তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব
Published: 11th, July 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তবে চাই, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যেন ত্রুটিমুক্ত হয়।’
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আইনসভার মাধ্যমে প্রস্তাব করা বা নিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত পাওয়া গেছে। এ মতামতের ভিত্তিতে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে আছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল চায়, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যেন ত্রুটিহীন হয়; ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যাতে বিতর্কের মধ্য না পড়ে।’
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অতীতে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে অনেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতিকে যুক্ত করতে চাইছে না। পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ইতোমধ্যে ফিরেছে। বিএনপি চায়, বিদ্যমান ব্যবস্থা চতুর্থ বিকল্প হিসেবে থাকুক।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড.
আর এনসিপি জানিয়েছে, সংসদের উচ্চকক্ষের ভোটের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল র য় জ প রস ত ব ব যবস থ ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আদেশে কী থাকবে, ভিত্তি কী হবে, ঠিক করছে কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ আদেশের ভিত্তি কী হবে, এই আদেশে কী থাকবে—এসব নির্ধারণে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি নিয়ে রোববার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।
তবে ওই আদেশে কী থাকবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে আদেশের একটি খসড়া শিগগির কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদে সই হলেও এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোটের সময় ও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে—এসব বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারিত না হওয়ায় সনদে সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া বামধারার চারটি দলও এখনো সনদে সই করেনি। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এই মাসের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, একটি বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করার পথে এগোচ্ছে কমিশন। এটিকে ভিত্তি ধরে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরির কাজ চলছে। কমিশন মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য শুরুতে একটি বিশেষ আদেশ লাগবে। এই আদেশে কী কী থাকবে এবং আদেশের ভিত্তি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। না হলে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্ট হবে না।
এই বিষয়ে রোববারের বৈঠকে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মূলত এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সে হিসেবে বিশেষ পরিস্থিতিতে গণ-অভ্যুত্থান বা জনগণের অভিপ্রায়ের মূলে অন্তর্বর্তী সরকার এই বিশেষ আদেশ জারি করতে পারে। সেটা আদেশের পটভূমিতে উল্লেখ করা যেতে পারে। আদেশের মধ্যে কী কী বিষয় থাকবে, তার আইনি ভাষা (টেক্সট) কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও কাজ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই আদেশ হবে গণভোটের ভিত্তি। আদেশে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকবে। কিন্তু গণভোট পরিচালনার জন্য আলাদা একটি আইন বা অধ্যাদেশ প্রয়োজন হবে কি না, তা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে। সনদ বাস্তবায়নে যে আদেশ জারি করা হবে তার নাম কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে এটি হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ।
এনসিপি দাবি করে আসছে, জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, তা সুসংহত করতে প্রধান উপদেষ্টা এই আদেশ জারি করবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে কিছু আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। আদেশের আধেয় এবং গণভোটের প্রশ্ন ঠিক করার পর আদেশটি কে জারি করবেন, তা নির্ধারণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের আদেশে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে কমিশনের দুটি চিন্তা আছে। একটি হলো পুরো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়া। আরেকটি হলো যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, শুধু সেগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট দেওয়া। কারণ, যেসব প্রস্তাবে মতভিন্নতা নেই, সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন সমস্যা হবে না। জটিলতা তৈরি হবে যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে।
এখন যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো যদি গণভোটে দেওয়া হয় আর কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সেটার পক্ষে মানুষ রায় দেয়; তাহলে এগুলো বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হবে। যদিও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মতবিরোধ আছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দিতে চায়। সেখানে সবকিছু সুনির্দিষ্ট ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে থাকবে। এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা চলছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও আলোচনা করেছে কমিশন। জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া, ইমরান সিদ্দিক ও তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ভার্চ্যুয়ালি সভায় অংশ নেন।
সভায় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।