গণপরিষদ নির্বাচন করে সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি এনসিপির
Published: 14th, July 2025 GMT
গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন এবং নতুন করে সংবিধান লেখার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১২তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।
আজকের বৈঠকে জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ও জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় রাজনৈতিক দলগুলো।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘আমরা তো বলেছি, আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন চাই, নতুন করে সংবিধান লিখতে চাই। তো সে ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের ছয়টি অপশন দেওয়া আছে। কীভাবে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে, সেই বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করব। তখন আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আলোচনায় সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে জরুরি অবস্থা জারির প্রক্রিয়ায় তিনটি পর্যায় প্রস্তাব করে এনসিপি—যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিবর্তে সার্বভৌমত্ব বা ভৌগোলিক অখণ্ডতার হুমকি। এই কাঠামোতে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ভিত্তিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে। এনসিপি এ প্রক্রিয়ায় একমত হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময় বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি ও মতামতের গুরুত্ব তুলে ধরে রাসিন বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা মন্ত্রিসভার বৈঠকে মতামত দিতে পারবেন, একমত না হলে সেটি সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। এটাই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার দ্বার খুলে দেয়।’
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়েও এনসিপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রাসিন বলেন, ‘আমরা চাই আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। যদিও কমিশনের আলোচনায় একজন নয়, দুজন প্রবীণতমের মধ্য থেকে বাছাই করার মতো মত এসেছে।’ তিনি জানান, যদি কোনো দল ইশতেহারে ভিন্ন অবস্থান নেয় এবং নির্বাচনে জয়ী হয়, তবে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তারা সেই বিধান যুক্ত করতে পারবে।
রাসিন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে। আলোচনা এখন একটি ভালো দিকে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগির একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক কাঠামোতে পৌঁছানো যাবে।’
আজকের আলোচনায় এনসিপি ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সকলের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।
৮ খণ্ডের এই প্রতিবেদনে কমিশনের সুপারিশ, জুলাই জাতীয় সনদ ছাড়াও ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ার সময় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেওয়া মতামত, দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার সারসংক্ষেপ, কমিশনের অন্যান্য নথিপত্র এবং কমিশনের করা জনমত জরিপের ফলাফল রয়েছে।
আরো পড়ুন:
নির্বাচনে পুলিশকে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করে ড. ইউনূস ভালো কাজ করছেন: জরিপ
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য পোস্ট করা হয়।
সেখানে বলা হয়, প্রতিবেদনের সব খণ্ড https://reform.gov.bd ঠিকানার ওয়েবপেইজে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন ছাড়াও এর আগে ও পরে গঠিত মোট ১১টি সংস্কার কমিশনের সব প্রতিবেদনও এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের অক্টোবর মাসে এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমের সমাপ্তিলগ্নে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অন্য পাঁচটি কমিশনের প্রধানদেরকে এই কমিশনের সদস্য হিসেবে রাখা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের অপারগতার কারণে দুই কমিশনের দুজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে বিভিন্ন ধাপের ধারাবাহিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। এরপর গত ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়। ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে সরকার জুলাই ‘জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ জারি করেছে।
ঢাকা/রাসেল