রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার কোনো চেষ্টাই যেন কাজে আসছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নগদ সহায়তা এবং উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগের পরও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বরং রপ্তানি আয়ে গুটি কয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরতা যেন বাড়ছেই। মূলত আট পণ্যে আটকে আছে দেশের রপ্তানি খাত।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত বিশ্ব শুল্ক সংস্থার (ডব্লিউসিও) পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর হারমোনাইজড সিস্টেম বা এইচএস কোড অনুযায়ী রপ্তানির তালিকায় বাংলাদেশের মৌলিক পণ্যের সংখ্যা ৭৫১। ৬ কিংবা ৮ সংখ্যার এইচএস কোড অনুযায়ী পণ্যের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। এসব পণ্যের মধ্যে মাত্র আট পণ্য থেকে রপ্তানি আয় আসে প্রায় ৯২ শতাংশ। বাদবাকি ৯ হাজার ৯৯২ পণ্য থেকে আসে মাত্র ৮ শতাংশের মতো।
সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উপাত্ত বলছে, অর্থবছরটিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৪ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে আট পণ্যের অবদানই চার ৪১৬ কোটি ডলার। বাকি পণ্যের অবদান ৪১৩ কোটি ডলার। প্রধান আট পণ্য হচ্ছে– তৈরি পোশাকের নিট বা গেঞ্জি জাতীয় পণ্য, ওভেন বা শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ এবং প্রকৌশল পণ্য ।
প্রথম অবস্থানে নিট পোশাক
রপ্তানি খাতে নিট পোশাকের অবস্থান প্রথম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট রপ্তানিতে নিট পোশাকের অবদান ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ২ হাজার ১১৬ কোটি ডলারের মতো, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় আসে ১ হাজার ৯২৮ কোটি ডলার।
ওভেনের অবস্থান দ্বিতীয়
মোট রপ্তানিতে পোশাক খাতের ওভেনের অবদান নিটের তুলনায় কিছুটা কম ৩৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৮১৯ কোটি ডলারের মতো। এ আয় গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর ওভেন থেকে রপ্তানি আয় আসে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
রপ্তানি আয়ের দিক থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকার অবস্থান তৃতীয়। মোট রপ্তানিতে এ পণ্যের অবদান এখন ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছর এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছর যা ছিল ১০৪ কোটি ডলারের কিছু কম।
কৃষিজাত পণ্যের অবস্থান চতুর্থ
মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের হিস্যা ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি, ফলমূল ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিঙ্ক, চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। গত অর্থবছর এ খাতের রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর এ পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ডলার।
হোম টেক্সটাইল
পোশাক খাতের সমজাতীয় পণ্য হোমটেক্স বা হোম টেক্সটাইল। রপ্তানি খাতে হোম টেক্সটাইলের অবস্থান তৃতীয়। সরাসরি পোশাকের অংশ না হলেও গৃহসজ্জার বিভিন্ন সামগ্রী, যেমন– বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা, কার্পেট, টেবিল ক্লথ, কুশন, টাওয়েল ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। রপ্তানি খাতে এ হোম টেক্সটাইলের অবদান ২ শতাংশের মতো। গত অর্থবছর এ খাতের রপ্তানি বেড়েছে আড়াই শতাংশের মতো। রপ্তানি হয় ৮৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন হোম টেক্সটাইল পণ্য। আগের অর্থবছর এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি। অবশ্য অতিমারি করোনাকালে হোম কোয়ারেনটাইনের কারণে বিশ্বব্যাপী ২০২০-২১ অর্থবছর হোম টেক্সাইল পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। ওই অর্থবছর প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়ায় হোম টেক্সটাইল খাত। মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ডলার। পরের অর্থবছর প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের এ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এতে রপ্তানি আয়ের হিসাবে তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্যের মর্যাদা পায় হোম টেক্সটাইল পণ্য। এ সুবাদে দেশের মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান এখন ৩ শতাংশের বেশি। তবে দেশে গ্যাসের সংকটে হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি আবার কমতে থাকে।
পাটের অবস্থান ষষ্ঠ
একসময় রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য ছিল পাট ও পাটপণ্য। মোট রপ্তানির ৯৭ শতাংশই আসত খাতটি থেকে। সেই সূত্রে স্বর্ণসূত্র বা সোনালি আঁশ বলা হতো পাটকে। ক্রমেই খাতটি রপ্তানিতে গৌরব হারায়। সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের বিবেচনায় পাট ও পাটপণ্যের হিস্যা কমে মাত্র ১ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসে। রপ্তানি হয় ৮২ কোটি ডলারের পাটপণ্য, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ডলারের মতো।
প্রকৌশল পণ্য
প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি খাতে খুব বেশি দিনের নয়। তবে ইতোমধ্যে খাতটি সম্ভাবনা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৯ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ বর্তমানে যেসব প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি করছে, তার মধ্যে আছে আয়রন-স্টিল, তামার তার, স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সামগ্রী, প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক পণ্য, বাইসাইকেল এবং অন্যান্য পণ্য।
অষ্টম অবস্থানে মাছ
রপ্তানি খাতে একসময় হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের প্রাধান্য ছিল। রপ্তানি তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রূপালি সোনাখ্যাত খাতটি। তবে বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স শর্ত পরিপালন ইস্যুতে খাতটি পিছিয়ে পড়ে। গত অর্থবছর এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পরিমাণে রপ্তানি দাঁড়ায় ৪৪ কোটি ডলারে। মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান এখন ১ শতাংশেরও কম।
নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রপ্তানি পণ্যে কেন বৈচিত্র্য আসছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
দেশে রপ্তানি সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবায় কী ধরনের দুর্বলতা আছে, তা জানার চেষ্টা করছে ইপিবি। ইপিবির একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জরিপের ভিত্তিতে রপ্তানি সংক্রান্ত দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে ইপিবির পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল সমকালকে বলেন, জরিপের সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রপ্তানি সংক্রান্ত নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। বিশেষ করে পণ্য উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার মতো সামর্থ্য নেই– এমন ক্ষুদ্র এবং অদক্ষ উদ্যোক্তাও খুব সহজে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন। ফলে রপ্তানি ঝুড়িতে অনেক পণ্য যুক্ত হবে। বৈচিত্র্য আসবে রপ্তানি খাতে। রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোনো কোনো পণ্যে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইপিবির এক জেলা এক পণ্য, বিশেষ পণ্য উন্নয়ন, বিদেশে মেলা-প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াসহ বেশ কিছু উদ্যোগ আছে।
আট পণ্য সীমিত থাকলেও রপ্তানি তালিকায় সম্ভাবনাময় পণ্য অনেক। অনেক দিন ধরে এসব পণ্যের সম্ভাবনার কথা শোনা যায়। আশার কথা হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। সর্বশেষ গত অর্থবছর আগের অর্থবছরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে কাগজ ও কাগজ পণ্য, ইলেকট্রিক পণ্য, জাহাজ, চা, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, হ্যান্ডিক্রাফটস, রাবার, গলফ সাফট, তামাক, কার্পেট, বাইসাইকেল, নিট ফেব্রিকস, ক্যাপ, সিরামিক প্রডাক্টস, জুট সকস অ্যান্ড ব্যাগ, ক্র্যাবস, ওষুধ, কেমিক্যাল প্রডাক্টস, উইগস ও মানুষের চুল, কপার ওয়্যার, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস ইত্যাদি। অন্যদিকে সম্ভাবনা কাজে লাগছে না এ রকম পণ্যের সংখ্যাও কম নয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছর রপ্তানি কমেছে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে সিমেন্ট, শাকসবজি, প্রকৌশলী যন্ত্রাংশ, চামড়া, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন, চামড়াজাত পণ্য, শুকনো খাবার, কাঁচা পাট, টেরি টাওয়েলস, ফার্নিচার, গুঁড়া মসলা ইত্যাদি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ম ণ ছ ল র অবস থ ন প রক র য় র অবদ ন প টপণ য র র মত ধরন র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক
ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের(তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। কলেজের গণিত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।
কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।
ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়
কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।
২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।
বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।
শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে