যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছে, তাদেরকে কেনার সাধ্য কোনো দলের নেই:
Published: 12th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা দেশের সংস্কার চেয়েছি, বিচার চেয়েছি, নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু, এসব জনদাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। তারা পুরাতন বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা পুরাতন রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রাখতে চায়। এত মানুষের জীবন যাওয়ার পরে তারা যদি মনে করে, তারা পুরাতন রাজনীতি করবে, তাহলে এত সহজ হবে না। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো মাঠে আছে।”
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের আসিফ চত্বরে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “তারা ভেবেছিল— দুই-তিনটি আসন দেখিয়ে, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার লোভ দেখিয়ে তারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু, যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে, তাদেরকে কেনার সাধ্য বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “৫ আগস্ট আমরা বলেছিলাম, আসুন জাতীয় সরকার গঠন করি। দেশটাকে পুনর্গঠন করি। সকল বিভাজন দূর করে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলি। তারা আমাদের সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি। তারা বলেছিল, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আবার বলেছে, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা ছাড়া দেশ সংস্কারের কোনো বিষয়ে তাদের সমর্থন পাওয়া যায়নি। আমরা বলেছিলাম, আমরা দেশের ভিতরে শত্রু তৈরি করতে চাই না। আমরা দেশ পুনর্গঠন করতে চাই।”
এনসিপির সাতক্ষীরা জেলার সমম্বয়ক কামরুজ্জামান বুলুর সভাপতিত্বে পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন—সংগঠনটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল প্রমুখ।
পথসভার আগে শহীদ আসিফ চত্বর এলাকায় গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এনসিপির নেতারা। পরে একটি পদযাত্রা শহীদ আসিফ চত্বর থেকে বের হয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এর পর নিউমার্কেট এলাকায় আল বারাকা হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এনসিপির জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ঢাকা/শাহীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঝিনাইদহে এনসিপির পথসভায় নেতারা বললেন, হাসিনার বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়
জুলাই আন্দোলনে খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানা হবে না বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে আয়োজিত এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে তাঁরা এ কথা বলেন।
দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’
বক্তব্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চায়, খুন করা তাদের নেশা। বিএসএফ মানবতাবিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। আমরা ভারত সরকারকে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মর্যাদাশীল আচরণ করুন।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৫ আগস্টের পর থেকে দেখছি একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তারা সংস্কার চায় না। আমরা বিচার এবং সংস্কার করে নির্বাচন চাই। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। একটি দল বলছে সংস্কার ও বিচার নির্বাচিত হয়ে এসে করবে, এমন ধোঁকাবাজি অনেক হয়েছে। আপনারা নির্বাচিত হয়ে সংস্কার ও বিচার করবেন এর নিশ্চয়তা কীভাবে পাব। সংস্কার দ্রুত করুন, তা না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে। পুলিশ ভাইয়েরা, জুলাই আন্দোলনে দায় আপনাদেরও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সব পুলিশ কিন্তু খারাপ না। আপনার ভাই আমার ভাই পুলিশে চাকরি করে। যাঁরা আওয়ামী লীগের পুলিশ ছিলেন, যাঁরা ছাত্র–জনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদেরও জুলাই হত্যার দায় নিতে হবে।’
এ সময় ঝিনাইদহের সন্তান এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজাকে আসছে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাঁকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আপনাদের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। আপনারা এনসিপির সঙ্গে থাকেন। এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সব সময় জনগণের পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই, শহীদের বাবা–মার পাশে দাঁড়াই, তখন আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘২৪–এ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য সব ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে এমন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে ধর্মের নামে কোনো হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।’
সভায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবাও বক্তব্য দেন।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। তবে দীর্ঘ সময় পার হলে হত্যার বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। জুলাই সনদ তৈরি হয়নি। আমরা সংস্কার চাই, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই।’
পদযাত্রা ও পথসভায় আরও অংশ নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধিদলটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে আসে। সেখানে তাঁরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রার এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এসসিপির নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। পদযাত্রা নিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে সমাবেশস্থলে আসেন। মাগরিবের নামাজের পর পথসভার মঞ্চে আসেন নেতারা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।