মু, রসেন টুডু, আন্দ্রিয়াস মুর্মু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সরকার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা করার আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে বক্তব্য দেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এমএ মতিন মোল্লা, সংগঠক রফিকুল ইসলাম, মোকছেদ ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবু রায়হান, আসলাম মিয়া, সাঁওতাল নেতা মেখায়েল বেসরা প্রমুখ।
বক্তারা চিনিকলের জমিতে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ইপিজেড স্থাপন হলে দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে সাঁওতালরা অগ্রাধিকার পাবে। একটি মহল এর বিরোধিতা করছে। তারাই চিনিকলের জমি অবৈধভাবে দখল করে আছে।
সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ দখলমুক্ত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হন। এ পরিস্থিতিতে রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ ব ন দগঞ জ স হ বগঞ জ চ ন কল র এল ক য় অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে অনেক শহীদের পরিবার চরম বিপাকে
‘আমার ভাই তারেক সমাজের বৈষম্য দূর করতে গিয়েছিলেন। আজ পরিবারের সদস্যরা বৈষম্যের শিকার। জুলাই ফাউন্ডেশন বা প্রশাসনের একজন লোকও সরাসরি এসে আমাদের কোনো খবর নেয়নি। তারা ঢাকায় বসে আর্থিক সহায়তার ভাগ করে দিল। মা ২০ ভাগ, আর বউ (তারেকের স্ত্রী) ৮০ ভাগ পাবে।
এই ভাগবাটোয়ারার কারণে তারেকের স্ত্রী সামিয়া তার সন্তান রাফিকে নিয়ে পিতার বাড়ি চলে গেছেন। আমাদের কষ্ট থাকত না যদি মায়ের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে সমাধান করে দেওয়া হতো। ধৈর্য ধরে আছি, যদি কেউ ফিরে তাকায়।’
আন্দোলনে গিয়ে গত ৫ আগস্ট বিয়ানীবাজার থানার সামনে গুলিতে নিহত তারেক আহমদের বড় বোন বিএ (সম্মান) উত্তীর্ণ তান্নি আক্তার এমন অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন। সাত সদস্যের পরিবারে তারেক ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। কম বয়সে বিয়ে করেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুারিতে মারা যান বাবা। তাঁর ওপর আরও চাপ বাড়ে। ছয় মাস পর তিনিও (তারেক) প্রাণ হারানোয় পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা।
শুধু তারেকের পরিবার নয়, গোলাপগঞ্জে শহীদ তাজউদ্দিন ও সিলেট সদরের ইনাতাবাদ গ্রামের ওয়াসিমের পরিবারসহ অনেক শহীদের পরিবার পড়েছে চরম বিপাকে। এ ছাড়া আর্থিক সহায়তার ভাগ নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। কোনো কোনো শহীদের পরিবারে বিভক্তি না দেখা দিলেও প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে আছে হতাশা। এর মধ্যে শহীদ চার কিশোর ও তরুণের পরিবার সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত। তারা এখনও কিছুই পাননি। স্বীকৃতি পাওয়া প্রধান প্রত্যাশা হলেও তা মেলেনি। কবে মিলবে, এর উত্তরও পাচ্ছেন না তারা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিলেট নগরীতে সাংবাদিক তুরাবসহ চারজন, জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ছয়জন, বিয়ানীবাজারে তিনজন ও গোয়াইনঘাটে তিনজন মারা যান। সিলেট জেলায় ১৬ জন ছাড়াও জুলাই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যান জেলার আরও তিনজন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় মারা যান সিলেট শহরতলির বাসিন্দা ওয়াসিম, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিয়ানীবাজারের চারখাই কাকুরা গ্রামের সুহেল আহমদ ও হবিগঞ্জ সদরে মারা যান সিলেটের টুকেরবাজারের গৌরীপুরের মোস্তাক আহমদ। তাদের স্বীকৃতি মিললেও সহায়তার ভাগ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। শহীদ পরিবারের অনেকেই ইতোমধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকার চেক ও সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি পর্যায়ে অনুদান পাচ্ছেন।
তবে জেলায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে চারজনের ভাগ্যে জোটেনি সহায়তা ও স্বীকৃতি। তারা হলেন– গোয়াইনঘাট সদরের ফেনাই কোনা গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সুমন মিয়া, পশ্চিম জাফলংয়ের ইসলামবাদ গ্রামের শ্রমিক নাহেদুল, পান্থুমাই গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমদ রাহিম ও নগরীর ঝালোপাড়ার নিখিল চন্দ্র করের ছেলে সিএনজি অটোরিকশাচালক পংকজ কুমার কর। তাদের মধ্যে পংকজের নাম তালিকায়ই আসেনি। অন্য তিনজন ৫ আগস্ট স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় মারা যাওয়ার কারণে আপত্তি তোলেন স্থানীয় প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধিরা। তাই তাদের স্বীকৃতি জোটেনি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সদস্য সচিব ও সেই সময়ের ছাত্র প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম জানান, মূলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে মতামত দেন। সেখানে তাদের আন্দোলনে নিহত বলে উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে মামলা চলছে।
সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব ১৯ জুলাই নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিএনপির সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তুরাবের মৃত্যুর আগের দিন ১৮ জুলাই শাবিপ্রবির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন মারা যান।
নগরীতে শহীদদের আরেকজন সিএনজি অটোরিকশাচালক পংকজ কুমার কর। ৫ আগস্ট কোতোয়ালি থানার সামনে গুলিতে মারা যান তিনি। পরদিন তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তাঁর নাম তালিকায়ই আসেনি। এ জন্য তাঁর পিতা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। একই দিন সিলেট সার্কিট হাউসের সামনে গুলিতে মারা যান পাবেল আহমদ কামরুল। তিনি গোলাপগঞ্জ ঢাকাদক্ষিণের কানিশাইল গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে। জুলাই আন্দোলনে ৪ আগস্ট সবচেয়ে তুমুল সংঘর্ষ হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। ওই দিন বিভিন্ন স্থানে গুলিতে মারা যান ছয়জন। তাদের একজন উপজেলার বারকোট গ্রামের মকবুল আলীর (প্রয়াত) ছেলে তাজউদ্দিন। সরকারি সহায়তার মধ্যে নিজের নামে ১০ লাখ টাকার প্রাইসবন্ড পেয়েছেন।
এ উপজেলার অন্য শহীদরা হলেন– ধারাবহর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, রায়গড় গ্রামের সুরাই মিয়ার ছেলে জয় আহমদ (হাসান), ঘোষগাঁওয়ের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন, পশ্চিম দত্তরাইল গ্রামে আলাউদ্দিনের ছেলে মিনহাজ আহমদ ও শিলঘাট লম্বাগাঁও গ্রামের কয়সর আহমদের ছেলে সানি আহমদ। মিনহাজের বড় ভাই আবুল কালাম অভিযোগ করেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় গোলাপগঞ্জে কোনো চত্বর বা সৌধ করা যায়নি।
বিয়ানীবাজারে ৫ আগস্ট তারেক ছাড়াও একই দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গুলিতে মারা যান নয়াগ্রামের ময়নুল ইসলাম ও ফারুক আহমদের ছেলে রায়হান উদ্দিন। সবজি বিক্রেতা নিহত ময়নুলের স্ত্রী শিরিন বেগম একটি ঘরের ব্যবস্থা ও সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সহায়তা চান।
রাজধানীর বাড্ডায় শহীদ হন সিলেট সদরের ইনাতাবাদ গ্রামের কনর মিয়ার ছেলে ওয়াসিম। জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রদত্ত ৫ লাখ টাকার অনুদান এখনও জোটেনি শহীদ ওয়াসিমের পরিবারে। এর আগে ভাগ নিয়ে বিভক্তি শুরু হয় ওয়াসিমের বড় বোন শীপা বেগমের সঙ্গে। পিতার একাধিক সংসার থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিপা জানান, তাঁর মা মারা যাওয়ার পর পিতা কনর মিয়া আর কোনো খবর নেননি তাদের।
আর্থিক সহায়তার ভাগ নিয়ে পরিবারে বিভক্তি প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ সমকালকে জানান, বিষয়টি জুলাই ফাউন্ডেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখছে। শহীদের পরিবারের যারা অসহায় তাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে আবেদন করতে বলেছি।
চারজনের স্বীকৃতি না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুরুর দিকে স্থানীয় তদন্ত ও ছাত্র প্রতিনিধিদের আপত্তির কারণে তাদের নাম তালিকায় ওঠেনি। এ নিয়ে আদালতে নিহতদের পরিবার ও বিজিবির মধ্যে মামলা চলছে। এটা নিষ্পত্তির পরে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।